More

Social Media

Light
Dark

অন্ধ গলিতে হারানো রেইফার

ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রয়েছে এক সোনালি ইতিহাস।

দানবীয় সব পেসার, ভয়ডরহীন আভিজাত্যপূর্ণ ব্যাটিং এবং আগ্রাসী মনোভাব দিয়ে ক্যারিবীয়রা শাসন করেছে পুরো ক্রিকেট দুনিয়া। ফ্রাঙ্ক ওরেলের হাত ধরে উত্থানের পর ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসদের হাত ধরে ক্যারিবীয় ক্রিকেট পৌঁছেছিল সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরপরও এসেছেন ব্রায়ান লারাদের মত তারকা।

আর এত শত তারার ভীড়ে হারিয়ে গেছেন অনেকে। প্রতিভা এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পাননি পর্যাপ্ত সুযোগ। তেমন একজন হলেন ফ্লয়েড রেইফার, ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের পর রান করে গেলেও জাতীয় দলে যার ক্যারিয়ার থেমে গেছে মাত্র ছয় টেস্ট খেলেই।

ads

আটলান্টিকের দক্ষিণ পাড়ে ক্যারিবীয়ান এক দ্বীপ বার্বাডোস। বার্বাডোসের অলি গলিতে খেলেই বড় হয়েছেন জোয়েল গার্নার, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, কনরাড হান্ট, গ্যারি সোবার্স, ম্যালকম মার্শাল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটেরই গতিপথ বদলে দেয়া বিখ্যাত সেই থ্রি ডব্লিউ ক্লাইড ওয়ালকট, ফ্রাঙ্ক ওয়ারেল, এভারটন উইকস।

সেই বার্বাডোসের কোনো বালক ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন দেখবে সেটাই স্বাভাবিক। ১৯৭২ সালে জন্ম নেয়া রেইফারও তার ব্যাতিক্রম নন, ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন মেরুন ক্যারিবীয় জার্সি জড়ানো। এলাকায় ভালো খেলতে খেলতে সুযোগ পেয়ে যায় বিখ্যাত বার্বাডোস দলেও।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেললেও জাতীয় দলে ডাক পাচ্ছিলেন না রেইফার। পাবেনই বা কিভাবে, নব্বইয়ের সেই দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ব্যাট হাতে বিশ্ব শাসন করছেন রিচি রিচার্ডসন, ব্রায়ান লারা, জিমি অ্যাডামস, কার্ল হুপাররা।

অবশেষে ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ৭৬৫ রান করার পর ১৯৯৭ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে দলে ডাক পান তিনি। কিন্তু নিজের খেলা চারটি টেস্টেই হতাশ করেন তিনি, তিনবার সাজঘরে ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। চার টেস্টে করতে পারেন কেবল ৬৩ রান। একদিনের ক্রিকেটেও দেখাতে পারেননি প্রতিভার স্বাক্ষর, দুই ম্যাচে করেন সাকুল্যে ২৩ রান। ফলশ্রুতিতে চার টেস্ট আর দুই ওয়ানডেতেই ইতি ঘটে তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম অধ্যায়ের।

২০০৪ সালে তিনি স্কটল্যান্ডে চলে যান। সেখান স্কটিশ সলিটায়ার স্কোয়াডের হয়ে খেলেন তিন বছর। এরপর একপ্রকার প্রচারের বাইরেই চলে গিয়েছিলেন তিনি, তাকে হয়তো কেউ মনেই রাখতো না। কিন্তু অভাবনীয় এক কীর্তি মাধ্যমে আবারো নিজেকে জানান দেন তিনি।

২০০৮ সালে বার্বাডোসে ঘরোয়া ক্রিকেটের এক ম্যাচে এক ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকিয়ে পুনরায় শিরোনাম হন তিনি। যেদিন হাঁকিয়েছিলেন ছয় ছক্কা সেদিন ছিল আবার সোবার্সের ছয় ছক্কা মারার চল্লিশ বছর পূর্তি। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে আবারো রেইফার জানালেন তিনি তখনো জাতীয় দলে খেলার যোগ্য।

তাই বলে অধিনায়ক? না, এতটা যোগ্য তিনি কখনওই ছিলেন না।

আর জাতীয় দলে খেলা তো যেনতেন কথা নয়। কিন্তু রেইফারের সামনে সুযোগ এসে গেল, বোধহয় ভাগ্যবিধাতা নিজেই সৌভাগ্যের ডালি সাজিয়ে দিলেন রেইফারের জন্য। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের উইন্ডিজ সফরের ঠিক আগে বোর্ডের সাথে ঝামেলায় খেলতে অস্বীকৃতি জানালেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটাররা।

এই সুবাদে ৩৭ বছর বয়সে কেবল দলেই ডাক পেলেন না রেইফার, বনে গেলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। কিন্তু ভাগ্যবিধাতার দেয়া সেই সুযোগও দুহাত ভরে নিতে পারেননি রেইফার, বাংলাদেশের বিপক্ষে চার ইনিংসে করেন মোটে ৪৮ রান।

সবাই ভেবেছিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় এই যাত্রায় ওয়ানডেতে হয়তো কিছু করে দেখাবেন রেইফার, ঘরোয়াতে এই ফরম্যাটেই যে দারুণ খেলতেন তিনি। কিন্তু সেখানেও ৬ ম্যাচে করতে পারেন কেবল ৮৬ রান। ফলে ২০০৯ সালে জোহানেসবার্গে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটাই হয়ে আছে তার শেষ ম্যাচ।

অবশেষে ২০১৪ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান রেইফার। খেলা ছাড়ার আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩ শতক এবং ৪১ অর্ধশতকে তার সংগ্রহ ছিল ৭,৬৪০ রান। পারফরম্যান্স তাঁর যাই হোক – তারপরও ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে – কারণ, তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক।

খেলা ছাড়ার পর রেইফার জড়িয়ে পরেন ক্রিকেট কোচিং এবং রাজনীতির সঙ্গে। ২০২০ সালে স্থানীয় নির্বাচনে লড়েন ডেমোক্র‍্যাটিক লেবার পার্টির হয়ে। ২০১৯ সালে যুক্ত হন উইন্ডিজ কোচিং প্যানেলে, নির্বাচিত হন ব্যাটিং কোচ।

নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আক্ষেপ ছিল, হয়তো নিজের সেরা সময়ে পেতে পারতেন আরো কিছু সুযোগ। দু:খময় ক্যারিয়ার শেষে রেইফার হয়তো প্রশান্তি খুঁজবেন ভবিষ্যতের লারা, রিচার্ডসদের গড়ে তোলার মাধ্যমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link