More

Social Media

Light
Dark

পাঁচ ‘হাঁস’ নিয়ে হাঁসফাঁস

গ্লেন ম্যাকগ্রার ডেলিভারিটি ছিল অফ স্টাম্পের একটু বাইরে। আগারকার পা বাড়িয়ে ছেড়ে দিলেন। বল গেল অ্যাডাম গিলক্রিস্টের গ্লাভসে। সিডনির গ্যালারিতে সে কী উল্লাস!

স্রেফ একটি বল ছেড়ে দিয়ে এমন আলোড়ন আর কেউ কী তুলতে পেরেছে! ধারাভাষ্যকক্ষে বিল লরি হেসেই বাঁচেন না! কোনো রকমে বললেন, ‘ওয়েল ডান।’ পাশ থেকে টনি গ্রেগের হাসিমাখা কণ্ঠের উচ্চারণ, ‘ওয়েল লেফট, ভেরি ওয়েল লেফট!’

পুরো চিত্রটা বুঝতে হলে যেতে হবে আরেকটু পেছনে। সেটি ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর। সিরিজের প্রথম টেস্ট অ্যাডিলেইডে। প্রথম ইনিংসে ১৯ রান করেছিলেন আগারকার। দ্বিতীয় ইনিংস থেকেই শুরু তার দুঃস্বপ্ন যাত্রার। দীর্ঘ ও বিব্রতকর যাত্রা!

ads

দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম বলেই আউট। ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ফুল লেংথ বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে তুলে দিলেন পয়েন্টে স্টিভ ওয়াহর হাতে।

পরের টেস্ট মেলবোর্নে। এবার আগারকার প্রথম বলে সামনে পেলেন অভিষিক্ত ব্রেট লিকে। ১৪৯ কিমি গতির ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কার। এলবিডব্লিউ। দ্বিতীয় ইনিংস। এবার আগারকার প্রথম বলে পেলেন মার্ক ওয়াহকে। কিছুটা স্বস্তি? অতি নিরীহ একটি ডেলিভারি, শর্ট ও অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। টার্ন নেই একটুও। আগারকার সেটি তুলে দিলেন পয়েন্ট গ্রেগ ব্লিউয়েটের হাতে। হ্যাটট্রিক গোল্ডেন ডাক!

পরের টেস্ট সিডনিতে। এবার প্রথম বলে সামনে পেলে আবার ব্রেট লিকে। আগারকারের মনের অবস্থা যেন ফুটে উঠল মুখেও। চুইঙ্গাম চিবুচ্ছিলেন বটে, কিন্তু চোখে-মুখে আতঙ্ক।

এবার ১৪৭ কিমির ফুল লেংথ বল। আগারকার ডিফেন্স করেছিলেন বটে। তবে একটু আলগা হাতে, একটু লেট আর ব্যাট একটু কার্ভ করে। দ্বিতীয় স্লিপে মার্ক ওয়াহ, এসব ক্যাচ চোখ বন্ধ করেই তালুবন্দী করেন। টানা চার ইনিংসে ডাক – টান চারটি গোল্ডেন ডাক!

টানা চার ইনিংসে প্রথম বলে আউট হওয়ার পর শুরুতে উল্লেখ করা সেই ঐতিহাসিক ‘লিভ’। ব্যাট হাতে যখন মাঠে নামছিলেন, টনি গ্রেগ ধারাভাষ্যে বলছিলেন, ‘স্পেয়ার আ থট ফর দিস ব্লোক, অ্যাজিত অ্যাগারকার … ফোর ফার্স্ট বলারস ইন আ রো… হি ইজ কামিং আউট দেয়ার অ্যাবসলিউটলি ওয়াইড আইড, লুকিং ডাউন দা ব্যারেল অ্যাট ফাইভ ইন আ রো…’

এবার প্রথম বল টিকতে পারলেন। তালির জোয়ার বইল। ব্যস, আগারকারের বীরত্ব শেষ ওখানেই! দ্বিতীয় বলটিই ম্যাকগ্রার বিখ্যাত ডেলিভারি, অফ স্টাম্প ঘেষা ও ছোট সুইং। ভালো ব্যাটসম্যানদের জন্যও খুব ভালো ডেলিভারি। আগারকার হলেন কট বাহাইন্ড, ২ বলে ০!

টানা পাঁচ গোল্ডেন ডাক না হলেও টানা পাঁচ ডাক!

সিরিজ শেষ হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। পরের ইনিংসটি খেললেন মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ৮ চারে ৪২ বলে করেছিলেন অপরাজিত ৪১!

তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ‘হাঁস’ নিয়ে হাঁসফাঁস শেষ নয় ওখানেই! পরের মাসেই অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল ভারত সফরে। মুম্বাইয়ে প্রথম টেস্ট। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, আগারকার আবার জোড়া শূন্য!

এবার অবশ্য গোল্ডেন ডাক নয়। প্রথম ইনিংসে ১২ বলে শূন্য, শেন ওয়ার্নের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে ফিরতি ক্যাচ। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ বলে শূন্য। সেই মার্ক ওয়াহকে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড।

সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা ৭ ইনিংসে শূন্য।

অথচ এই ৭ শূন্যের মাত্র কয়েক দিন আগেই ভারতের হয়ে দ্রুততম ওয়ানডে ফিফটির রেকর্ড গড়েছিলেন আগারকার। ২১ বলে ফিফটির সেই রেকর্ড টিকে আছে এখনও।

৭ শূন্যের পরের বছরই আগারকার লর্ডসের ব্যাটিং অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছেন ১০৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। যে অনার্স বোর্ডে নাম তুলতে পারেননি ব্রায়ান লারা, শচিন টেন্ডুলকার, ক্লাইভ লয়েড, মাইক গ্যাটিং, মাইক আথারটন, জ্যাক ক্যালিস, রিকি পন্টিং, ভিভিএস লক্ষন, অরবিন্দ ডি সিলভা, ইয়ান চ্যাপেল, গ্রাহাম থর্প, ইউনিস খান, জহির আব্বাস, সেলিম মালিক, অ্যাডাম গিলক্রিস্টরা।

ক্রিকেট এমনই বিচিত্র!

জানিয়ে রাখা ‍উচিৎ, টেস্টে টানা ৫ শূন্যের বিশ্বরেকর্ড আগারকারের সঙ্গে যৌথভাবে বব হল্যান্ড ও মোহাম্মদ আসিফের। তবে হল্যান্ড ও আসিফের গোল্ডেন ডাক ছিল কেবল একটি করে।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link