More

Social Media

Light
Dark

নিয়াজ মোরশেদ ও বাংলাদেশি কোটা

তিনি উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাষ্টার, অথচ তাঁকে কিনা বাছাইপর্ব খেলে তবেই মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত করতে হয়। এবারো সে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে অন্য একটা উপায়ে বিশ্ব আসরে খেলার সুযোগ পেয়ে থাকেন তিনি। সেটি বাংলাদেশি কোটায়। এবারও তাকে বাংলাদেশের কোটায় খেলতে হচ্ছে।

বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডে জিতলে যদিও সরাসরি খেলার সুযোগ ছিল, কিন্তু সেটি করতে পারেনি নিয়াজ। অনেকটা অলিম্পিক গেমসের ওয়াইল্ড কার্ড আর কোটা প্লেসের মতো। সরাসরি সুযোগ পেতে হলে বাছাইপর্বে টিকতে হতো।

সেই যোগ্যতা অর্জন করতে না পারায় বিশ্ব দাবার সর্বোচ্চ সংস্থাটির বদান্যতায় খেলতে হবে দেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাষ্টারকে। শেষ রাউন্ডে জিতলে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনকে আরেকজনের নাম পাঠাতে হতো। যদিও সে কাজটি আর করতে হয়নি দেশের দাবার অভিভাবক প্রতিষ্ঠানটিকে। শেষ রাউন্ডে জয় তো দুরের কথা, ড্রও করতে পারেননি তিনি। তাতে আরেকজনের খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।

ads

দেশের দাবার জন্য যেটি হতাশার খবর। এর আগে আবার ১ জুন থেকে শুরু হবে এশিয়ান জোনাল দাবা। এই আসর থেকেও একজনের সুযোগ মিলতে পারে। সে হিসেবে এই আসরটিও বাছাইপর্বের মর্যাদা পাবে। কেউ যদি সুযোগ তৈরি করতে পারেন তাহলে দুজন খেলার সুযোগ পাবেন বিশ্বকাপ দাবায়। আগামী জুলাইয়ে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকা দাবার এবারের আসর।

শেষ রাউন্ডে হারলেও সদ্য শেষ হওয়ায় আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন নিয়াজ। শেষ রাউন্ডে হেরেছেন সাবেক জুনিয়র বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন এবং এ ইভেন্টের টপ সিডেড খেলোয়াড় ইরানের গ্র্যান্ডমাস্টার মাকসোদলো পারহামের কাছে।

বাছাইপর্বের আসরে সর্বোচ্চ রেটেডধারী এই দাবাড়–র কাছে পরাজয়কে অপ্রত্যাশিত বলার সুযোগ নেই। কারণ নিয়াজ মোরশেদ থেকে যোজন যোজন দুরত্বে এগিয়ে রয়েছেন এই ইরানিয়ান। ফিদে ওয়ার্ল্ড কাপ দাবার কোয়ালিফায়িং এশিয়ান কন্টিনেন্টাল ইনডিভিজুয়াল চ্যাম্পিয়নশিপের নবম বা শেষ রাউন্ডের খেলায় গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ সাদা চাল নিয়ে মাকসোদলো পারহামের রেগোজিন ডিফেন্স পদ্ধতির বিরুদ্ধে খেলে থাকেন।

শুরু থেকেই অনেকটা আক্রমানত্বক খেলা পারহামের চালের নিয়াজ ১৭ নম্বর চালটি ভুল দিয়ে বসেন। এতে চাপে পড়ে ৪৬ চালে গিয়ে হেরে যান। নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এই ম্যাচটা জিতেও যেতে পারতেন তিনি। করোনা ভাইরাসের কারণে দাবায় এখন অনেকটাই অনুপস্থিত নিয়াজ। নিজে অ্যাজমার রোগী হওয়ায় বাইরে তেমন একটা বের হতেন না। গত এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে যতগুলো অনলাইন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার কোনটিতেই অংশ নেওয়া হয়নি তার।

বিশেষ করে নিজ বাসা উত্তর থেকে পুরানা পল্টনের দাবা ফেডারেশনের কার্যালয়ে এসে খেলাটাকে ঝামেলাই মনে করতে তিনি। সে কারণে অনেকটা ঘরকুনো হয়ে ছিলেন এই সময়টা। কিন্তু দাবা যাকে নিয়াজ মোরশেদ বানিয়েছে তিনি তো আর বসে বসে সময় কাটাতে পারেন না। ফেডারেশন থেকে দাবা বোর্ডে ফিরতে বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। একটা সময় এসে আর না করতে পারেননি। প্রস্তুতি যেমন হোক দারুণই খেলেছেন তিনি। তাকে পেয়ে দলের অপর খেলোয়াড়রা বেশ উজ্জীবিত ছিলেন। আসরে কেউ কোয়ালিফাই করতে পারলে হয়তো স্বপ্ন পূরণ হতো বাংলাদেশের।

সিনিয়রদের পাশাপাশি এবার ভাল খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান। দেশের সর্বকনিষ্ট এই আন্তর্জাতিক মাষ্টার শেষ রাউন্ডে হারিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার নবেন্দ্র প্রিয়াসমোরোকে। ফাহাদ সাদা চাল নিয়ে নবেন্দ্রর মডার্ন ডিফেন্স পদ্ধতির বিরুদ্ধে খেলে ৫৩ চালে জয় ছিনিয়ে নেন। এছাড়া গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব শেষ রাউন্ডে ভালো অবস্থানে থেকেও মঙ্গোলিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার সেগমেদ বাচ্চুলুনের সাথে ড্র করেন।

রাজীব কালো চাল নিয়ে কুইনস ইন্ডিয়ান ডিফেন্স পদ্ধতিতে খেলে ৪৭ চালে ড্র মেনে নেন। পুরো আসরে ৯ খেলায় সাড়ে পাঁচ পয়েন্ট পেয়ে আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান ২৪তম, পাঁচ পয়েন্ট করে নিয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ২৫তম ও গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব ২৭তম, সাড়ে চার পয়েন্ট নিয়ে ফিদে মাস্টার সুব্রত বিশ্বাস ৪০তম এবং আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিল চার পয়েন্ট নিয়ে ৫৬তম অবস্থান লাভ করেন।

আসরে সমান ৭ পয়েন্ট করে নিয়ে উজবেকিস্তানের গ্র্যান্ডমাস্টার ভাহিদভ সামসিদ্দিন চ্যাম্পিয়ন এবং সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক মাস্টার তিন জিনগাইয়ো রানার্সআপ হন। এবারের আসরে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার ১৫ টি দেশের ২০ জন গ্র্যান্ডমাস্টার, একজন মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার, ২০ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার ও ৪ জন মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টারসহ ৮২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন। এ

শিয়ান কন্ডিনেন্টাল ইন্ডিভিজুয়াল চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে তাই অর্জনটা বলার মতো কিছু নয়। একজন গ্র্যান্ডমাষ্টার চ্যাম্পিয়ন হলেও রানার্সআপ হয়েছেন একজন আন্তর্জাতিক মাষ্টার। বাংলাদেশ থেকে দুই রেটেড দাবাড়–রা অংশগ্রহন করলেও স্বরণীয় সাফল্য পায়নি। এই আসরকে অনেকেই হাইব্রিড দাবা টুর্নামেন্ট হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link