More

Social Media

Light
Dark

আক্ষেপ ও অপেক্ষা

হল না, অল্পের জন্য হল না। এক ম্যাচ জিতলেই যেখানে ইতিহাস গড়া হয়ে যেত সেটাই করতে পারলেন না নোভাক জকোভিচ। ইতিহাস গড়ার খুব কাছে গিয়েও তা ছোয়া হলো না এই সার্বিয়ান তারকার। ইউএস ওপেনের ফাইনালে দুটি ইতিহাস গড়ার মিশনে কোর্টে নেমেছিলেন জকো। দানিল মেদভেদেভকে হারিয়ে ফাইনাল জিততে পারলে রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালকে পেছনে ফেলে রেকর্ড ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের আনন্দে ভেসে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতো।

পাশাপাশি আরেকটা সুযোগ ছিল এই ফাইনাল জিতে ৫২ বছরের ইতিহাস ভেঙে এক মৌসুমে চার-চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের। কিন্তু তার কিছুই হল না। ফাইনাল হেরে নিজেকে যেমন হতাশ করেছেন ঠিক তেমনি বিশ্ব রেকর্ডের জন্য অপেক্ষাটা বেড়ে গেছে। টেনিস বিশ্বের পাশাপাশি প্রায় সবারই নজর ছিল এই ম্যাচের দিকে। র‌্যাংকিং আর সাফল্যের কারণে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিলেন জকোভিচ। কিন্তু ম্যাচে সেটির প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়নি।

সে কারণে রাশিয়ার এই প্রতিযোগী তার কাছে আগামী বছরের গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্যই অপেক্ষা করতে হবে। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে আসরের দ্বিতীয় বাছাই রাশিয়ার ডানিল মেদভেদেভের মুখোমুখি হন জকোভিচ। চলতি বছরের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে এই জোকোভিচের কাছেই হেরেছিলেন মেদভেদেভ। সেই সময় হাতছাড়া হয়েছিল গ্র্যান্ড স্ল্যাম।

ads

এবার সেই ক্ষত পুষিয়ে নিতে এদিন জকোভিচকে ফাইনালে কোন সুযোগই দিলেন না তিনি। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল অনেকটা এরকম ৬-৪, ৬-৪ ও ৬-৪ সেট। পরিস্কারভাবে জিতে ২৫ বছর বয়সী এই তারকা প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন। ইতিহাস গড়ার খুব কাছে গিয়েও এ যাত্রায় আক্ষেপ নিয়ে কোর্ট ছাড়তে হয় জোকোকে।

ফাইনাল হারের পর আবেগ লুকাতে পারেননি তিনি। সে কারণেই উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজ আমি যদিও জিততে পারিনি কিন্তু আপনারা আমার দিনটি বিশেষ করে তুলেছেন। এ জন্য আমি খুবই খুশি হয়েছি। গ্যালারীতে থেকে আপনাদের সমর্থন আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। এমন নিউইয়র্ক আমি আগে কখনো দেখিনি, দেখার সুযোগ পাইনি। আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ আর সকলের জন্য ভালোবাসা রইল।’

২০২১ সালটা এক কথায় দারুণ কেটেছে জোকোভিচের। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে রাশিয়ান দানিল মেদভেদেভকে, ফ্রেঞ্চ ওপেনে গ্রিসের স্তেফানো সিতসিপাসকে, উইম্বলডনে ইতালির মাত্তেও বেরেত্তিনিকে হারিয়ে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন। ইউএস ওপেন জিতে সুযোগ ছিল ইতিহাস গড়ার। কারণ আগে কখনোই ক্যারিয়ারে বছরের চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের সবকটির শিরোপা জেতা হয়নি তার। ইতিহাসের ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের হাতছানি ছিল তার সামনে।

কিন্তু, সেই এলিট ক্লাবে নিজেকে নিয়ে যেতে পারেননি। একটা জয়ে যেখানে দুটো ইতিহাস রচিত হতো সেখানেই একটাও হয়নি। ৩ ঘন্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়েল পর ৩-২ সেটে হার মেনে নিজেই বাড়িয়েছেন নিজের অপেক্ষা। র‌্যাংকিং এ নাম্বার ওয়ান এই তারকা কিছুদিন আগেই টোকি অলিম্পিক থেকে বিদায় নিয়েছিলেন জার্মান তারকা জেরেভের কাছে পরাজিত হয়ে। ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে তারই প্রতিশোধটা নিয়ে নিলেন জকো।

শেষ চারের রুদ্ধশ্বাস ৫ সেটের লড়াইয়ে জোকো ৪-৬, ৬-২, ৬-৪, ৪-৬, ৬-২ গেমে জয় তুলে নেন। প্রথম সেট জিতে দারুণ এক লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন জার্মান তারকা জেরেভ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেট জিতে ম্যাচ জয়ের পথে এগিয়ে যান সার্বিয়ান জোকোভিচ। কিন্তু অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী জেরেভ যে হার মানার পাত্র নন সেটি চতুর্থ সেট ৬-৪ পয়েন্টে জিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।

দারুণ লড়াইয়েল পর খেলা গড়ায় পঞ্চম সেটে। যেখানে নিজের অভিজ্ঞতার পুরোটাই ঢেলে দেন জোকোভিচ। ৪৩ মিনিটে ৬-২ গেমে জিতে ফাইনালে পৌছে যান। ইউএস ওপেনের আগে সমান ২০টি করে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে এক কাতারে ছিলেণ তিন টেনিস জীবন্ত কিংবদন্তি রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জকোভিচ। ফাইনালে মেদভেদেভকে পরাজিত করতে পারলে পুরুষ এককে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের ইতিহাস গড়তেন জকোভিচ। এছাড়া রড লেভারের পর পুরুষ এককে বছরের প্রধান চার শিরোপা আর কোনো খেলোয়াড় জিততে পারেনি। সেই হাতছানিও ছিল জোকোভিচের সামনে।

সবশেষ ১৯৬৯ সালে ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন রড লেভার। এই কিংবদন্তীর পর পুরুষ এককে বছরের প্রধান চার শিরোপা আর কোনো খেলোয়াড় জিততে পারেনি। ১৯৬৯ সালে এক ক্যালেন্ডার বছরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছিলেন তিনি।

তবে, লেভারের আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন আরও চারজন খেলোয়াড়। স্টেফি গ্রাফ (১৯৮৮), মার্গারেট কোর্ট (১৯৭০), মরিন কনোলি (১৯৫৩) এবং ডন বাজ (১৯৩৮) এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। এরপর ১৯৬২ ও ১৯৬৯ সালে দুইবার এই রেকর্ড গড়ে অনন্য হয়ে আছে লেভার। এবার সেই সুযোগের খুব কাছে হিগয়েও সেটি ছোয়া হয়নি জকোভিচের। হয়তো সামনে আরও ভাল কিছুর জন্যই কিছুটা সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link