More

Social Media

Light
Dark

স্বপ্নগুলো স্বপ্ন হয়েই রয়

আম্বাতি রাইডুর ক্রিকেট ক্যারিয়ার যেন কোনো সিনেমার চিত্রনাট্য।

কখনো বেজেছে উত্থানের আনন্দ ধ্বনি আবার কখনো পতনের করুণ সুর। ভারতের ক্রিকেটের বড় স্বপ্ন হয়ে পদার্পন করা রাইডু হয়ে থাকলেন শুধুই ক্ষুদ্র এক অংশ। তবুও ক্রিকেট জীবনের নানা সময়ে ফিরে আসার তীব্র লড়াই করেছেন। তবে শেষ বেলায় হয়তো আর পারেননি। কোন এক অভিমানের ঝুলি নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি।

অন্ধপ্রদেশের ছোট্ট একটি শহর গুনটুরের জন্ম গ্রহণ করেন আম্বাতি রাইডু। সেখানে তাঁর ছোটবেলার কোচ বিজয় পাল এখনো মনে করতে পারেন বাবার স্কুটারের পিছনে ঘুমাতে ঘুমাতে ছয়-সাত বছরের একটা বাচ্চা ছেলে ক্রিকেট শিখতে আসতো।

ads

সেই ছোট বয়সেই ছেলেকে ক্রিকেট শিখানোর দায়িত্বটা নিয়েছিলেন রাইডুর বাবা সাম্বশিবা রাও। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে ছেলে স্কুটারে করে মাঠে নামিয়ে দিয়ে যেতেন। এমনকি ওই বয়সেও রাইডুর প্রতিটি ম্যাচ মাঠে দাঁড়িয়ে দেখতেন এই ভদ্রলোক।

খুব দ্রুতই বাবার স্বপ্ন নিজের মধ্যেও ধারণ করেছিলেন রাইডু। বাবা-ছেলের স্বপ্ন যখন এক হয় তখন আর থামায় কে! মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ২০০২ সালে ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের নাম লিখান রাইডু। হায়দ্রাবাদের হয়ে নিজের প্রথম রঞ্জি ট্রফির আসরেই রানের ফোয়ারা খুলে বসেন এই ব্যাটসম্যান।

২০০২-০৩ মৌসুমের রঞ্জি ট্রফিতে রাইডুর ব্যাট থেকে এসেছিল মোট ৬৯৮ রান। অন্ধপ্রদেশের বিপক্ষে ম্যাচে এক ইনিংসে সেঞ্চুরি ও আরেক ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করে গোটা ভারতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ১৬ বছর বয়সের ছোট্ট একটা ছেলের ব্যাটিং দেখতে সেদিন লম্বা লাইন পড়েছিল। হয়তো সেই ভীড়েও কোথাও নিজের ছেলের খেলা দেখেছিলেন রাইডুর বাবা।

এরপর খুব দ্রুতই পাল্টে যেতে থাকেই রাইডুর জীবন। সে বছরের শেষের দিকেই ডাক পান ভারতের অনুর্ধব-১৯ দলে। সেই দলের হয়ে ইংল্যান্ড খেলতে গিয়ে তিন ম্যাচে করেন ২৯১ রান। তখন থেকে ভারতের গণমাধ্যম কিংবা ক্রিকেট বোর্ড রাইডুকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

ধারণা করা হয় ভারতের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন রাইডুই। এরপর ২০০৪ সালে ভারত তাঁর নেতৃত্বে অনুর্ধব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেললে সেই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। তখন শুধুই অপেক্ষা ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাইডুর পদার্পনের।

কিন্তু তখনই হঠাত পথ হারিয়ে ফিললেন রাইডু। সেই বছর রঞ্জি ট্রফিতে সাত ম্যাচে খেলে মাত্র ১১.৯৩ গড়ে রান করেছিলেন। এরপর লম্বা সময় রানের দেখা পাননি রাইডু। যেনো একদম জাতীয় দলের চৌকাঠে পাঁ দিয়েও আবার ফিরে এসেন আম্বাতি রাইডু।

এর মধ্যেই ২০০৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে ভয়ংকর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি। নাম লিখালেন ভারতের নিষিদ্ধ আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল)। সেখানে প্রায় দুই বছর হায়দ্রাবাদ হিরোজের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। তবে ২০০৯ সালে আবার এই লিগ ছেড়ে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসেন তিনি। এবার তিনি মনোযোগ দেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নিজের নাম লেখানোর জন্য।

সেই সময় আবার নিজেকে ফিরে পান তিনি। ২০০৯-১০ সালের রঞ্জি ট্রফিতে ৪৩ গড়ে রান করেন তিনি। এছাড়া বিজয় হাজারে ট্রফিতেও তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৫০ এর উপরে। ফলে ২০১০ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপরের বছর রঞ্জি ট্রফিতে বারোডার হয়ে ৫৬.৬০ গড়ে করেছিলেন ৫৬৬ রান।

২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের পর রান করে যাওয়ার পুরষ্কার হিসেবে ভারতের ‘এ’ দলে ডাক পান তিনি। তারপর সে বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতের ৩০ জনের স্কোয়াডেও নাম আসে রাইডুর। তবে ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে জায়গা পাননি তিনি।

অবশেষে ২০১৩ সালে ধোনির ইনজুরির কারনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্য ভারত দলে ডাক পান রাইডু। তবে সেই সিরিজে কোনো ম্যাচেই মাঠে নামানো হয়নি তাঁকে। তবে সেবছরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন রাইডু। যিনি কিনা আরো এগারো বছর আগে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ভারতের ক্রিকেটে আশার প্রদীপ হয়ে এসেছিলেন।

তবে নিজের অভিষেক ম্যাচেই অপরাজিত ৬৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই ব্যাটসম্যান। ২০১৪-১৫ সালে ভারতের হয়ে মোট ২৭ টি ওয়ানডে মাচ খেলেছিলেন তিনি। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপ দলে থেকেও কোন ম্যাচ পাননি তিনি। বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও রান করতে পারেননি। এরপর আবার আস্তে আস্তে কখন যেনো হারিয়ে গেলেন তিনি।

তবে রাইডু হার মানেননি। ২০১৮ সালে আবার ফিরে এসেছিলেন ভারতের জাতীয় দলে। সেবছর এশিয়া কাপে করেছিলেন দুইটি হাফ সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই বছর ৯০ রানের একটি ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলেছিলেন। এবার যেনো অবশেষে চার নম্বর পজিশনে নিজের জায়গাটা পাকা করতে পারলেন রাইডু। ভারত দলেও জন্য এক সস্তির হাওয়া বয়ে গেলো রাইডুকে সেই দায়িত্ব দিয়ে।

২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার জন্য নিজের জায়গা তখন মোটামুটি পাকা করে ফেলেছেন রাইডু। তবে বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে আবার খেই হারিয়ে ফেললেন। ফলে শেষ মুহুর্তে আবারো বিশ্বকাপ দলে জায়গা হলো না এই ব্যাটসম্যানের। তবে রাইডুর অভিমানের ঝুলি অনেক বড় ছিল নিশ্চই । বিশ্বকাপ দলে জায়গা করতে না পেরে সে বছরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন তিনি।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো রান করে যাচ্ছেন তিনি। চেন্নাইয়ের হয়েও এবছর আইপিএলে দারুণ খেলছিলেন। শেষ ম্যাচে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস। কিন্তু তাতে কী! রাইডুর যে একটা বিশ্বকাপ খেলা হলো না। ভারতের ক্রিকেটের আশার বাতি হয়ে যিনি এসেছিলেন তিনি তো জ্বলে উঠার আগেই নিভে গেলেন। ভারত, রাইডু কিংবা রাইডুর বাবা কারো স্বপ্নই যে পূরণ হল না।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link