More

Social Media

Light
Dark

ফাইনালে যখন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী

ফুটবলপ্রেমীদের চরম আকাঙ্খিত ম্যাচ হচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই। দুই দল প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হলেও উত্তাপ ছড়ায় সমর্থকদের মাঝে। এই ম্যাচের আমেজ, উত্তেজনা কিংবা সমর্থকদের মধ্যে রেষারেষি অতুলনীয় এক ব্যাপার।

সেখানে মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে এই দুই দলের লড়াই রীতিমতো আগুন ছড়াচ্ছে দর্শকদের। ফাইনালের আগে তাই আসুন স্মৃতিচারণ করি এই দুই দলের পূর্বের সব ফাইনালের স্মৃতি।

  • ১৯৩৭ কোপা আমেরিকা

১৯৩৭ সালের আমেরিকার ফাইনালে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় এই দুই দল। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতে দুই দেশের সমর্থকদের রেষারেষি সেই থেকে শুরু। আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত সেবারের কোপার ফরম্যাট ছিল এখনকার চাইতে ভিন্ন। ব্রাজিল সেবার খেলতে এসেছিল তাদের সেরা তারকা লিওনিদাসকে ছাড়াই। ছয় দলের প্রত্যেকেই একে অন্যের মুখোমুখি হবে, পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা দল জিতবে শিরোপা।

ads

দুই দলই প্রথম তিন ম্যাচ জিতলেও চতুর্থ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ৩-২ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে ব্রাজিল জিতে একই ব্যবধানে। শেষ ম্যাচে সমীকরণ দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতলে পয়েন্ট সমান হবে দুই দলের। অন্যদিকে ব্রাজিলকে যেকোনো মূল্যে হারা যাবে না। কিন্তু সেই ম্যাচে গার্সিয়ার একমাত্র গোলে আর্জেন্টিনা জিতে গেলে আয়োজন করা হয় ফাইনালের।

রিভার প্লেটের ঘরের মাঠ এস্তাদিও গাসোমেট্রোতে মুখোমুখি হয় দুদল। দুদলের সমর্থকদের মাঝে যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়ায় সেই ম্যাচ, প্রায় ৮০ হাজার দর্শক সেদিন মাঠে ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের খেলা ০-০ গোলে অমিমাংসিত থাকলে ৪০ মিনিট অতিরিক্ত খেলার সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। সেখানে বদলি নামা আর্জেন্টিনার তরুণ স্ট্রাইকার ভিসেন্তে মা মাতা জোড়া গোল করে স্বাগতিক সমর্থকদের উল্লাসে ভাসান। ব্রাজিল বিদায় নেয় মাথা নিচু করেই।

  • ২০০৪ কোপা আমেরিকা

প্রথমবার দুই দল ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৭০ বছর। অবশেষে ২০০৪ সালে পেরুতে অনুষ্ঠিত কোপার ফাইনালে দেখা হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের। দুইদলই নিজেদের গ্রুপে দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে পেরু এবং সেমিতে কলম্বিয়াকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা।

অন্যদিকে কোয়ার্টারে মেক্সিকোকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিলেও উরুগুয়ের বিপক্ষে টাইব্রেকারে কষ্টেসৃষ্টে জয় পায় ব্রাজিল। লিমায় মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দল। ম্যাচের ২০ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর মাইকন ফাউল করলে পেনাল্টি পায় আলবিসেলেস্তেরা। সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নিতে ভুল করেননি গঞ্জালেস। প্রথমার্ধের একদম অন্তিম মুহূর্তে দলকে সমতায় ফেরান লুইসাও।

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা এগোলেও গোলের দেখা পাচ্ছিলো না কোনো দলই। নির্ধারিত সময়ের একদম শেষ মিনিটে ডেলগাদো গোল করলে হতাশার কালো ছায়া নেমে আসে সেলেসাও শিবিরে। সবার ধরে নিয়েছিল এবারো জিতে যাবে আর্জেন্টিনাই কারণ সময় তখন প্রায় শেষ। কিন্তু এবার চমক দেখালেন আদ্রিয়ানো, যোগ করা সময়ে আচমকা এক গোল করে সমতা ফেরালেন ব্রাজিলকে।

পুরো আর্জেন্টিনা শিবির হতভম্ভ হয়ে পড়ে তার এই গোলে। গোল হজমের রেশ তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি টাইব্রেকারে, অ্যালেসান্দ্রিও এ গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ মিস করে বসেন নিজেদের প্রথম দুই পেনাল্টি। তাতেই বিজয়ের বরমাল্য ব্রাজিলের গলায়, ৪-২ গোলে হারিয়ে সেলেসাওরা জিতে নেয় তাদের সপ্তম কোপা আমেরিকার শিরোপা।

  • ২০০৭ কোপা আমেরিকা

ভেনেজুয়েলাতে অনুষ্ঠিত পরের কোপাতেও মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর কাছে হেরে গেলেও পরের দুই ম্যাচ জিতে পরের রাউন্ডের টিকিট কাটে ব্রাজিল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা ছিল অনবদ্য, তিন ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে পরের রাউন্ডে। সেখানে পেরু এবং মেক্সিকোকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে ফাইনালে উঠে তারা।

অন্যদিকে ব্রাজিল উঠেছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, উরুগুয়েকে টাইব্রেকারে হারিয়ে। সেবারের আর্জেন্টিনা দলটা ছিল অসাধারণ, কে ছিলেন না সেই দলে। ডিফেন্সে মিলিটাও-আয়ালা জুটি, মিডফিল্ডে অভিজ্ঞ ভেরনের পাশে তরুণ মাশ্চেরানো।

আক্রমণভাগ আরো দুধর্ষ, শিল্পী রিকুয়েলমের সঙ্গী তরুণ লিওনেল মেসি আর কার্লোস তেভেজ। অন্যদিকে ব্রাজিল দলে সেবার তারকা বলতে কেউই ছিলেন না, তরুণ রবিনহো তখনো অনভিজ্ঞ। বলতে গেলে সেবার ফাইনালের আগেই সবাই আর্জেন্টিনার হাতে কাপ তুলে দিয়েছিলেন।

কিন্তু, ফাইনাল বলে কথা, শিরোপার গন্ধটা যে খুব ভালো করে চেনে ব্রাজিল। মারকাইবোর ফাইনালে তাই দেখা গেল অন্য এক ব্রাজিলকে, দুঙ্গার শিষ্যরা একপ্রকার নাচিয়ে ছাড়লো আকাশি-সাদাদের। জুলিও বাপতিস্তা আর ড্যানি আলভেসের পাশাপাশি আয়ালার আত্নঘাতি গোলে ব্রাজিল ম্যাচ জিতে নেয় ৩-০ গোলে।

লিওনেল মেসির সেটাই ছিল প্রথম ফাইনাল হার, সেই হারের গেঁরো তিনি খুলতে পারেননি এখনো। চতুর্থবারের মতো কোপার ফাইনালে মারাকানায় মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। দেখার বিষয় আগের দুই বার হারের বদলা নিতে পারে কিনা আসবিসেলেস্তেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link