More

Social Media

Light
Dark

পরের মাঠেও ভারতের বানিজ্য বসতি

ক্রিকেট খেলায় মাঠের দাপটের পাশাপাশি বাইরে ভারত এখন উপরের দলগুলো একটি। সেখানে প্রভাব-প্রতিপত্তির বিষয়টি থাকে সর্বাগ্রে। ভারত সবসময়ই মাঠ ও মাঠের বাইরে ’জয়’ শব্দটিকে আগলে রাখতে চায়। পাশাপাশি ব্যবসায়িক দিক থেকেও সবাইকে পেছনে ফেলাটাও একটা বড় লক্ষ্য থাকে।

সেই লক্ষ্য পূরণে যে ক্রিকেটে দেশটি সফল সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই যেমন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বাগতিক হয়েও হতে পারলনা। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে এবারের আসরটি অনুষ্ঠিত হলেও সেখানেও রয়েছে ভারতের প্রচ্ছন্ন প্রভাব। সেটি অর্থের সংখ্যায় ১০০ কোটিরও বেশি।

বিশ্বকাপের মতো আসর ‘পরের মাঠে’ আয়োজন করেও ভারতের এই আয় অনেকের চোঁখকে কপালে উঠিয়ে দিতে যথেষ্ট। যারা ভারতকে চেনেন তারা জানেন, ক্রিকেট জাতি হিসেবে তারা এমনই। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত হলেও স্বাগতিক দেশ হিসেবে আছে ভারতই।

ads

বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রায় ১০৩ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা ছিল বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই)। এর মধ্যে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডকে ৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এই বোর্ডের অধীনে থাকা মাঠগুলোতে মোট ম্যাচ আয়োজন হবে ৩৯টি।

চুড়ান্তপর্বেল আগে বাছাইয়ের প্রাথমিক পর্বের ছয় ম্যাচ আয়োজনের জন্য ওমান ক্রিকেট বোর্ড পাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। অ্যাপেক্স কাউন্সিলের কাছে পাঠানো বিসিসিআইয়ের এক ই-মেইলে এসকল তথ্য জানা গেছে। সবমিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে।

টাকার অঙ্কে যা ২০০ কোটি টাকারও কিছুটা বেশি। তবে এই খরচ অস্ট্রেলিয়ায় টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের চেয়ে কম। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হওয়ার কথা ছিল টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের আসর। কিন্তু করোনার কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর স্বাগতিক হওয়ার দায়িত্ব নেয় বিসিসিআই।

শুরুতে নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করার কথা থাকলেও ভারতের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রা সংস্থা-আইসিসি ও বিসিসিআই। অর্থনৈতিক হিসাব দেওয়া ওই ই-মেইলে বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ লিখেছেন, ‘বিসিসিআই স্বাগতিক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আইসিসির সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা করা হয়েছে। অনেক কিছু ভাবার খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার স্বার্থে ও সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের জন্য আমিরাত ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) পাবে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশ মুদ্রায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা)। অন্যদিকে মাসকটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ৬টি ম্যাচ আয়োজন করে ৪ লাখ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা) আয় করবে ওমান ক্রিকেট (ওসি)। বিসিসিআই টুর্নামেন্টের টিকিট বিক্রির স্বত্ব আবার দিয়েছে ইসিবি এবং ওসির হাতে।

৩৩ দিনের এই টুর্নামেন্ট থেকে বড় অঙ্কের লাভের আশা তাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে শুধু আয়োজন বাবদ আয় ছাড়াও বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য চুক্তি থেকে আয় হবে আরও অনেক বেশি অর্থ। বিসিসিআই তাদের বিশ্বকাপ আয়োজনের খরচ (১৩.৫০ মিলিয়ন ডলার) থেকে দেড় মিলিয়ন ডলার ইসিবিকে দেবার পাশাপাশি আয়োজনের খরচ বাবদ সাড়ে ৫ মিলিয়ন ডলার দেবে যা আইসিসি খরচ করবে। সবমিলিয়ে তাদের দিতে হবে ৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ।

যখন বিশ্বকাপে অর্থ আয় নিয়ে নানা সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, তখন সর্বশেষ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিয়ে চলছে আলোচনা। গেল আসর  নয়, আলোচনায় এখন নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে আগামী বছরের আসর নিয়ে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এ আসরের সম্প্রচার থেকেই ৩৬ হাজার কোটি টাকা আয় হতে যাচ্ছে বিসিসিআইয়ের! ক্রিকেট বাণিজ্যে ভারতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।

আইপিএল আয়োজন করেই কাড়িকাড়ি অর্থ কামাচ্ছে ভারত। এবার আরো বড় পরিসরে আইপিএল আয়োজনের ভাবনা চিন্তা রয়েছে বিসিসিআইয়ের। আটটি দলের পরিবর্তে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে ১০ দলের। আগামী মৌসুম থেকে আইপিএল নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছে সৌরভ গাঙ্গুলির বোর্ড। সঙ্গে আবার ৫ বছরের জন্য টেলিভিশন সত্ত¡ বিক্রি করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিসিসিআই।

স্টার ইন্ডিয়ার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগামী ২০২৩-২০২৭, এই পাঁচ বছরের জন্য টেলিভিশন সত্ত্ব বিক্রির পরিকিল্পনা করে রেখেছে বিসিসিআই। যেখানে এরই মধ্যে আইপিএলে সম্প্রচার সত্ত্ব কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে আইপিএলের সম্প্রচার সত্ত্বের মূল্য আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। এর আনুমানিক দর ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি রুপি।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সম্প্রচারকারী সংস্থা আইপিএলের স¤প্রচার সত্ত¡ কিনতে আগ্রহী হয়েছে। ১০ দলের খেলা হলে আগামী আসরে মোট ম্যাচের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৪টি। সেক্ষেত্রে গোটা টুর্নামেন্টের ভ্যালুয়েশন আরও বেড়ে যাবে।

পাশাপাশি দুটো নতুন দল সাত হাজার থেকে দশ হাজার কোটি রুপি দিয়ে আসরে যোগদান করবে। এতে সম্প্রচার সত্ত্বের মূল্য অনেকটাই আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। তাই আইপিএলের ব্রডকাস্টিং রাইটসের ভ্যালু ৫ বিলিয়ন হতে পারে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি)!

২০০৮-২০১৭ সালের জন্য আইপিএলের সম্প্রচার সত্ত্ব কিনেছিল সনি নেটওয়ার্ক। তবে শেষবারের নিলামে বাজিমাত করা স্টার ইন্ডিয়ার সঙ্গে পেরে উঠেনি এই প্রতিষ্ঠানটি। ১১,০৫০ কোটি রুপিতে (১.৪৭ বিলিয়ন) টিভি সম্প্রচারের সম্প্রচারের কোর পরিকল্পনা ছিল সনি’র। স্টার আরও ৫৩ হাজার কোটি বেশিতে বিড জমা দিলে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

২০১৮-২০২২ এই পাঁচ বছরের সম্প্রচারের সত্ত্বেও জন্য ২.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ১৬,৩৪৭.৫০ কোটি খরচ করে স্টার ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠান। সেখানে শুধুই অর্থের ঝনঝনানি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ কিংবা আইপিএলের মতো আসর থেকে বছরে হাজার কোটি টাকারও বেশি আয় করছে বিসিসিআই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link