More

Social Media

Light
Dark

তিন প্রজন্মের ফুটবল প্রেম

‘হাজি বিরিয়ানি’ ভোজনরসিক বাঙালীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এই হাজি বিরিয়ানির সম্পূর্ণ দায়িত্বভার এখন তৃতীয় প্রজন্মের কাঁধে। উত্তরাধিকার সূত্রে ব্যবসার হাল ধরা নতুন নয়। কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্রে ফুটবলের তৃতীয় প্রজন্মের সতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের ইতিহাস গোটা ফুটবল দুনিয়ায় বেশ বিরল। এমন ইতিহাস গড়ে দাদা, বাবার দেখানো পথ ধরে ফুটবলের মাঠে ড্যানিয়েল মালদিনি।

ড্যানিয়েলের দাদা, সিজার মালদিনি ছিলেন ইতালির ফুটবলের ইতিহসের সেরা, রক্ষণভাগের একজন কিংবদন্তি। তিনি শুধু যে একজন সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তা নয়। তিনি ছিলেন এসি মিলান ও ইতালির নেতৃত্বে। তাঁর নেতৃত্বে ইতালি ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল।

এছাড়াও এসি মিলান ক্লাবের এই কিংবদন্তি মিলানকে জিতিয়েছিলেন চারটি ইতালিয়ান সিরি ‘এ’ লিগ টাইটেল। এর পাশাপাশি একটি ইউরোপিয়ান কাপ দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন ক্লাবের অর্জনের শেলফ। এসি মিলানের হয়ে ৪১২ ম্যাচ খেলা এই রক্ষণের সেনানি গোল করেছিলেন তিনটি। রক্ষণেই যার মন, গোলেরর সংখ্যা দিয়ে তাঁকে যাচাই করা বা তাঁর খেলার মানের পরিমাপ করা নেহাৎ বোকামি।

ads

ফুটবলের ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড়দের যেকোন তালিকায় পাওলো মালদিনি থাকার সম্ভাবনা শতভাগ। তাঁকে ছাড়া দল কিংবা তালিকা অপূর্ণ থেকে যাবে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ইতিহাসের সেরা এই রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ছিলেন দূর্ভেদ্য।

চীনের প্রাচীর হার মেনে যাবে কোন কোন ক্ষেত্রে। বাবা সিজার মালদিনির পদাঙ্ক অনুসরণ করে রক্ষণের কিংবদন্তি বনে গিয়েছিলেন কিংবদন্তি বাবার ছেলে পাওলো। বাবার ক্লাব এসি মিলানের মায়া যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিল পাওলোকে। তাইতো ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পাওলো ছিলেন মিলানের দূর্গ।

ক্লাব ফুটবলে দলবদল যেন এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে পাওলোর মতো ক্লাবের প্রতি আনুগত্য তাঁর খেলার ধরণ বা মানের মতোই অনন্য। তিনি মিলানের হয়ে সর্বোমোট ৯০৭ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে আগলে রেখেছিলেন মিলানের ডি-বক্স। তিনি সিরি আ তে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে সর্বাধিক ম্যাচে খেলতে নামার রেকর্ডটি নিজের আয়ত্তে। ৬৪৭ ম্যাচের রেকর্ডটি ভেঙেছেন তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ জিয়ানলুইজি বুফন।

এমন কোন শিরোপা নেই যা তিনি জেতেন নি মিলানের হয়ে ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে। লিগ শিরোপা, ইউরোপিয় শ্রেষ্ঠত্ব, ক্লাব বিশ্বকাপ সহ পাওলো মালদিনির অর্জনের ঝুলি বেশ ভারী। তবে আক্ষেপ জাতিয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জয় করতে না পারা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও অধরাই রয়ে যায়।

দাদা-বাবাকে অনুসরণ করে ড্যানিয়েল এখন মিলান ডেরায়। তাঁর অভিষেক নিয়ে প্রত্যশা ছিল অনেক। বাবা-দাদার মান, তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও সমর্থকদের প্রত্যাশার একটা অদৃশ্য চাপ নিশ্চয়ই ছিলো ড্যানিয়েলের মস্তিষ্কে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল পাওলো তথা এসি মিলান সমর্থকেরা। ফুটবল দর্শকদেরও নজর ছিল তাঁর পূর্ণ লিগ অভিষেক ম্যাচকে ঘিরে। এর আগে অবশ্য মিলান জার্সিতে ড্যানিয়েল বেশকিছু ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমেছেন, তবে কখনোই শুরুর একাদশে জায়গা মেলেনি তাঁর।

সিরি আ লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডের ম্যাচে প্রথমবারের মতো স্পেজিয়ার বিরুদ্ধে মূল একাদশে সুযোগ পান মালদিনি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি ড্যানিয়েল মালদিনি। দাদা, বাবার মত রক্ষণে নয়, মিলানের হয়ে গোল করতেই ড্যানিয়েল হয়েছেন ফরওয়ার্ড। বিশ্বস্ত মালদিনি পরিবার থেকে এসি মিলান ও ইতালি পেলো আরো এক রত্ন।

বিরল আরেক ঘটনা ঘটেছে এদিন। একই পরিবারের তিন প্রজন্মের একই ক্লাবের হয়ে গোল করার মতো রেকর্ডটা নিজেদের করে নিয়েছে মালদিনি পরিবার। সকল চাপ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতেই ম্যাচের ৪৮ মিনিটে হেড থেকে গোল আদায় করে বিরল রেকর্ড নিজের পরিবারের করে নেন ড্যানিয়েল মালদিনি।

ছেলের গোল দর্শক গ্যালারি থেকে উদযাপন করেছেন এসি মিলান তারকা ও বর্তমান টেকনিকাল ডিরেকটর পাওলো মালদিনি। ড্যানিয়েলের ইতিহাস গড়ার দিনে মিলান ব্রাহিম ডিয়াজের গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে এবং দখল করে নেয় টেবিলের শীর্ষস্থান।

ড্যানিয়াল খেলাটা ঠিক বোঝেন। তিনি জানেন তাঁর আসলে কি করতে হবে। তিনি অনায়সে একজন ভাল খেলোয়ার হবার মতো প্রতিভা নিজের মধ্যে ধারণ করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়স তাঁর। বহু সময় এখনো পাড়ি দেওয়া বাকি। তবে বাবা কিংবা দাদার মতো কিংবদন্তি হবার চাপটা যদি খুব বেশি প্রভাবিত করে ফেলে তাঁকে তাহলে তা তাঁর জন্যে কাল হয়ে দাঁড়াবে নি:সন্দেহে।

তাই দর্শক সমর্থকদের উচিৎ ড্যানিয়েলকে তাঁর মতো করে খেলতে দেওয়া এবং সময় দেওয়া, প্রত্যাশার ভার থেকে অবমুক্ত করা। তাহলে হয়ত মালদিনি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মও আধিপত্যের সাথে খেলে যাবে ‘দ্য বিউটিফুল গেম, ফুটবল’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link