More

Social Media

Light
Dark

পার্থক্য স্রেফ মানসিকতায়

অস্ট্রেলিয়ায় একেকটা রাজ্যে পাঁচটা কোভিড ১৯ কেস পাওয়া গেলে পুরা রাজ্যে কারফিউ দিয়ে দেয়! ওদের রেসিজম, পাওয়ার খাটানো অবশ্যই আছে। কিন্তু একইসাথে ওরা অলমোস্ট কোভিড ফ্রি কান্ট্রি ছিল এতদিন, ইন্ডিয়ান ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট গিয়ে প্রব্লেম করেছে, ওরা নিজেদের নাগরিকদেরই বাইরে থাকলে ঢুকতে দিচ্ছে না, এমনকি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) যেসব প্লেয়ার খেলে গেসে তাঁদের শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপে আলাদা কোয়ারেইন্টাইন করে তারপর দেশে ঢুকতে দিয়েছে।

নিউজিল্যান্ডে আমাদের ক্রিকেটাররা একদম মাস্ট ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনেই ছিল। আমরা না চাইলেও, আমাদের দম বন্ধ লাগলেও নিউজিল্যান্ড সরকার বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের সেটা করিয়েছে। এবং সেটা সবার জন্যেই সত্যি। এজন্যেই নিউজিল্যান্ডে গতকাল সারাদিনে একটা কোভিড কেসও পাওয়া যায় নাই। পরশুদিন চারটা কেস পাওয়া গিয়েছিল।

নিউজিল্যান্ডে কোভিডে মানুষ মারা যায় না অনেকদিন হয়েছে! অস্ট্রেলিয়াতে গত এক সপ্তাহ কেইস কিছুটা বাড়লেও গত ৩ দিনে ১ জন মানুষ মারা গেসে। সেটাকেই তাঁরা অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে! তাঁদের কাছে ১ জন মানুষের দাম অনেক বেশি।

ads

ভিক্টোরিয়া রাজ্যে (মেলবোর্নে) গত ৭ দিনের গড় কেস হলো ৬ জন! তাতেই তাঁরা বাসার ২০ কিলোমিটারের দূরে কেউ যাইতে পারবে না, গ্রোসারি শপিং ছাড়া কেউ বের হতে পারবে না, দরকার ছাড়া কেউ বের হইলে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করছে!

প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পৃথিবী থেকে চাইলেই বিচ্ছিন্ন হতে পারে এমন একটা মহাদেশ। আমার বেশ কয়েকজন আত্মীয় অস্ট্রেলিয়া থাকেন। তো তাঁদের অবস্থা জেনে জিজ্ঞেস করছিলাম যে আমরাও যেতে পারছি না, তোমরাও বের হতে পারছো না। এটা কেমন? তোমাদের এতো কড়াকড়ি কেন? উত্তর পেলাম, ‘আমেরিকার এতো বাজে অবস্থা তো এইজন্যই।’

আমি একটা ডিসকাশনে বলছিলাম যে, ‘এভাবে করে ওরা কতদিন থাকবে? কাউকে যাইতে দেয় না, আসতেও দেয় না! এভাবে করে ওদের দেশের অর্থনীতি চলবে?’ উত্তর পেলাম যে, ‘ওরা বাইরের পৃথিবীর উপর খুব ডিপেন্ডেন্টও না। নিজেদের যা সম্পদ আছে সেটাকে নিজেরা ব্যবহার করেই তাঁরা সারাজীবন চলতে পারবে। তাঁদের কাছে একটা জীবনের দাম অনেক বেশি!’

আমি বললাম, ‘তারপরেও তোমরা বেশি বেশি! এর কোন মানে নাই!’ উত্তর পেলাম, ‘বেশি বেশি হলেও রিস্ক ফ্রি থাকা ভালো!’

বুঝলাম, আমার ‘ধুরো কী আর হবে, এমনে কী থাকা যায় নাকি!’ এর মানসিকতা আর ওদের রিস্ক ফ্রি মানসিকতার মধ্যে অনেক তফাৎ! ওই তর্ক আর চালাইতে পারি নাই!

আমাদের বিভিন্ন চ্যানেলের রিপোর্ট দেখছিলাম। জিম্বাবুয়েতে অনেক মিডিয়া থেকেই সাংবাদিক গিয়েছিলেন, তাঁরা সেখানে বায়োবাবলের মধ্যেও ছিলেন না, বাংলাদেশে এসে দেখলাম তাঁরা দিব্যি খোলা মাঠে রিপোর্ট করে বেড়াচ্ছেন! উনারা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের সাংবাদিক হলে ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে বসে থাকতে হতো। এটাই আসলে দুই দেশের পার্থক্য!

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ডমিনেটিং মানসিকতা স্বীকার করে নিচ্ছি। ওদের অনেক সমস্যা আছে। অনেক কিছুতে অনেক শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে সেগুলো অন্যায়ও! তবে ইন্ডিয়াতে আইপিএল খেলতে গিয়ে একবার বিরূপ অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়ে, এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এখন তাঁদের কেস বেড়ে যাওয়ায় সেটা রিস্ক ফ্রি শর্ত বলা, বা তাঁদের হেলথ ডিপার্টমেন্টের শর্ত বলাটা অত্যুক্তি হবে না!

বাস্তবতা এবং কঠিন সত্য হচ্ছে, আমরা ওদের শর্তগুলো নিয়ে যেরকম ট্রল করে যাচ্ছি, সেই মানসিকতার কারণেই আমাদের গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার অফিশিয়াল কেস পাওয়া যায় (আনঅফিশিয়ালি সেটাকে আমরা অনেক বেশি বলেই জানি), এখন গড়ে ২০০-২৫০ মারাও যাচ্ছেন অফিশিয়ালি, আর অস্ট্রেলিয়াতে ৩ দিনে ১ জন মারা যায়!

উন্নত দেশের সাথে আমাদের পার্থক্যটা মনে হয় ঠিক এ জায়গাটাতেই। মানসিকতার পার্থক্যের কারণে হয়তো আমরা সেটা ডিজার্ভও করি না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link