More

Social Media

Light
Dark

মিসবাহর রিপোর্ট কার্ড

পাকিস্তান ক্রিকেটের সেরা টেস্ট অধিনায়কের তালিকা করলে সবার উপরেই থাকবেন মিসবাহ উল হক। একই সাথে তিন ফরম্যাট বিবেচনায় নিলেও পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পাঁচ অধিনায়কের একজন হিসেবেই তিনি পরিচিত। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অনেক অর্জন আর সফলতার পর দায়িত্ব পেয়েছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক সহ হেড কোচের। কিন্তু সেই দায়িত্বে ব্যর্থতার দায় নিয়ে মেয়াদ পূর্তির এক বছর আগেই ব্যক্তিগত পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। আর সেখানেও বিদায়টা সুখকর হল না।

সম্প্রতি পাকিস্তানের হেড কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মিসবাহ। একই সাথে দলের বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনুসও সরে দাঁড়ান নিজ দায়িত্ব থেকে। ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ালেও, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণায় তাদের মতামত নেওয়া হয়নি বলেই তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও বেশ গুঞ্জন রয়েছে।

অবশ্য এই দায়িত্বটা ঠিক কতদিন থাকতো সেটি নিয়েও ছিলো সংশয়। হেড কোচের দায়িত্বে থেকে তো কম সমালোচিত হননি মিসবাহ। এমনকি নির্বাচক ও কোচ একসাথে দুই পদ আঁকড়ে থাকাকালীন সময় থেকেই তিনি দলকে সেভাবে সার্ভিস দিতে পারছিলেন না। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে, কোচ হিসেবেও দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্স! সব মিলিয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেট সমর্থকদের সিংহভাগই চাচ্ছিলেন না মিসবাহকে।

ads

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও (পিসিবি) পরবর্তী কোচ নিয়ে আলোচনা করছিলেন বলেও গুঞ্জন শোনা যায়। হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই দেখা যেতো পাকিস্তান ক্রিকেটের নতুন কোচ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মিসবাহ। অবশ্য মিসবাহর পথেই হাঁটেন বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনুসও।

মিসবাহ’র অধীনে কেমন ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স? বিদায় বেল কেমন দাঁড়ালো মিসবাহর রিপোর্ট কার্ড? একটু পরিসংখ্যান ঘেটে বোঝার চেষ্টা করলাম।

ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভরাডুবির পর ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ক্রিকেটের হেড কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন মিসবাহ। তিন বছরের চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের শেষ অবধি থাকার কথা তাঁর। মিসবাহ হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পাকিস্তান টেস্টে খেলেছে ১৬টি ম্যাচে।

আর ১৬ ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছে ৭টি’তে এবং ড্র হয় তিন ম্যাচে। এই ৭ জয়ের মধ্যে টেস্ট ফরম্যাটে বর্তমান সময়ে খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেয়েছেন চার ম্যাচে! বাকি তিন জয়ের দু’টি ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের মাটিতে এক টেস্টে জয় পায় পাকিস্তান।

এছাড়া ১১টি ওয়ানডে ম্যাচে তার অধীনে পাকিস্তান জয় পেয়েছে ৬টি’তে। যার মধ্যে খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় চার ম্যাচে! বাকি ২ ম্যাচে ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায় তাঁরা।

অপরদিকে, ৩৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তান গেলো দুই বছরে জয়ের দেখা পেয়েছে ১৬টি ম্যাচে। অন্যান্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে তাঁর অধীনে পাকিস্তানের রেকর্ড খুব একটা খারাপ না। এই ‘খারাপ না’ ব্যাপারটা শুধুমাত্র মিসবাহ’র অধীনে তিন ফরম্যাটের পারফরম্যান্স বিবেচনায় বলছি! কিন্তু সাবেক পাকিস্তানি কোচ মিকি আর্থারের সাথে তুলনা করলে মিসবাহ’র সাথে দেখা যাবে বিস্তর ফারাক।

আপাতত, মিকির অধীনে শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টির সবশেষ পারফরম্যান্সটাই বলি। মিকির অধীনে পাকিস্তান একসময় ছিলো টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের টপে! মিসবাহ দায়িত্ব নেওয়ার আগের সবশেষ ৩৭ টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান জয় পায় ৩০ টি ম্যাচে! তাঁর অধীনে টানা ১৭ ম্যাচের মাঝে ১৬টি’তেই জয় তুলে নেয় পাকিস্তান!

আর সেই পারফরম্যান্সের গ্রাফটা উলটো দিকে মোড় নেয় মিসবাহর আমলে। এমনকি দল নির্বাচন স্বেচ্ছাচারিতা করায় ক্ষোভে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবসরেও যান পেসার মোহাম্মদ আমির। অবশ্য সম্প্রতি মিসবাহ-ইউনিসদের পদত্যাগের পরই আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দেন আমির।

মিসবাহর কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন না খোদ পিসিবি বোর্ড কর্তৃপক্ষও। তাই কানাঘুষা চলছিলো আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই হয়তো দায়িত্বে দেখা যাবে নতুন কাউকে। আর তার আগেই কিনা নিজেদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন মিসবাহ-ইউনুসরা।

তিন ফরম্যাটে মিলিয়ে মিসবাহর অধীনে পাকিস্তান ৬১ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ২৯ ম্যাচে! জয়ের হার প্রায় ৪৮ শতাংশ! যার মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশ জয়ই এসেছে তুলনামূলক খর্বশক্তির দলের সাথে। আর বাকি ২২ শতাংশের সিংহভাগ সাফল্যই এসেছে ঘরের মাটিতে।

সব মিলিয়ে কোচ হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেটে নিজের নামের পাশে কালো দাগ টেনেই বিদায় দিলেন মিসবাহ। নির্বাচক হিসেবে যেমন ছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ; তেমনি কোচ হিসেবেও ছিলেন সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের হয়ে অনেক সম্মান বয়ে আনলেও কোচ হিসেবে ছিলেন যথেষ্ট ব্যর্থ। উপরের পরিসংখ্যান দেখার পর এই ‘ব্যর্থ’ বলার কারণটা নিশ্চয়ই কেউ খুঁজতে চাইবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link