More

Social Media

Light
Dark

দায়িত্বশীল-উত্তেজক-রোমাঞ্চকর

সময় ১৮ জুন ১৯৮৩। স্থান টানব্রিজ ওয়েলসের নেভিল গ্রাউন্ড।

সুনীল গাভাসকার (০), কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত (০), মহিন্দর অমরনাথ (৫) ও সন্দীপ পাতিল (১) আউট হয়ে ভারত ৯/৪, বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। তার আগে টসে জিতে ব্যাট নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক।

মাঠে নামার আগে ভালো করে স্নানটুকুও করতে পারেননি সেদিন বেচারা ভারতীয় অধিনায়ক। ভালো করে স্নান করার মত, ‘কেন এমন হচ্ছে?’ ভাবার সময়টাও তাকে দেননি সেদিন কেউ। যাই হোক, ৯/৪ অবস্থায় তাঁকে মাঠে নামতে হল খুব তাড়াহুড়ো করে। একটু পরেই যশপাল শর্মা (৯) আউট এবং ভারত ১৭/৫। তারপর মাঠে নামা রজার বিনিকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৬০ রান তোলার পরে ২২ রানে আউট হন রজার বিনি, স্কোর তখন ৭৭/৬।এবং সেখান থেকে দ্রুত ভারত ৭৮/৭ হয়ে যায় রবি শাস্ত্রী (১) আউট হতেই।

ads

ভারত লাঞ্চে গেল ৩৫ ওভারে ১১০/৭ অবস্থায়, অধিনায়কের সঙ্গে তখন অপরাজিত মদনলাল শর্মা। একটা চেয়ারে লাঞ্চের জন্য কিছু খাবার আর এক গ্লাস জল চাপা দেওয়া ছিল, উল্টোদিকে আর একটা খালি চেয়ার। সে ঘরে বাকি টিমমেটরা আর কেউ ছিলেন না, সবাই উধাও হয়ে গিয়েছিলেন অধিনায়কের কাছে ধাতানি খাওয়ার ভয়ে। লাঞ্চের পরে অষ্টম উইকেটে ৬২ রান ওঠার পরে মদনলাল (১৭) আউট হতেই ভারত ১৪০/৮। মদনলালের জায়গা নিতে উইকেটে এলেন সৈয়দ কিরমানি।

তারপরে ভারত অধিনায়কের ব্যাটে শুরু হল জিম্বাবুয়ে বোলিং লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া উদ্দাম ঝড়, টানব্রিজ ওয়েলসের নেভিল গ্রাউন্ডে। মাঠে নামার সময়ের সেই ‘তাড়াহুড়ো’ ব্যাটে নিয়ে এলেন অধিনায়ক। সৈয়দ কিরমানিকে উল্টো দিকে রেখে শুরু হল তার ব্যাটের ‘নটরাজ নাচ’।

নবম উইকেটে যোগ হল রেকর্ড ১২৬ রান, তার মধ্য়ে সৈয়দ কিরমানির অবদান ছিল অপরাজিত ২৪ আর  অধিনায়ক একাই করেছিলেন সর্বগ্রাসী ১০২ রান। এর মাঝে নিজের শতরান পূর্ণ করে অধিনায়ক ব্যাটটা বদলেছিলেন শুধু একবার। ৬০ ওভারে ২৬৬/৮ রানে শেষ হয়েছিল ভারতীয় ইনিংস। ছয়টি ছয় আর ১৬ টি বাউন্ডারি মেরে ১৩৮ বলে ১৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ভারত অধিনায়ক, স্ট্রাইক রেট ছিল তখন অলৌকিক ১২৬.৮১। সেটাই ছিল ওয়ানডেতে ভারতের প্রথম শতরান।

৫৭ ওভারে ২৩৫ রানে অল আউট হয়ে ৩১ রানে ম্যাচটা হেরেছিল ডানকান ফ্লেচারের জিম্বাবুয়ে। ১১ ওভারে ৩২ রানে ১ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। মদনলাল তিন, বিনি দুই এবং বলবিন্দার সিং সান্ধু ও মহিন্দার নিয়েছিলেন একটি করে উইকেট। এই ম্যাচ থেকেই পাল্টা দেবার রসদ সংগ্রহ করেছিল ভারত এবং এর ঠিক এক সপ্তাহ পরের শনিবারেই ‘আষাঢ়ে বসন্ত’ এসেছিল ভারতীয় ক্রিকেটে।

তার ব্যাটিং নিয়ে পরে সানি বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে উত্তেজক, দায়িত্বশীল এবং রোমাঞ্চকর ওয়ানডে ইনিংস আমি কখনো দেখিনি।’ ওই ইনিংসকে উইজডেন মান্যতা দিয়েছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পাঁচ ওয়ানডে ইনিংসের অন্যতম হিসেবে। সেদিন নানা দাবীতে বিবিসি-তে ধর্মঘট চলছিল, তাই ওই অলৌকিক ইনিংস কোনও ভিডিওতে ধরা নেই। এমনকি, নেভিল গ্রাউন্ডের সাজঘরে ওই ইনিংসের কোন স্টিল ছবিও নেই।

কিন্তু ওই ইনিংসের একটি প্রামাণ্য স্মৃতিচিহ্ণ আজও ধরে রেখেছেন জেফরি রিচার্ডস নামে এক ভদ্রলোক। সেদিন কপিল দেবের কভারের ওপর দিয়ে মারা একটি লফটেড কভার ড্রাইভ (ওভার বাউন্ডারি) মাঠ থেকে ৯০ মিটার দূরের জেফরি রিচার্ডসের বাড়ির ছাদের টালি ভেঙে দিয়েছিল। আজও জেফরি রিচার্ডস টানব্রিজ ওয়েলসে বেড়াতে যাওয়া ভারতীয় ভ্রমণকারীদের সযত্নে দেখান তাঁর বাড়ির কোন্ টালিটা ভেঙে গিয়েছিল সেদিন কপিল দেবের সেই অলৌকিক ছয়ে।

ইতিহাস তখন মুচকি হেসে ওঠে নিজের মনে, ৩৮ বছর পরেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link