More

Social Media

Light
Dark

কুরান অ্যান্ড সন্স

ক্রিকেটটা তাঁদের বংশ পরম্পরায় ছিল। ক্রিকেটীয় এই পরিবারের অন্যতম বড় নাম তিনি। জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ছিলেন সেরাদের সেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি ম্যাচ না খেললেও তাঁর ব্যাটিং ও বোলিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছিলেন। ফিল্ডার হিসেবেও যে তিনি সেরা ছিলেন তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর সতীর্থদের কথায়। তবে ক্রিকেট দুনিয়া তাঁকে আজও মনে করে তাঁর দুই ছেলের জন্য। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে।

কেভিন প্যাট্রিক কুরান জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৮ সালে, জিম্বাবুয়েতে। প্যাট্রিকও ছিলেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার। তবে আমাদের আজকের আলোচনা ঠিক তাঁকে নিয়ে নয়। তাঁরই সন্তান কেভিন ম্যালকম কুরান কিংবা কেভিন কুরান জুনিয়রকে নিয়েই আমাদের এই আলোচনা। আমাদের কেভিন কুরানের জন্ম ১৯৫৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। তবে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করলেও কুরান ক্রিকেট খেলেছেন জিম্বাবুয়ের হয়েই।

তাঁদের পরিবারের ক্রিকেট যাত্রা অবশ্য এখানেই থামেনি। কেভিনের কাজিনও ক্রিকেট খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। কুরানদের এই পরম্পরাকে এখন বয়ে চলেছেন আমাদের কেভিন ম্যালকম কুরানের ছেলেরা। টম ও স্যাম কুরান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। এটা নিয়ে একটা সংশয় হতে পারে যে কী করে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া একজন জিম্বাবুয়ের হয়ে খেললো আবার তাঁর ছেলেরাই বা কেন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলছে!

ads

এই বিষয়টা পরিষ্কার হতে হলে আমাদের আবার একটু কেভিন ম্যালকম কুরানের জন্মসালে ফেরত যেতে হবে। টম, স্যাম ও বেন কুরানের বাবা ১৯৫৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৩ এই সময়টা দক্ষিণ আফ্রিকার ওই অঞ্চলটা ব্রিটিশদের অধীনে ছিল। ফলে কেভিন কুরান ব্রিটিশ নাগরিকও ছিলেন। সেই সূত্রেই তাঁর ছেলেরা পরে ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলে।

এমনি কি কেভিন কুরানের ক্রিকেট যাত্রাটাও ইংল্যান্ডেই হয়েছিল। কাউন্টি ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ ছিলেন এই অলরাউন্ডার। তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও পেস বোলিং দিয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে দারুণ সফল ছিলেন। কাউন্টি ক্রিকেটে এক মৌসুমে এক হাজারের বেশি রান করেছেন মোট পাঁচ বার। এরমধ্যে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সালে ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে জন্মস্থান দক্ষিণ আফ্রিকায়ও ঘরোয় ক্রিকেট খেলেছেন তিনি।

ওদিকে জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলে প্রথম ডাক পান ১৯৮০ সালে। তবে অভিষেক হয়েছিল তিন বছর পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের মঞ্চে। মজার বিষয় হচ্ছে সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের সেই জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন কুরান। ফ্লেচারে সাথে করেছিলেন ৭০ রানের জুটি। এই জুটিতেই জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল জিম্বাবুয়ে। সেই ম্যাচে বল হাতেও নিয়েছিলেন অ্যালেন বর্ডারের উইকেট।

এরপর ওই বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন তাঁর ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের ইনিংস। সেই ম্যাচে বল হাতেও নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। কেভিনের এই অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে ভারতকে হারিয়ে দিতে বসেছিল জিম্বাবুয়ে। তবে শেষ পর্যন্ত কপিল দেব তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলেন। তাঁর ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে ২৬৬ রান করতে পেরেছিল ভারত। ফলে ৩১ রানের জয় পায় ভারত। ঠিক তাঁর পরের ম্যাচেই সেই সময়ের শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬২ রান করেছিলেন কেভিন কুরান।

ফিল্ডার হিসেবেও সেই সময় বেশ নাম ডাক ছিল কুরানের। জিম্বাবুয়ের তখনকার অধিনায়ক ফ্লেচার তাঁর ফিল্ডিং নিয়ে বলেছিলেন,’ আউট ফিল্ড থেকে সে যখন কিপারের কাছে বল ছুঁড়তো বল তখন ঠিক স্ট্যাপের উপরে আসতো। কখনো কখনো স্ট্যাম্পেও লাগতো। আর যদি কাছ থেকে ছুঁড়তেন তাহলে আমরা ধরেই নিতাম যে বল স্ট্যাম্পে লাগবে।‘

১৯৮৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন কেভিন কুরান। কেননা তখনো টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি জিম্বাবুয়ে। ফলে টেস্ট ক্রিকেটটা খেলা হয়নি কুরানের। পরে জিম্বাবুয়েকে বিদায় জানিয়ে কাউন্টি ক্রিকেটেই মনোযোগ দেন তিনি। জিম্বাবুয়ের হয়ে যেই ১১ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন সেখানে তাঁর ঝুলিতে আছে ২৮৭ রান ও ৯ উইকেট।

১৯৯৮ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর কোচিং পেশায় মনোযোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে জিম্বাবুয়ের সহকারী কোচ হিসেবে সেই যাত্রা শুরু হয়। এরপর নামিবিয়ার হেড কোচের দায়িত্ব নেন। ২০০৫ সালে আবার তিনি জিম্বাবুয়ের হেড কোচ হিসেবে ফিরে আসেন।

তবে, তাঁর সময়ে ২০০৭ সালে বাজে একটি বিশ্বকাপ পাড় করে জিম্বাবুয়ে। এরপর আবার জিম্বাবুয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হন তিনি। ২০১০ সালে তাঁর কোচিং এই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে জিম্বাবুয়ে।

২০১২ সালে জিম্বাবুয়ের একটি ঘরোয়া ক্রিকেট দলের হেড কোচ ছিলেন তিনি। সেই সময়েই জগিং করতে গিয়ে কলাপ্সড হয়ে হঠাত মৃত্যবরণ করেন এই ক্রিকেটার। ফলে ৫৩ বছর বয়সে যথেষ্ট ফিট থাকার পরেও জিম্বাবুয়েতে নিজের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে তাঁর ক্রিকেট পরম্পয়ায় এখনো তিনি বেঁচে আছেন তাঁর ছেলেদের মাঝে।

স্যাম ও টম কারান

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link