More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

সিনিয়রিটি নয়, কোয়ালিটি ও ইনটেন্টের ঘাটতি

সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নুরুল সোহান, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান-সহ বাংলাদেশের বেশির ভাগ তরুণ ক্রিকেটারের কোয়ালিটিতে ব্যাপক ঘাটতি আছে। এই যে  কালকে সৌম্য সরকার যেভাবে আউট হলেন এটা বিপক্ষ দলের বুদ্ধিদীপ্ত ক্যাপ্টেন্সি যেমন ছিলো তেমনিভাবে সৌম্য সরকারের ক্রিকেটীয় কোয়ালিটিরও ঘাটতি ছিলো।

তবে এদের কোয়ালিটি যতই ঘাটতি থাকুক, এদের মধ্যে ইনটেন্ট আছে। এরা সবসময়ই চেষ্টা করে রান করতে।  এই দিকে যারা সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন তাদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার না আছে কোয়ালিটি, না আছে কোনও ইনটেনশন।

তাদের কোয়ালিটি নাই সেটা পরিসংখ্যানে দৃশ্যমান। সেটা তাদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অর্জনে দৃশ্যমান। শুধু সিনিয়র না, সিনিয়র বাদেও খুব কম ক্রিকেটার বাংলাদেশে আছেন যাদের কোয়ালিটিফুল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার বলা যায়।

ads

সাকিব, মুশফিক, রিয়াদরা তো কোয়ালিটিলেসই সাথে সাথে তাদের কোনও ইনটেন্টও থাকে না কখনোও। মাঝে মাঝে ঝড়ে বক মারার মতো  ২-৪ টা ফিনিশিং করা ছাড়া এদের ক্যারিয়ারে কিছুই নাই।এদের আন্তজার্তিক ক্রিকেটে যখন হাতে খড়ি হয় তখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট চালু হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন অ্যাডাল্ট হয়ে গেলেও এরা এখনও ইমম্যাচুরড রয়ে গেছেন। এরা যখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জার্সিতে ২২ গজের পিচে ব্যাট করেন তখন এক একজনকে ‘লাইফলেস ক্যারেক্টার’ মনে হয়৷

এরা কি জাতীয় দলে আদৌ টিম হিসাবে খেলতে নামেন? নাকি শুধু নিজেদের গ্লোরিফাই করতে মাঠে নামেন?  ৮৬ বল খেলে ৮১ রান করতেছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রান তাড়া করতে নেমে! এমন খেলার চেয়ে ইনটেন্ট শো করে রান তেড়ে করতে নেমে অলআউট হওয়াটাও ভালো। এই যুগের খেলোয়াড় দরকার নাই। ২০০০ সালের দিকে হাফিজ- মালিকরেও এতগুলো বল খেলতে দিলেও দলকে ম্যাচ জেতানোর মতো জায়গায় রেখে আসবে।

সৌম্য-লিটনদের কোয়ালিটি, কনসিটেন্সিতে প্রচুর ঘাটতি থাকার পরও তাদের ভিশন ক্লিয়ার। তারা চেষ্টা করেন সবসয়মই রান করতে। আফিফ সোহানদের একই অবস্থা। তাদের গড় বাড়ানো, স্ট্যাট রঙিন করা, এই দেশের দর্শক সমাজের কাছে হিরো হতে চান না।

সোহানকে নিয়ে কথা বললে ক্রিক পরিসংখ্যানবিদরা মুখস্ত স্ট্যাট ঝাড়বেন। তাঁর গড় ১৩, স্ট্রাইক রেট, শেষ  ৫ ম্যাচে এটা সেটা করছেন। অথচ কাল সোহান কি করছেন?  ক্রিজে এসে ডাবল দিয়ে শুরু করলেন তারপরের বলে ছয় মারতে গিয়ে আউট হলেন। এই হওয়াটা হইতেছে তার কোয়ালিটির অভাব,  এটা হইতেছে হেটমায়ার কিংবা ঋষাভ পান্তদের সাথে সোহানের পার্থক্য।

আর এই যে নিজের ব্যক্তিগত ফর্মের কথা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় বলেই চেষ্টা করে এটা হইতেছে তার সাথে রিয়াদের ইনটেন্টের পার্থক্য। এই দেশে দর্শক সহ সবাই ২৫-৩০ রানরে যে কোনও ফর্মেটেই খুব বড় করে দেখা হয়। এইটারে পাস মার্ক ধরা হয়।

এইরকম রান করলে আপনি দল থেকে বাদ যাবেন না। দর্শকদের রোষানলেও পড়বেন না। কারন ২০-৩০ বল খেলে কিংবা কয়টা লাইফ পেয়ে অথবা পুরো ইনিংস জুড়ে স্ট্রাগল করেও এই রানটা করলেও এইগুলোর চেয়েও দর্শকদের কাছে বড় ইস্যু এরা তো ২০ করছে অন্যরা ১০ ও করতে পারে নি।

এইসব ২০-২৫ রানের কন্ট্রিবিউশনের ইনিংসের ম্যাচে যে আসলে কোনও ইমপ্যাক্ট এটা বোঝানো সম্ভব না। সিংহভাগ দর্শক ইমপ্যাক্ট আর কন্ট্রিবিউশের তফাৎ বোঝে না।  কালকে আফিফের ১৮ রানের ইনিংসটা ছিল ইমপ্যাক্ট। আর তার চেয়ে বেশি রান করা সাকিবের ২০, রিয়াদের ২২ কিংবা মুশফিকের ৩৮ রান ছিল স্রেফ কন্ট্রিবিউশন অন আ ব্যাড ওয়ে!

সাকিব এইরম কনসিসটেন্ট রান প্রায়ই করেন। কিন্তু কমই সেই ইনিংসগুলো ইমপ্যাক্ট তৈরী করতে পারে। অলরাউন্ডার হিসাবে সাকিবের ইমপ্যাক্ট কম টি-টোয়েন্টিতে এটা বললে অনেকের গা জ্বলে উঠে আবার।

ফ্রানচাইজি ক্রিকেটে যারে ৭/৮ ফেলায় রাখার উপযুক্ত মনে করে না। তারে আমরা আদর সোহাগ দিয়ে ভাইটাল তিনে খেলাচ্ছি টি-টোয়েন্টিতে। সাকিব টি-টোয়েন্টিতে সেরা সময় পার করে আসছেন। তাকে যখন তিনে ব্যবহার করা যেতো ১২-১৫ এর মধ্যে তখন এই ম্যানেজমেন্ট ব্যবহার করেনি। তখন তারে আফিফের মতো নিচে নামাইতো। কিন্তু ঐসময় সাকিবের রিফ্লেক্স ভালো ছিল। এখন যেটা নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যান কাটায় ফেরার পর সেটা আরও বেশি ভয়াবহ হইছে।  ছয় হাকাতে সাকিব কয়বার আউট হলো ব্যান কাটিয়ে ফেরার পর?  তারপরও তিনি সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, সাকিব এরা সবাই চেষ্টা করেন দর্শকদের মন ভেজানোর জন্য ২০-২২ রানে আগে করে নিতে। তারপর তারা চেষ্টা করেন।  এই যে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তার ৭৫% ভালো ইনিংসের প্যাটার্ন একই।  তিনি ২০ বল নিয়ে সেট হবেন, প্রচুর স্ট্রাগল করবেন।

অত:পর ২০ বল পর সেফ স্কোরে পা দেয়ার পর তিনি এক্সারেট করবেন। ইনিংসের শেষ দিকে বোলার দের মনোযোগ নষ্ট হয়, বলও নতুন থাকে না, ডেথ ওভারের প্রেশার সব মিলায়ে বোলার শেষে লুস ডেলিভার হয়।  এই সুযোগটা কাজে লাগানো দোষের কিছু না। কিন্তু এর আগে যেভাবে ব্যাট করেন সেটা কতটুকু কাজের হয়?

কাল ২০ বলে ছিল ১৭ রান, ছক্কা মারলেন ২১ বলে ২৩ এবং পরের বলে আউট। রিয়াদের প্যাটার্ন রোজ কাজ করে না। কাল যেমন কাজই করে নি। তবে কাজ করলে আরও কিছু বলে আরও কিছু বাউন্ডারি পেতেন দিন শেষে ২৭/২৮ বলে ৩৭/৩৮ রান উঠতো।

দর্শক যারা স্ট্যাট স্কোর কার্ড দেখে খেলোয়াড় মূল্যায়ম করেন তাদের কাছে এটা হয়ে ভালো ইনিংস। কিন্তু রিয়াদ যে ১২ ওভারে উইকেটে এসে সাড়ে আট রান তোলা লাগবে এমন সময় যেভাবে ডট খেলেন, স্ট্রাগল এইগুলো নিয়ে কথাই বলবে না। এন্ডিং স্কোর ভালো থাকলে আমরা খুশি। কিন্তু বিল্ডিং প্রসেস জঘন্য সেটা নিয়ে আমরা বলি না কথা।

রিয়াদের ৩০-৩৫ রানের ইনিংসর পর বহুবার বলছি এই ইনিংস গুলো ভালো না। তিনি রোজ একই জিনিস করতে পারবেন। নিজের ইনিংসের শেষ ১০-১২ বলে ১৮/২০ রান তোলা রোজ সম্ভব না। কাল যেটা করতে পারেন নি৷ এই জন্য শুরু থেকে রোটেট করে খেলতে হয়।

সাকিব, মুশফিক রিয়াদ সবাই দর্শকদের কাছে ভালো লোক হয়ে থাকতে চান। তাদের তাই ইনটেন্ট শো করেন পরে,  আগে চেষ্টা করেন সৌম্য লিটনের স্কোর ডাবল রানটা করে ফেলার। সেফ ক্রিকেট আরকি।

সৌম্য লিটনের তো কোয়ালিটি স্কিলে ঘাটতি আছে৷ তাও তারা কখনো চেষ্টা করেন না রিয়াদ মুশফিকের প্যাটার্নে হিরো হওয়ার। তারা প্রথম বল থেকে রান করার চেষ্টা করেন। শট খেলেন। তারা থোরাই কেয়ার করেন দর্শকের গালি! কাল লিটন সৌম্য প্রত্যেকটা বল মারা না হলে স্ট্রাইক রোটেট করার চেষ্টা করছেন।

সোহান জানে তার দলে জায়গা সিওর না। ব্যাটে রান নাই , যে কোনও দিন বাদ পড়তে পারেন৷ তারপরও তৃতীয় বলে ছয় মারার চেষ্টা করছেন, এটা হইতেছে তাদের ইনটেন্ট। আর এরা টিকে থাকবেন কিভাবে? মুশফিক তার ফর্ম নাই দেখে উইকেটে সেট হওয়ার মিশনে নামছিলেন।  পাওয়ার প্লে তে তিনি টেস্ট ক্রিকেটের মতো ব্লক করতেছেন।

আফিফরে নিয়ে বহু আগের লেখাতে বলছি তারে ১০ ওভারের মধ্যে ক্রিজে পাঠান। ইনিংসের ৭-১৫ মিডিল ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ রোটেটের জন্য। কাল আফিফ ১২ টা বল ১ টা ডট ছিলো। বাকি প্রত্যেক বলে তিনি রান করার চেষ্টা করেছেন। যেই বলে বাউন্ডারি পারবেন না সেখানে তিনি রোটেট করছেন।

এই কাজটা রিয়াদ সাকিবরা পারতেছে না করতে। তাও তারা দিব্যি খেলেতেছেন ম্যাচের সবচেয়ে ক্রুশিয়াল সময়টা।

ইংল্যান্ডে জনি বেয়ারস্টো, মালান, বিলিংস, লিভিংস্টোন এদের মতো কোয়ালিটি ওপেনার থাকলেও তারা বাটলারকে ওপেনে আনছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অলিখিত রুলস হচ্ছে আপনার বেস্ট ব্যাটারকে বেশি সুযোগ দিবেন তত রান আসবে। বাটলারের এদের যে কারোর চেয়ে বেশি কন্ট্রিবিউট ইমপ্যাক্ট রাখা সম্ভব বলে বাটলার ওপেনিং করেন।

আর আমরা আফিফকে চেপেচুপে ছয়ে রেখে দিচ্ছি। ১৪ ওভারের পর এসে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাইকেল বেভান হবেন নাকি? সে আদৌ ফিনিশ পারে না। ১০ ওভারের মধ্যে ব্যাট করতে নেমে যে চারটা ইনিংসে ৩ টায় ম্যাচ জিতাইছে তারে আপনি শেষে নামান।

সাকিব, মুশফিক, রিয়াদের আগে খেলাতেই হবে কেন? ১৪ বছর মিডিওকোর টি-টোয়েন্টি ব্যাটার থেকে নিজেদের বের করতে না পারা ব্যাটারদের পিছনে এখনও ইনভেস্ট করে যাচ্ছেন?

ওপেনিং বিষয়ে বলি, বাংলাদেশের আউট অফ দ্য বক্স কিছু চেষ্টা করে না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অন্য ফরম্যাটের মতো না। এখানে ইনপুট দিয়ে আউটপুট বের হলেই হচ্ছে। আমরা তো সংবিধানের লিখে দিছি জেনুইন ওপেনার ছাড়া অন্য কাউকে আনা যাবে না।

সৌম্য লিটন, ডটের রাজা চলে গেছেন এখন তার বদলি হিসেবে আসছে তাঁরা ডটের সম্রাট। এরা না পারলে এদের একাদশ থেকে বাদ দেন। মেকশিফটে ওপেনার আনেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক মাহেলা জয়াবর্ধনে তিনি মেকশিফটে এতগুলো রান করছিলেন। এখনকার টি-টোয়েন্টিতে নাম্বার ওয়ান ব্যাটার বাবর আজমও মেকশিফটে আসেন। বিরাট কোহলি নিজেও মেকশিফট ওপেনার।

আর আমরা মিডিল অর্ডার কিংবা লেয়ার অর্ডার থেকে কাউকে তুলতে ভয় পাই। পাওয়ার প্লে উইজ করতে পারবেন এমন কাউকে পাঠান।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টিতে অবস্থা টেস্টের মতোই করুন। আগেই বলছি এই দল বিশ্বকাপে টিস্যু পেপার হিসাবে ব্যবহার হবে। পরের রাউন্ডে যেতে পারলে এই দলরে যে যত ব্যাবহার করতে পারবে তার রান রেট তত ভালো থাকবে। এখন পরের রাউন্ডে যেতে কত হিসাবের মুখে দাঁড়াতে হয় তার ঠিক নাই!

স্কটল্যান্ডের কোচের মন্তব্যর পরে বলেছিলাম বাংলাদেশ স্কটল্যান্ডের লেভেল একই! এ্যাসোসিয়েট দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের পার্থক্য শুধু সাকিব আর মুস্তাফিজের বোলিংটা। কাল মুস্তাফিজ ভালো করেন নাই। ডেথে রান লিক করছেন।  বাংলাদেশকে সেটার জন্য ভুগতে হয়েছে।

মূলপর্বে বাংলাদেশের উঠবে হয়তো। বাংলাদেশকে অন্য দলগুলো যেভাবে টিস্যু পেপার হিসাবে সেমিফাইনালের ওঠার রাস্তা হিসাবে খেলবে। তেমনি বাংলাদেশও নিজে দলে কিছু টিস্যু পেপার পাবে। যাদের টি-টোয়েন্টি দল থেকে ছুড়ে ফেলতে পারবে। ২০০৩-২০১৯ বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রতি বিশ্বকাপ শেষে এমন ১-২ জন  খেলোয়াড়কে  ছুড়ে ফেলায় দেয়া হয়। যেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটর জন্য বেশির ভাগ সময়ই ভালো হইছে। এবারও বোর্ড ছুড়ে ফেলাবে। যেটা ভবিষ্যৎ এর জন্য গ্রেটার গুড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link