More

Social Media

Light
Dark

বর্ণবিদ্বেষ ও এসজেএন শুনানি

১৯৭০ থেকে ১৯৯২-প্রায় বাইশ বছর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট ধারাধাম থেকে নির্বাসিত ছিল। কারণ আর কিছুই না, বর্ণবিদ্বেষ নামক রোগ। ১৯৯২ পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকা আবার ফিরে আসে। এবং আপাতদৃষ্টিতে নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে বর্ণবিদ্বেষ মুক্ত অবস্থায় সব রকম খেলাধুলোয় অংশগ্রহণ শুরু করে।

কিন্তু, আদতে কি দক্ষিণ আফ্রিকার খেলাধুলো থেকে এই রোগ সমূলে উৎপাটিত হয়েছে? উত্তর হলো না এবং হ্যাঁ। আসলে ব্যাপারটা অত্যন্ত ধূসর। এবং সিরিয়াস। দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন চলছে সোশ্যাল জাস্টিস ও নেশন বিল্ডিং শুনানি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তাই আজ ব্যাপারগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

বর্ণবিদ্বেষ ব্যাপারটা নিয়ে আমরা ভারতীয়রা বিশেষ মাথা ঘামাই না। আমাদেরও অনেক কথায় অত্যন্ত হাঁসি-ঠাট্টার ছলে নানান রকম বর্ণবিদ্বেষী কথা বার্তা বলে থাকি। কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকার বা আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষ আমরা যদি বাঙালি প্রিজমে দেখি, সম্ভবত সঠিক চিত্রটি বুঝবো না। শন পোলক, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্রায়েম স্মিথ, অ্যাশওয়েল প্রিন্স, পল অ্যাডামস তাই আমাদের কাছে নিছক ক্রিকেটার। তাঁদের গায়ের রং নিয়ে আমরা ভাবি না।

ads

শুধু মাত্র ক্রিকেটিং প্রতিভা নিয়ে ভাবি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেক্ষিতে সেটা সঠিক মূল্যায়ন নয়। সেদিনই পল এডামসের একটি সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার। তা তিনি জানিয়েছেন, দলে তাঁকে সবাই একটি বিশেষ নামে ডাকতো। সেই নামের বাংলা তর্জমা টা নাহয় থাক। প্রিন্স বলেছেন, তাঁর সময়ে শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারদের আলাদা একটি দল ছিল।

তিনি এবং অন্যান্য যে কয়জন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার সেসময়ে দলে ছিলেন, তাঁরা ঠিক ততটা কল্কে পেতেন না। এক কৃষ্ণাঙ্গ কোচও বলেছেন, তাঁর দাবি অনেক জোরালো হওয়া সত্ত্বেও, এক শেতাঙ্গ প্রশিক্ষককেই দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ঘরোয়া দল বেছে নেয়। শেষমেশ সবচেয়ে বড়ো বোমাটি ফাটিয়েছেন এক নির্বাচক ও খায়া জোন্ডো। তিনি বলেছেন ২০১৫ সালের ভারত সফরে ডি ভিলিয়ার্স তাঁকে দলে আসতে দেননি। শুধুমাত্র তাঁর গায়ের রঙের কারণে।

এছাড়াও ডি ভিলিয়ার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ২০১৫-১৬ সালের ইংল্যান্ড সিরিজেও রাবাদাকে দলে চাননি। এইসব অভিযোগের সত্যাসত্য নাহয় ভবিষ্যতে বিচার্য্য। কিন্তু একটি বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তদানীন্তন দক্ষিণ আফ্রিকার শেতাঙ্গ ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন বর্ণবিদ্বেষ বিদ্যমান ছিল । এবং সম্ভবত তাঁরা এই বিষয়ে ওয়াকিবহালও নন। স্মিথ, ক্যালিস, ডি ভিলিয়ার্সরা যে সময়ে বেড়ে উঠেছেন, সে সময়ে ওটাই যে দস্তুর ছিল।

আবার সাইমন হারমারের মতো খেলোয়াড়রা, যাঁরা বেড়ে উঠেছেন ম্যান্ডেলা জমানায় তাঁরাই আবার অনেক সহিষ্ণু। জনৈক ভারতীয় ভক্ত শামসির কারণে হারমারের দলে সুযোগ না পাওয়া এবং তাঁর কল্পাক চুক্তিতে কাউন্টি খেলা নিয়ে টুইট করাতে, হারমার শামসির পক্ষে কথা বলেছেন। শামসির প্রশংসা করেছেন। আধুনিক কালে এই প্রচ্ছন্ন বর্ণবিদ্বেষ হারমারদের হাত ধরে শেষ হোক, এই কামনা করি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার নিয়ম করেছে যে দলে একটা নির্দিষ্ট শতাংশের অশ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড় থাকতেই হবে। ফিল্যান্ডার ২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এই নিয়মের ফাঁসে নির্বাচিত হন, কাইল এবোট অনেক ভালো ফর্মে থাকা সত্ত্বেও। এই নিয়ে সেসময়ে যথেষ্ট জলঘোলা হয়। এবং তার পরপরই কলপ্যাক চুক্তিতে বহু শেতাঙ্গ ক্রিকেটার অন্য দেশে পারি দেন। কেউ টি-টোয়েন্টি খেলে বেড়ান বিশ্বজুড়ে, কেউ আবার কাউন্টি খেলেন।

এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় যেভাবে অশ্বেতাঙ্গ মানুষের সঙ্গে আচার ব্যবহার করা হয়েছে, সেই যুক্তিতে এই নিয়ম যথাযথ। কিন্তু এই নিয়মের ফাঁদে অনেকে ফায়দা তুলছেন না তো? বেটিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত থামি সোলেকিলের মতো অনেকে ঘোলা জলে মাছ ধরতেও নেমে গিয়েছেন। এতে আদতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটেরই ক্ষতি। অত্যন্ত ধূসর অবস্থায় বিদ্যমান এখন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট।

আমরা যাদের নায়ক মানতাম, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে এরকম বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এলে কি হবে জানিনা। কল্পাক চুক্তিতে ভালো ভালো খেলোয়াড় হারানোর সমস্যার কিভাবে সমাধান হবে তাও জানিনা। ক্রিকেটকে ইনক্লুসিভ করতে গিয়ে ব্যাপারটা প্রতিহিংসায় পর্যবসিত হবে কিনা জানিনা। শুধু জানি, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে এহেন অবস্থায় দেখতে চাই না। বাভুমা ও ডি কক, রাবাদা ও নর্কে, মহারাজ ও ডু প্লেসিকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে দেখতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link