More

Social Media

Light
Dark

মিরাবাই ও মরীচিকার অলিম্পিক

ভারতের মিরাবাই চানু অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে রৌপ্য পদক জিতেছেন। এই ঘটনায় আমাদের ক্রীড়া সমালোচকদের আবার হা হুতাশ শুরু হয়ে গেছে। আমরা কোথায়? আমাদের কোনো উন্নতি নেই কেন? আমরা কবে অলিম্পিকে কোনো পদক জিতব?

প্রতিবার অলিম্পিক আসলে, কমনওয়েলথ গেমস আসলে আমরা হা হুতাশ করি আমাদের জিমন্যাস্টিকস এর কোনো ভবিষ্যত নেই। আমরা কি করছি, কেন আমাদের পাশের দেশ ভারতের মতও বড় দল পাঠানোর সামর্থ্য হয় না। আসুন একটু আত্মসমালোচনা করি।

আমাদের পরিবার থেকেই কি খেলাধুলায় আগ্রহী করার কোনো ইচ্ছা দেখা যায়? অন্যান্য দেশে যেখানে খেলাধুলাকে বাচ্চাদের বড় হওয়ার একটি বড় অঙ্গ হিসেবে দেখা হয়, সেখানে আমরা আমাদের সন্তানদের সারাদিন বইএর সামনে দেখলেই খুশি থাকি। পড়াশুনা করলেই গাড়িঘোড়া চড়বে সন্তান। আর টিভিতে ক্রিকেট দেখলেই চলবে। শুরুও এই, শেষও এই।

ads

আমাদের দেশে ক্রিকেট ফুটবলের পর আর কোন খেলার খবর আমরা রাখি? দেশের বর্তমান পোস্টার স্পোর্ট ক্রিকেটের মাধ্যমে দেশের নাম অনেকখানি উজ্জ্বল হলেও এখনো একটি ক্রিকেট একাডেমি অথবা প্রথম শ্রেণীর শক্ত কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি ক্রিকেট বোর্ড। ফুটবলে আমরা শুধু আশার বাণীই শুনতে পাই, আর কিছুদিন পর দুর্নীতির বিভিন্ন খবর জানতে পাই। এককালে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথের জন্যে মানুষ পাগল হলেও এখন কে এগুলার খবর রাখে? আর  হকি, কাবাডির তো নিয়মিত টুর্নামেন্টই নেই।

ক্রিকেট বাদে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সফলতা এসেছে কমনওয়েলথ গেমসে, ২০০২ থেকে কমনওয়েলথ এর প্রতি আসরেই কোনো না কোনো পদক শ্যুটিং জিতে এসেছে। কিন্তু এই শ্যুটিংয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও আমরা তেমন উল্লেখযোগ্য প্রতিভা উঠে আসতে দেখছি না। এখনো বৈশ্বিক মঞ্চে এক আব্দুল্লাহ হেল বাকি ই আমাদের আশা ভরসা। জিমনেস্টিকস, সাঁতার, বক্সিং, তায়কোয়ান্দো, ভারোত্তোলন এর হঠাৎ কিছু খবর পেপারে আসলেও তা একদম কোণায়ই কিছু লাইনের জন্যে জায়গা পায়। তাও এই খেলাগুলো টিকে আছে বিকেএসপি এর কল্যাণে। নাহলে এতদিকে কোন ভাগাড়ে গিয়ে যে পড়ত কে জানে!!!

এবার প্রথমবারের মত রোমান সানা তীরন্দাজ হিসেবে অলিম্পিকে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে গেছেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ভাল করছেন, এবং আর্চারি বোর্ড পুরো টিমকেই ভালভাবে পরিচর্যা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মাস পাঁচেক আগে এই সম্ভাবনাময় আর্চারির প্রস্তুতির মাঠকে প্রিমিয়ার লিগের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্তে নতুন গোজামিল তৈরী করে বাফুফে। সবখানেও আমাদের ক্রীড়া সম্পর্কিত সঠিক কাঠামোর অভাব পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এর সমাধান হয় না কেন? সবাই কি এই অবস্থাকেই জিইয়ে রাখতে আগ্রহী?

কাঠামো কি? যখন আপনার একটি চিন্তা তৈরী হয়ে যায়, আপনি একটি পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। এই পরিকল্পনায় আপনার কাজ করতে হবে তা আপনি জানেন, তাই তো একটি সঠিক কাঠামোর পরিচায়ক। এই সিস্টেম টাকে চালায় কারা? সঠিক মানুষ, সঠিক সংগঠক। সংগঠক হলেই হবে না, তাদের ইচ্ছাও থাকতে হবে। ইচ্ছা থাকলেও হবে না, সেটা বাস্তবায়নের জন্যে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হয়, সঠিক জায়গায় অ্যাডভোকেসি করে সঠিক ইনভেস্টমেন্ট আনতে হয়। তাই এমন মানুষকে দায়িত্বে আনা, যেন তাদের মাধ্যমেই খেলাটির সঠিক পথে আসার সম্ভাবনা আসে।

একটি খেলাকে টার্গেট করে ট্যালেন্টপুল থেকে প্রতিভা উঠিয়ে আনতে হয়, তাদের পরিচর্যা করতে হয়, ২০/৩০ বছরের সামনের পরিকল্পনাতে আটকে থাকতে হয়, প্রয়োজনে সেটাতে পরিবর্তন আনতে হয়, অবশ্যই তা ভাল ও ইতিবাচক পরিবর্তন। উল্টো কিছুদিন পরিচালনার পরেই সেই পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে দেওয়া নয়।

সেই সাথে সরকারকে এই খেলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়নে আগ্রহী করে তোলা যে কেন তারা এই খেলাতে অর্থায়ন করবেন, এই খেলা থেকে আগামী ২০বছর পরে কি আশা করা যেতে পারে। এইসব কাজ সংগঠকদের দায়িত্ব নিয়ে করতে হয়। যেকোনো সরকার বা মন্ত্রনালয়ের  খেলাপ্রতি মনোযোগ দেওয়ার আশা করাটাও উচিত নয়। তাই এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সংগঠকদের, এই সেই খেলার বোর্ডের। কিন্তু সেইসব তো শুধু কথায় দেখা যায়। কথার বুলির কিছুদিন পরে আর তাদেরও আওয়াজ থাকে না, আমরাও ভুলে যাই।

কোনো একটি টুর্নামেন্টে কোনো ইভেন্ট পদক জিতলে আমরা তাদের নিয়ে শত আলোচনা শুরু করি। এতে হয়ত তারাও মনে করে যে এবার হয়ত অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হবে। হয়ত আরো সহায়তা আসবে, পরিধি বাড়বে, বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আসলে আমাদের এইসব সফলতায় আলোচনাও করা উচিত নয়। কারণ দিন শেষে তাদেরই তো স্বপ্নভঙ্গ হবে। কত কত প্রতিভা পরবর্তীতে অভাবে পড়ে জীবিকায় নামতে বাধ্য হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

অনেক অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখনো জিমন্যাস্টিকস বা অন্যান্য ডিসিপ্লিনে আসে বিভিন্ন বাহিনীতে একটা পদ পাওয়ার জন্যে। দিন শেষে তারও তো নিজের ভবিষ্যত দেখতে হয়। কিছুদিন খেলাধুলার পর যদি একটা চাকরি নিশ্চিত করে দুবেলা খেতে পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কি? কিন্তু মনে যে আজীবনের এক হতাশা রয়ে যাবে, সে তো কাউকে বলা হবে না।

উসাইন বোল্ট তো দূরে থাক, আমরা কি মিলখা সিং ও পাব না?

লেখক পরিচিতি

খেলা দেখতে ভালবাসি, খেলা নিয়ে লিখতে ভালবাসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link