More

Social Media

Light
Dark

রবিউল ইসলাম, শিক্ষণীয় এক বিস্মৃত চরিত্র

বেশ লম্বা সময় পরে বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিট যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তিন ফরম্যাটে মিলে ভাল একটা পেস বোলিং গ্রুপ তৈরি হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটেও কয়েকবছর পর দারুণ ভাবে ফিরে এসেছেন তাসকিন আহমেদ। এছাড়া তরুণ তুর্কী শরিফুল ইসলামও যোগ হয়েছেন অভিজ্ঞ আবু জায়েদ রাহির সাথে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা হয়ে ওঠার জন্য এদের সবাইকে এখনও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে, তবুও এই মুখগুলো টেস্ট ক্রিকেটে আশা দেখাচ্ছে। জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন মোট চার পেসার। তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ রাহি, শরিফুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন।

দেশের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেসাররা সেভাবে সুযোগ না পেলেও জিম্বাবুয়েতে ভাল করার জন্য নিশ্চই মুখিয়ে থাকবেন এই চার পেসার। সেক্ষেত্রে এই চার পেসার ঘাঁটিয়ে দেখতে পারেন বাংলাদেশের শেষ জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশি এক পেসারের বোলিং।

ads

বাংলাদেশ শেষ জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই সিরিজে রীতিমত আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক পেসার। টেস্ট ক্রিকেটে তাও বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো পেসার বোধহয় আর কখনও এতটা কার্যকর হননি। সেই পেসারের নাম ছিল রবিউল ইসলাম।

অথচ তিনি এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভুলে যাওয়া এক নাম। মায়ের সাথে সাতক্ষীরায় এই মহামারির সময়টায় করে যাচ্ছেন বেঁচে থাকার সংগ্রাম। যদিও, সেই সিরিজের পর সবাই ভেবেছিল টেস্টে অবশেষে একজন আন্তর্জাতিক মানের পেসার পেয়েছে বাংলাদেশ।

সেই সিরিজে দুই টেস্টে মোট ১১০ ওভার বোলিং করেছিলেন এই পেসার। ১৯.৫৩ বোলিং গড়ে নিয়েছিলেন মোট ১৫ টি উইকেট। কোনো টেস্ট সিরিজে এটিই বাংলাদেশি কোনো পেসার সর্বোচ্চ উইকেট। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের শেষ পেস বোলার যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৫ উইকেটে পেয়েছেন।

রবিউল ইসলামের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে। তবুও ২০১৩ সালে বিপিএলে কোনো দল পাননি এই পেসার। সেই সময়ে বাংলাদেশের কোচ শেন জার্গেনসেন তাঁকে নেটে ডেকে নিয়ে এসেছিল জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য। নেটে মুশফিকদের বোলিং করে রীতিমত অবাক করে দিয়েছিলেন তিনি।

ফলে সেই সিরিজে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলেও ডাক আসে তাঁর। তারপরতো জিম্বাবুয়ে গিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকেই। তবে জিম্বাবুয়ে থেকে আসার পরের দুই টেস্টে কোনো উইকেট পাননি এই পেসার। এর মধ্যে বাংলাদেশের নতুন কোচ হয়ে আসেন চান্দিকা হাতুরুসিংহে।

সম্ভাবনাময় এই পেসার সেই সময় নতুন কোচের পরিকল্পনার অংশ হতে পারেননি। রবিউল ইসলাম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলেন, ‘আমাকে নির্বাচকরা বলেছিল যে হাতুরুসিংহে আমাকে দলে চায় না। কিন্তু নির্বাচকরা বিশ্বাস করতেন আমি টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে পারবো।’

হাতুরুসিংহের আসার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটা টেস্ট খেলেছিলেন রবিউল। সেখান থেকে ফেরার সময় এই কোচের সাথে বাক-বিতণ্ডায়ও জড়িয়েছিলেন তিনি। রবিউল সেই প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশে আসার সময় (চান্দিকা) হাতুরুসিংহে আমাকে বলেন তোমার পেস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকার মত না। আমি তাঁকে সাহস করে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোনটা ভালো – যে পেসার ১৪০ গতিতে বল করে নাকি যে পেসার ১৩৩-৩৫ এ বল করলেও স্যুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ভোগায়? হাতুরুর কাছে এর কোনো উত্তর ছিল না।

২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে আসলে সেই দলে আর সুযোগ হয়নি রবিউলের। রবিউল বলছিলেন এতে নাকি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররাও বেশ অবাক হয়েছিল, ‘ফতুল্লায় যখন টেস্ট ম্যাচ হচ্ছিল তখন ওদের কয়েকজন ক্রিকেটার এসে আমাকে বলছিল তুমি দলে নেই কেন। আমি জানি না তাঁদের কী উত্তর দিতে পারতাম। আমি ওদের বলেছি হেড কোচ বলেছে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মত ফিট না।’

রবিউলের ফিটনেসে ঘাটতি কিছুটা ছিল বটে। তবে বাংলাদেশের মত একটা পেস খরার দেশে রবিউল আশার প্রদীপ হয়ে এসেছিলেন। তাঁকে হয়তো টেস্ট ক্রিকেটে আর অনেক বেশি সুযোগ দেয়াই যেত। কেননা রবিউল দেশের বাইরে বাংলাদেশের ম্যাচ উইনার হতে পারতেন।

রবিউল সুযোগ না পেলেও রুবেল হোসেন কিংবা শফিউল ইসলামদের বারবারই টেস্টে সুযোগ দেয়া হয়েছে। শফিউল ইনজুরি থেকে ফিরলেই তাঁকে দলে ডাকা হয়েছে। তবে রবিউলের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। ফলে ফিটনেস কিংবা গতি শুধুই কী অযুহাত ছিল না?

তবে সেসব ভুলে তাসকিন, রাহি কিংবা শরিফুলদের নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। রাহি নিয়মিতই বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলছেন লম্বা সময় ধরে। এছাড়া তাসকিন প্রায় তিন বছর পর নিজের সেরাটা নিয়েই ফিরেছেন। শরিফুলও তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারে বেশ কিছু ঝলক দেখিয়েছেন। এখন শুধু এটাই আশা তাঁরাও যেন ক্ষনিকের আলো হয়ে হারিয়ে না যান কিংবা টিম ম্যানেজম্যান্ট যেন তাঁদের হারিয়ে না ফেলে- দুটোই জরুরি।

– ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ছায়া অবলম্বনে

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link