More

Social Media

Light
Dark

সদা হাসিমুখের অজি নেতা

সাল ১৮৭৭। ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের জেমস লিলি হোয়াইটের সাথে টস করতে নামেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভ গ্রেগরি। ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই অধিনায়কত্ব পাওয়ার সেটাই সর্বপ্রথম নজীর। আসলে এটা নেহায়েৎ বলার জন্য বলা, কারণ প্রথম ম্যাচে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে খুঁজে বের করা তো অসম্ভব।

তবে, এরপর অভিজ্ঞ অনেকে থাকার পরও বেশ কয়েকবারই বিভিন্ন দেশ অভিষিক্তদের ওপর নেতৃত্বের ভার ছেড়েছে। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের লি কেনেথ জার্মন, ইংল্যান্ডের টনি লুইস, নাইজেল হাওয়ার্ডরা এই কীর্তি গড়েছেন।

নেতৃত্বের এই জায়গাটাতে অস্ট্রেলিয়া বরাবরই রক্ষণশীল। বিরাট পরিক্ষিত ছাড়া সেখানে খুব কমই কেউ সুযোগ পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া আবার সেটা করে বিরাট সব কিংবদন্তিতুল্য নেতার জন্ম দিয়েছে। অ্যালান বোর্ডার, স্টিভ ওয়াহ কিংবা রিকি পন্টিংরা এসেছেন তারই ধারাবাহিকতায়।

ads

তবে, অস্ট্রেলিয়াকে সেই অভিজ্ঞতায় ভরসা রাখার প্রথা ভাঙতে বাধ্য করতে পেরেছিলেন একজন। তিনি জর্জ বেইলি। তাঁর গল্পই এবার হোক।

বেইলির পরদাদা, মানে দাদার বাবা হলেন জর্জ হারবার্ট বেইলি। হারবার্ট ১৮৭৮ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে সেই ঐতিহাসিক ইংল্যান্ড সফরের দলে ছিলেন। এটুকু পড়ে মেনে নেবেন না যে ছোট বেলা থেকে ক্রিকেটারই হতে চাইতেন বেইলি। প্রতিভা ছিল বটে, তবে সেটা অনেক দিকে।

ক্রিকেট খেলতেন। তাঁর স্কুল দল মানে লনচেস্টন চার্চ গ্রামার স্কুলেরও অধিনায়কও ছিলেন। তাসমানিয়ার অনূর্ধ্ব-১৮ দলে খেলার জন্য যথেষ্ট যোগ্য ছিলেন। এছাড়া খেলতেন টেনিস। সেখানেও ছিলেন বেশ দক্ষ। আর ফুটবলটা এতটাই ভাল খেলতেন যে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লিগের (এএফএল) স্কাউটরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

বাবা-মা যেমন ছেলে চায় – ঠিক তেমনই ছিলেন বেইলি। পড়াশোনাতেও ছিলেন ভাল। উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের ওপর নম্বর পেয়েছিলেন। স্কুলের নাটক দলে ছিলেন, পাবলিক স্পিকিংয়ে দক্ষ ছিলেন। আর বাগান করার নেশা ছিল। আজও নাকি অবসরের সময়টা তাঁর এই বাগানেই কাটে। মানে সত্যিকারের এক সব্যসাচী!

২০১০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য ডাক আসে তাঁর। ওয়ানডে দলে, তবে ভাগ্য সহায় হয়নি। অভিষেক হয়নি। আন্তর্জাতিক অভিষেকের জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় আরো পাক্কা দু’বছর।

তবে, ২০১২ সালে তাঁর অভিষেকের আগে তাঁকে নিয়ে যত কথা হয়েছে সেটা বোধকরি অস্ট্রেলিয়ার অন্য কাউকে নিয়েই হয়নি। তাসমানিয়ার হয়ে ততদিনে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দলে তখন নেতৃত্বের তুমুল সংকট।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তখন রীতিমত যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত নেয়। ফেব্রুয়ারিতে নিজের টি-টোয়েন্টি অভিষেকের আগেই দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন জর্জ বেইলি। টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে অধিনায়কত্বও করেছেন কালেভদ্রে।

এমনকি মাইকেল ক্লার্কের অনুপস্থিতিতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও দলের নেতৃত্বভার বর্তায় তার কাঁধে। সে ম্যাচে ৫৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন তিনি।

অধিনায়কের দক্ষতা দেখানোর সাথে সাথে ব্যাটিংটাও কালক্রমে খুব কার্যকর হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে ভারত সফরে ওয়ানডে সিরিজটা তাঁর অধীনেই খেলে অস্ট্রেলিয়া দল। সেই সিরিজে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ব্র্যাডম্যানসুলভ। ৪৭৮ রান তিনি করেন ৯৫.৬০ গড়ে। স্ট্রাইক রেট ছিল ১০৮.৬২। এরপরই ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের র‌্যাংকিংয়ে দুইয়ে উঠে আসেন তিনি।

যদিও বেইলি এবং জাতীয় দলে তার মধুচন্দ্রিমা খুব বেশিদিন টেকেনি। ফর্মহীনতার কারণে দল থেকে বাদ পড়ার পর আর দলে ফিরতে পারেননি তিনি। তবে, ২০১৬-১৭ মৌসুম পর্যন্ত তিনি দলের অন্যতম সদস্য হয়ে ছিলেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হিসেবে কাজ করছেন সাবেক এই অধিনায়ক।

এর আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ার তিনি শেষ করেন ৪০-এর ওপর গড় নিয়ে। টি-টোয়েন্টিতেও গড় ছিল ২৫-এর কাছাকাছি। ধ্বংসাত্মক এই ব্যাটসম্যান কয়েকটা ওভারের মধ্যেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন।

তবে, এরপরও হুট করে পাওয়া অধিনায়কত্বের জন্যই ক্রিকেটের পাতায় স্থায়ী হয়ে আছেন তিনি। সেটাও আবার অস্ট্রেলিয়ার মত অর্থোডক্স চিন্তাধারার দল বলেই বেইলিকে নিয়ে আলোচনাটা বেশি হয়েছিল। তবে, ভুল করেনি অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড।

কেমন অধিনায়ক ছিলেন বেইলি? সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে আরেক তাসমানিয়ান রিকি পন্টিং বলেছিলেন, ‘ও এমন একজন মানুষ যে পুরো দলটাকে এক করার ক্ষমতা রাখে। ওর ব্যক্তিত্ব দলের সবার ওপর প্রভাব ফেলে। ওর সাথে যারা খেলেছে তাঁরা সবাই ওর এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে ভাল ধারণা রাখে।’

নি:সন্দেহে, তাঁর ওই ভূবনভোলানো হাসিটাই তো সতীর্থদের চাঙ্গা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link