More

Social Media

Light
Dark

এক বিশ্বকাপের গোলমেশিন

ফুটবল বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার আয়োজিত যে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সেরা গোলদাতার পুরস্কার হিসেবে থাকে ‘গোল্ডেন বুট’। কিন্তু এমন আন্তর্জাতিক ভিন্ন দুটো টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বুট জয়ী খেলোয়াড়ের সংখ্যা মোটে এক। এমন অনন্য রেকর্ড গড়ে ইতিহাস রচয়িতা রাশিয়ান খেলোয়াড় ওলেগ সালেঙ্কো।

ওলেগ সালেঙ্কো, রাশিয়ার বিশ্বকাপ থেকে অর্জন বয়ে নিয়ে আসার তালিকায় তাঁর নাম সবার উপরে থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রখর। কেননা রাশিয়ার ফুটবল ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে জিতেছেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট। আফসোস! গোল্ডেন বুট জয়ী এই খেলোয়াড়ের খেলোয়াড়ি জীবন ততটা বর্ণিল নয়। সময়ের আগেই নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা ক্যারিয়ারের আলো শেষমেষ নিভে যায় একবিংশ শতাব্দির প্রাক্কালে।

১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপ মিলিয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওলেগ সালেঙ্কো ম্যাচ খেলেছেন সর্বমোট ১৩ টি। এর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে খেলেছেন চারটি, ইউক্রেনের হয়ে একটি ও রাশিয়ার হয়ে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ মিলিয়ে খেলেছেন আটটি।

ads

১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে সালেঙ্কো গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে করেছিলেন পাঁচ গোল। তাঁর অভূতপূর্ব নৈপূন্যে ৬-১ গোলের জয় পায় রাশিয়া। তবুও রাশিয়া ব্যর্থ হয় পরবর্তী রাউন্ডে উত্তীর্ণ হতে। কিন্তু সেবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ খেলে ছয় গোলের সুবাদে গোল্ডেল বুটটি বুলগেরিয়ান খেলোয়াড় হিস্টো স্টোইচকভের সাথে যৌথভাবে জিতে নেন ওলেগ সালেঙ্কো। বুলগেরিয়াকে সেবার স্টোইচকভ নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনাল অবধি। বুলগেরিয়া চতুর্থ স্থানে শেষ করে তাদের বিশ্বকাপ মিশন।

ওলেগ সালেঙ্কো একটা জায়গায় অদ্বিতীয়। তিনি ব্যতিত অন্য কোন খেলোয়াড় ফিফার দু’টি ভিন্ন টুর্নামেন্টের সেরা গোল দাতার সম্মাননা জেতেননি। ১৯৮৯ সালে সৌদিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটিও জিতেছিলেন ওলেগ সালেঙ্কো। যা তাকে করেছে ফুটবলের ইতিহাসে অনন্য, অদ্বিতীয়।

আরেকটা জায়গায় তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্ত। তিনিই একমাত্র ফুটবলার যিনি বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের খেতাব জিতেছেন শুধু প্রথম রাউন্ড খেলেই। কি বলবেন তাঁকে? সৌভাগ্যবান? নাকি যথেষ্ট সুযোগের ঘাটতি।

কিন্তু, আফসোস তাঁর ক্যারিয়ার ততটা লম্বা করতে পারেননি তিনি। শরীরটা বেইমানী করে বসে তাঁর সাথে। মাত্র ৩১ বছর বয়সেই তাঁকে তাঁর ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয়। ১৯৮৬ থেকে ২০০০ সাল অবদি তিনি বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন। ১৯৯৯/২০০০ ও ২০০০/০১ মৌসুমে তিনি ম্যাচ খেলেছেন সর্বোমোট চারটি। এছাড়া সালেঙ্কো তাঁর ১৪ বছরের ক্লাব ক‍্যারিয়ারে ২৪৮ ম্যাচে গোল করেছিলেন ৮৬টি। শেষের দিকটাইয় ভীষণ গোল খরায় ভুগেছিলেন নান্দনিক এই স্ট্রাইকার।

ওলেগ সালেঙ্কো ছিলেন অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী একজন স্ট্রাইকার। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, সুদীর্ঘ হয়নি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন। তাঁর হয়ত ফুটবলকে আরো অনেক কিছু দেবার ছিলো। তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ হতে পারে ৯৪ বিশ্বকাপে তাঁর তিন ম্যাচে ছয় গোল করা।

যে ছয় গোল আদায়ে বুলগেরিয়ান স্টোইচকভ সুযোগ পেয়েছিলেন সাত ম্যাচ। প্রশ্নটা সালেঙ্কোর ভাগ্যকে করা গেলে ভাল হতো। কেন হঠাৎ প্রসন্নতা? এবং কেন মুখ ফিরিয়ে নেওয়া? খানিক তাচ্ছিল্যের হাসিতে হয়ত আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইতো তাঁর ভাগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link