More

Social Media

Light
Dark

স্যুইয়ের বিষে বাবার স্বপ্নপূরণ

পেস বোলার তো মোহাম্মদ শামির হবারই ছিল। বীজটা যে অনেক আগেই বপন করেছিলেন বাবা তৌসিফ আলী। উত্তর প্রদেশের ক্রিকেটীয় রাজনীতি তাঁকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল অল্প বয়সেই। তবে শামি ও তাঁর বাবা থেমে থাকেননি। কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছিলেন বল হাতে ঝড় তুলবেন বলে। যার রিভার্স স্যুইং পরে যখন টাল-মাটাল হয়েছে বিশ্বের বাঘা বাঘ ব্যাটসম্যানরা তখন উল্লাসটা উত্তর প্রদেশেও হয়েছিল নিশ্চই।

উত্তর প্রদেশের ছোট্ট শহর আম্রোহা, সেখানেই ১৯৯০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন মোহম্মদ শামি। শামির বাবাও ছোট বেলায় পেস বোলার হতে চাইতেন। বয়সভিত্তিক দলের হয়েও খেলেছিলেন কিছুদূর। পরে পরিবারের দায়িত্ব সামলাতে কৃষি কাজকেই বেঁছে নিয়েছিলেন পেশা হিসেবে। তবে কৃষক তৌসিফ আলি তাঁর ছেলেদের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে চেয়েছিলেন নিজের স্বপ্ন।

শামিরা ছিলেন চার ভাই ও এক বোন। তাঁর বাকি তিন ভাইও হতে চেয়েছিলেন পেস বোলার। তবে বাবার স্বপ্নটা শেষ পর্যন্ত পূরণ করেছিলেন মোহম্মদ শামিই। ১৪ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে প্রথম ক্রিকেট শিখতে যান। সেখানে স্থানীয় কোচ বদরুদ্দীন সিদ্দীকি তাঁকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। টানা এক বছর নিবিড় প্রশিক্ষণের পর অনূর্ধ্ব ১৯ ট্রায়ালের জন্য শামিকে নিয়ে যান কোচ সিদ্দিকী।

ads

ট্রায়ালে দারুণ বল করলেও সেবার শামিকে বাছাই করা হয়না। তাঁরা শামিকে পরের বছর আবার নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তবে কোচ সিদ্দীকি সেই সময় একটা বছর নষ্ট করতে চাননি। তিনি শামি ও তাঁর বাবাকে পরামর্শদেন কলকাতা চলে যাওয়ার জন্য। এবার বাবার হাত ধরে ২০০৫ সালে কলকাতায় ক্রিকেট খেলতে এলেন মোহম্মদ শামি। কলকাতার একটি ক্লাবের হয়ে যাত্রাটা শুরু হয়। পরে ২০১০ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আসামের হয়ে অভিষিক্ত হন শামি।

প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে খেলা শুরু করার পরই অনেকের নজড়ে চলে আসেন তিনি। ২০১২ সালে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে ডাক পান। এরপর আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০১৩ সালের জানিয়ারি মাসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার জন্য ভারত জাতীয় দলে ডাকা হয় তাঁকে। ভারত দলে যখন উযোগ পান তখন তাঁর ঝুলিতে মাত্র ১৫ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও ১৫ টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। এই অল্প সময়েই নিজেকে চিনিয়েছিলেন শামি এবং সেই চেনা যে ভুল হয়নি তা তো এখন গোটা দুনিয়া জানে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ৯ ওভার বল করে দিয়েছিলেন মাত্র ২৩ রান। সেই ম্যাচে চারটি মেইডেন ওভার করেছিলেন শামি, সাথে ১ টি উইকেটও ছিল। টেস্টে শামির অভিষেকটা আরো রঙিন। ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৭১ রান দিয়েই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ রান দিয়েই ৫ উইকেট। নিজের অভিষেক ম্যাচেই শামির  ৯ উইকেট নেয়া দেখে সবাই যতটা না অবাক হয়েছিল, তারচেয়ে অবাক করেছিল তাঁর রিভার্স স্যুইং করানোর ক্ষমতা।

নতুন ও পুরান দুই বলেই শামির রিভার্স স্যুইং খেলতে নাকানি চুবানি খেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতও আশায় বুক বেঁধেছিল তাঁদের রিভার্স স্যুইং স্পেশালিস্টকে পেয়ে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন শামি। ওই আসরে মাত্র ১৭.২৯ গড়ে নিয়েছিলেন ১৭ টি উইকেট। তাঁর ইকোনমি রেট ছিল মাত্র ৪.৮১। সেবছর আইসিসির বিশ্ব একাদশেও জায়গা করে নিয়েছিলেন এই পেসার। ২০১৯ বিশ্বকাপেও ভারতের চতুর্থ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন।

এখন অবধি ভারতের হয়ে ৭৯ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে শামির ঝুলিতে আছে ১৪৮ উইকেট। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৯ বার চার উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। এই ফরম্যাটে তাঁর বোলিং গড় ও মাত্র ২৫.৬২। যদিও ভারত তাঁকে এখন টেস্ট ক্রিকেটেই বেশি ব্যবহার করে। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি আরো বেশি দুরন্তও বটে।

ভারতের হয়ে এখন অবধি সাদা পোশাকে ৫৪ টি ম্যাচ খেলেছেন। সেখানে ২৭.৫৬ গড়ে এই পেসারের ঝুলিতে আছে ১৯৫ টেস্ট উইকেট। টেস্টে ৫ বার পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে। বিশেষ করে উপমহাদেশে অপ্রতিরুদ্ধ এই পেসার। ভারতে ১৬ টি টেস্ট খেলে মাত্র ২১.০৮ গড়ে নিয়েছেন ৬২ টি উইকেট। এছাড়া উপমহাদেশে ২০.৬১ গড়ে নিয়েছেন ৭২ উইকেট।

এই পেসারের ব্যক্তিগত জীবনের কালিমাও আছে। তাঁর স্ত্রী ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মামলাও করেছিলেন। তবে ব্যক্তিগত গত জীবনের দাগ পড়তে দেননি মাঠে। এখনো বাইশ গজে বল হাতে পেলে তিনি স্যুইং করাতেই বেশি মনোযোগী। যেমনটা ১৪ বছরের শামি উত্তর প্রদেশের একটা ছোট্ট শহরে করেছিলেন, যেমনটা একটু বড় হয়ে কলকাতার হয়ে করেছিলেন কিংবা অভিষেক ম্যাচেই যেমনটা ইডেন গার্ডেন্সে করেছিলেন। হয়তো বাবা তৌসিফ আলীর স্বপ্ন আরো বড় এবং সেই স্বপ্নের পিছনেই শামির ছুটে চলা।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link