More

Social Media

Light
Dark

অথচ, ছিলেন না তিনি দৃশ্যপটেই!

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্ট সিরিজে তাঁর হয়তো খেলারই কথা ছিল না। নিয়মিত ওপেনারদের ইনজুরির কারণে লর্ডসে পুরানো এক হিসাব মেটানোর সুযোগ পেলেন। হিসাবই তো! যে হিসাব মেটানো যেত শুধু ওই অনার্স বোর্ডে নিজের নামটা খোদাই করে। এছাড়া ভারতের টপ অর্ডার গত কয়েকবছর ধরে যে গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে, সেটি মেটানোর দায়িত্বও নিজের কাঁধেই তুলেন নিলেন ভারতের ক্রিকেটের এক নিভৃত চরিত্র লোকেশ রাহুল।

লর্ডসে এর আগেও একবার খেলেছিলেন রাহুল। ২০১৮ সালের সেই টেস্টে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। দুই ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৮ ও ১০ রান। সেই হিসাব মেটালেন লর্ডসে নিজের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি করে। অনার্স বোর্ডে নিজের নামটা উঠিয়েই অতীতের সেই ব্যর্থতার দায় মেটালেন। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্যের ছাপটাও আরেকবার রাখলেন। ইংল্যান্ডে একাধিক সেঞ্চুরি করা গুটিকয়েক ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সাথে লেখা হয়ে গেল তাঁর নাম।

যদিও এই সিরিজে তাঁর একাদশে জায়গা পাওয়াটা নির্ভর করছিল অনেক যদি কিন্তুর ওপর। নিয়মিত ওপেনার রোহিত শর্মার সাথে ইনিংস শুরু করার কথা ছিল শুভমান গিলের। তবে ইনজুরিতে পড়ে সিরিজ থেকে ছিটকে যান তিনি। এরপর আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালও নেটে আঘাত পান। এতকিছুর পরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে জায়গা হয় লোকেশ রাহুলের।

ads

প্রথম টেস্টেও নিজের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছিলেন। ২১৪ বলের লড়াকু সেই ইনিংস থেকে এসেছিল ৮৪ রান। ভারতের অন্য ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলেও তিনি ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন। তবে সেঞ্চুরি না করতে পারার আক্ষেপ নিশ্চই ছিল। দ্বিতীয় টেস্টে সেই আক্ষেপ মেটালেন লর্ডসে সেঞ্চুরি করে। ভারতের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এশিয়ার বাইরে টেস্টের প্রথম দিনেই সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করলেন। এর আগে ১৯৮৯ সালে নভজ্যোৎ সিং সিধু এই কীর্তি করেছিলেন।

এছাড়া ভারতের ওপেনিং জুটির অনেক গ্লানিও মুছেছেন তিনি। আরেক ওপেনার রোহিত শর্মার সাথে মিলে করেছেন ১২৬ রানের জুটি। এশিয়ার বাইরে গত ১১ বছরেও ভারতের ওপেনিং জুটি থেকে কোন শতরানের জুটি আসেনি। ২০১০ সালে সর্বশেষ গম্ভীর ও শেবাগ এশিয়ার বাইরের শতরানের জুটি করেছিলেন। সবমিলিয়ে রাহুলের ২৪৮ বলে ১২৭ রানের অপরাজিত এই ইনিংসে ভর করে প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রান সংগ্রহ করেছে ভারত।

এছাড়া ভারতের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখালেন রাহুল। এর আগের ভারতের দুইজন ব্যাটসম্যান লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে লর্ডসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন ভারতের বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রী। এর আগে ভিনু মানকড় লর্ডসে ১৮৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। আজ ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসে ডাবল সেঞ্চুরি করার সুযোগ আছে এই ব্যাটসম্যানের হাতে।

এমনকি বিদেশের মাটিতে তিনিই সর্বশেষ ওপেনার ছিলেন যিনি ভারতের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৮ সালে দ্য ওভালে ১৪৯ রানের বিশাল ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এরপর দেশের বাইরে ভারতের আর কোন ওপেনার টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পায়নি। তিন বছর পর আবার সেই রাহুলই ভারতের হয়ে সেঞ্চুরি করলের লর্ডসের মাটিতে।

তবুও ভারতের ক্রিকেটে লোকেশ রাহুল এক নিভৃত চরিত্র। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অল্প সময়েই করে ফেলেছেন মোট ১৩ টি সেঞ্চুরি। রোহিতের পর তিনিই ভারতের একমাত্র ব্যাটসম্যান যার তিন ফরম্যাটেই একাধিক সেঞ্চুরি আছে। এছাড়া বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে টানা ৭ টি হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে এই ব্যাটসম্যানের। যার ৫ টিই এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তবুও ভারতের টেস্ট দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি এই ওপেনার।

ভারতের হয়ে নিয়মিত পারফর্ম করলেও তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা সেভাবে হয় না। এমনকি রঙিন পোষাকে ভারতের সেরা ওপেনার হতে পারেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অন্তত ১৫০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় শুধু বাবর আজম ও বিরাট কোহলির। এই দুজনই আবার রাহুলের চেয়ে স্ট্রাইকরেটে পিছিয়ে। তাও রঙিন পোষাকেও তিনি নিয়মিত সুযোগ পান না।

তবে ভারতের ওপেনিং জুটি যখনই সংকটে পড়ে তখনই ডাক পড়ে এই আনসাং হিরোর। তবুও নিজের সেরাটা দিয়ে ক্রিকেটটা খেলে যান। হয়তো ভারতের ক্রিকেটের গ্ল্যামারাস আলোচনায় তিনি থাকেন না তবে তাঁর ব্যাট তাঁর হয়ে কথা বলে। এবারও হয়তো অন্য ওপেনাররা ফিরে এসে ভারত আবার রাহুলকে ভুলে যাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে তাঁকে লোকেশের কীই বা আসে যায়। তিনি যে জার্সির পিছনের সেই নামটার জন্যই খেলে যেতে চান।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link