More

Social Media

Light
Dark

দু:খিত, তবে ক্যাচে আনন্দিত!

গ্লাভস পরে একটা হাতকে সাপের ফনা বানিয়েও বল ধরা যায় না, তা-ও আবার সামনের বল। পাশ দিয়ে প্রায় গুলির বেগে ছুটে যাওয়া বল চকিত ডাইভে এক হাতে ধরাটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সেটাও একজন ডান হাতি ক্রিকেটার যখন বাঁ হাতে ক্যাচটা নেন। তাসকিন, গ্রেট ট্রাই, ফরচুন ফেভারস দ্য ব্রেভ! কিন্তু এতটুকুই, তাঁর অধিনায়ককে গিয়ে বলার দরকার নেই, এভাবে ক্যাচ নিতে হয় (মানে যাঁরা তাঁকে বলার তাগিদ দিচ্ছেন)।

বরং অধিনায়কের কানে এ কথা তোলা উচিত, তিনটা ডিরেক্ট থ্রো-র সুযোগ নষ্ট হয়েছে। ২০ ওভারের ইনিংসে তিনটা ডিরেক্ট থ্রো-র সুযোগে অন্তত একটা লাগানো উচিত ছিল। কোনোটাই কিন্তু এক স্টাম্প ছিল না, তিনটা-ই পাইছে। এটা অদক্ষতা, জাস্ট থ্রো-করার জন্য থ্রো (দেখে মনে হয়েছে), কিংবা যা খুশি বলতে পারেন।

কিন্তু কীভাবে ক্যাচ নিতে হয়, তাসকিন তা শেখালেন – এ কথা বলার সুযোগ নেই। শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডারের রিফ্লেক্স এমনিতেই দেরিতে হয়। কারণ তিনি কাভার বা মিড অফ, মিড অনের মতো ব্যাটসম্যানকে সামনে থেকে দেখতে পান না। এক পাশ থেকে দেখতে হয়, কারণ ব্যাটসম্যানের পশ্চাৎদেশ থেকে নিরাপদ কিংবা কাছাকাছি দূরত্বে দাঁড়াতে হয়। গাপটিল ব্যাটের ফুল ব্লেড কানেক্ট করতে না পারলেও বোলারের গতির সঙ্গে ব্যাট সুইং মিলিয়ে বলটা আর যাই হোক জাভেদ ওমরের ইনিংসের গতিতে যায়নি। যথেষ্ট গতি ছিল।

ads

এখন চিন্তা করুন, ফিল্ডার সাইড থেকে দেখায় বলটা যখন ব্যাটে কানেক্ট হয়েছে, তখনই কিন্তু শরীর মুভ করানো যায়নি, কাভার কিংবা মিড অফের ফিল্ডারদের মতো। ব্যাট থেকে বলটা বেরিয়ে আসার পর বোঝা যায়, কোনদিকে যাচ্ছে। ওই অবস্থায় তাসকিন ডাইভটা দিয়েছেন নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে। লম্বা শরীর, হাতেও জমে গেছে। বাঁ পা-টা আরও সাইডে নিয়ে আরও জায়গা কাভার করে ডাইভটা দিলে বোঝা যেত, বলটা কতটুকু দূর দিয়ে যাচ্ছে তা বুঝেই ওই ডাইভ। কিন্তু তা হয়নি, তবে ক্যাচ যেহেতেু হয়েছে তাই এসব ছাইপাশ পড়ে বেজার না হওয়াই ভালো।

বরং অবিশ্বাস্য বিষয়টা দেখুন। তাসকিনের শরীর ভারি, আউটফিল্ড থেকে থ্রো কিংবা দৌড়ের সময় খেয়াল করবেন। তবু ডাইভিংয়ের টাইমিংটা ঠিক রাখার কৃতিত্ব তাঁর। আর এক হাত? এই এক হাত নিয়ে যে কয়েক দিন ধরে কী হচ্ছে! অবশ্য সেটা নিরাপত্তায় মোড়ানো হাত। তাসকিনের তো আর তা নয়, তিনি শুন্য হাতে ডাইভ দিয়েছেন, যা কিছু (সুযোগ) ছিল, সব তো ওই হাতেই ফসকে যাচ্ছে, তাই দে মা এই বেলা অন্তত দে!

নিয়মবিরুদ্ধ চেষ্টার পরও ভাগ্য তাঁকে নিরাশ করেনি। এক হাতে অজস্র দারুণ ক্যাচ থাকলেও দিন শেষে এই কথাটাই সত্য যে পাশ দিয়ে গুলির বেগে ছুটে যা্ওয়া বল দুই হাতে ধরাটা ‘ওল্ড স্কুল বেসিক’। ভালো ফিল্ডাররা বেশির ভাগ সময় তা দুই হাতে ট্রাই করেন (জন্টি/পন্টিং), রিফ্লেক্সের সময় অভ্যাসবশতই দুই হাত যায় তাদের, মাঝে-মধ্যে না গেলে এক হাত-ই সই।

স্পিনে স্লিপ ছাড়া দুই হাতে ট্রাই প্রতিষ্ঠিত সত্য। কারণ দুই হাত জমালে ক্যাচ নেওয়ার জায়গা বাড়ে, এক হাতে জায়গা কমে। যে কোনো জায়গায় লেগে ফাম্বলের সম্ভাবনা বেশি। তাসকিনের ক্ষেত্রে যেহেতু তেমন কিছু ঘটেনি গাপটিলেরও তাই বিশ্বাস হয়নি। তাঁর অবিশ্বাসি হাসি-ই বলে দেয়, ‘যাহ শালা! বলটা জমে গেল!’

ক্যাচটা নেওয়ার পর তাসকিনের চোখে ভর করা অবিশ্বাস গাপটিলের এই অদৃ্শ্য অনুযোগের রাজসাক্ষী। তাই দয়া করে, তাসকিনের ক্যাচকে অধিনায়কের কাছে না পাঠিয়ে বরং অধিনায়ককে কেউ বলুন, ভাগ্য না হয় তাসকিনকে সহায়তা করেছে, কিন্তু আপনার ভাগ্য বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। লং ক্যাচ তো তাই! বলের নিচে যা্ওয়ার সুযোগ ছিল, সময় ছিল, কিন্তু তবু হাতে জমাতে না পারাটা অদক্ষতা না হলেও অন্তত ক্যাচ নেওয়ার সময় যতটা আত্মবিশ্বাস লাগে, তার ছিঁটেফোঁটা্ও ছিল না। এই না থাকাটা সম্ভবত আগের ম্যাচগুলোয় ক্যাচ ছাড়ার খেসারত।

আসলে ক্যাচ ধরা ও ছাড়া দুটোই সংক্রামক। কেউ ভালো একটা ধরলে পরে অন্য কারও ছাড়ার সম্ভাবনা কমে। কেউ সহজটা ছাড়লে কি হয় তা তো এই সফরেই পরিস্কার!

তাসকিন ব্যতিক্রম, এই সিরিজের সেরা ক্যাচ? ভাগ্যের পরশ থাকায় ঠিক মেনে নিতে পারছি না। দুই দশকের বেশি সময় পার করে ভাগ্যের পরশে পাওয়া কোনোকিছু নিয়ে বগল বাজাতে শরম লাগে। দু:খিত, তবে ক্যাচে আনন্দিত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link