More

Social Media

Light
Dark

সত্যিই তামিমদের সেরা সুযোগ?

নিউজিল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে সেখানে আছে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টির কথা পরে ভাবা যাবে। আপাতত তামিম ইকবালের নেতৃত্বে প্রথম কোন অ্যাওয়ে সিরিজ খেলতে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ দল। ইতোমধ্যেই যেটা জানা গেছে, কেন উইলিয়ামসন সিরিজে থাকছেন না। রস টেলর থাকছেন না সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে। যেটা ভাবা হচ্ছে, টেলর আর উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে এবার নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজ জেতার সবচাইতে সেরা সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু আসলেই কি তাই?

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলা বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচাইতে বেশি রান করা পাঁচজন ব্যাটসম্যানের নাম হল- মার্টিন গাপটিল, রস টেলর, নিল ব্রুম, টম ল্যাথাম আর কেন উইলিয়ামসন। এর মধ্যে নিল ব্রুম অবসরে চলে গেছেন, কেন উইলিয়ামসন আর রস টেলর থাকছেন না। এদিকে রস টেলর সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে- ২০২০ এর ১৩ মার্চ সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

ads

বাংলাদেশ দলের তাই ‘রস টেলর আর উইলিয়ামসন নেই’ ব্যাপারটা যতটা ভাবা উচিত, ‘মার্টিন গাপটিল আর টম ল্যাথাম আছে’ ব্যাপারটা আরো বেশি করে ভাবা উচিত। আর এমনিতেও প্রতিপক্ষের ‘মূল অস্ত্র’ দের ফিরিয়ে দিয়েও ম্যাচ হারার রেকর্ড আছে আমাদের। আপনি যদি ২০১৫ এর বিশ্বকাপ ম্যাচটার কথা মনে করার চেষ্টা করেন, তাহলেই এই ব্যাপারটা আরো ভালভাবে বুঝতে পারবেন। বিশ্বকাপের সে ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডকে ২৮৯ রানের একটা টার্গেট দিয়েছিল। ২৮৮ রান ডিফেন্ড করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা যে খারাপ ছিল এমনটা বলার উপায় নেই।

সে ম্যাচে পাওয়ারপ্লেতেই ৫ ওভারের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ‘মেইনম্যান’ কেন উইলিয়ামসন আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে ফিরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে ম্যাচ হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। মার্টিন গাপটিল বলতে গেলে একা হাতেই হারিয়ে দিয়েছিল। সেজন্যেই কেন উইলিয়ামসন আর রস টেলরের না থাকাটা বাংলাদেশকে যেটা দিতে পারে সেটা স্রেফ মানসিক শক্তি কিংবা ‘মানসিক সুখ’, এছাড়া কিছুই না।

তবে হ্যা, কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্ব বিচারে বাংলাদেশ অন দ্যা ফিল্ডে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে। কিন্তু সেই সুবিধাও যদি নিতে হয়, তাহলেও একই সেক্টরে বাংলাদেশকেও ভাল করতে হবে। অর্থাৎ তামিম ইকবালের অধিনায়কত্বও ভাল হতে হবে। এছাড়া উইলিয়ামসনের না থাকা নিয়ে মাতামাতি করে কোন লাভ হবে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছেনা।

তবে, বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের দারুণ একটা সুযোগ আছে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সেটা কোন খেলোয়াড় অনুপস্থিত থাকার জন্যে নয়। এটা নিউজিল্যান্ডের লম্বা সময় ওয়ানডে বিরতির জন্যে। নিউজিল্যান্ড শেষবারের মত ওয়ানডে খেলে গত বছরের ১৩ মার্চ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। দেশের মাটিতে খেলা সর্বশেষ ওয়ানডে খুঁজতে চাইলে অবশ্য আপনাকে আরেকটু পেছনে যেতে হবে। সেটা ১১ই ফেব্রুয়ারি, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ভারতের বিপক্ষে। আর বাংলাদেশ তো সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেই সেদেশে গেছে। এখন এই যে একটা দল লম্বা সময়ের জন্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ানডে খেলেনি এটার কিছুটা প্রভাব খেলাতে থাকবেই। বাংলাদেশকে মূলত প্রথম ম্যাচে সেই প্রভাবের সুবিধাটাই নিতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল, বাংলাদেশ সেই সুবিধাটা নেবে কিভাবে? বাংলাদেশকে শুরু থেকেই ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। লম্বা সময় পর ওয়ানডেতে ফেরার জন্যে নিউজিল্যান্ডের মধ্যে শুরুতে আড়ষ্টতা কাজ করবে আর সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশকে যেটা করতে হবে , এই আড়ষ্টতারই সুবিধা তুলতে হবে। নিউজিল্যান্ড যদি প্রথমে ব্যাট করে তাহলে দ্রুত উইকেট তুলতে হবে, যদি প্রথমে বল করে তাহলে ওপেনিং পার্টনারশিপে ভাল রান তুলতে হবে। কেন উইলিয়ামসনের অধিনায়কত্বের সুবিধা না পাওয়া নিউজিল্যান্ডকে যদি বাংলাদেশ শুরুর এই চাপটা দিতে পারে তাহলে বাংলাদেশের একটা বড় সুবিধা আছে এটুকু বলা যায়।

তবে বাংলাদেশ যদি টসে জিতে তাহলে ফিল্ডিং নেওয়াটাই বাংলাদেশের জন্যে সুবিধাজনক হবে। ২০১৫ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে এখন অব্দি নিউজিল্যান্ড নিজেদের মাটিতে প্রথমে ব্যাট করা ৩৫ ম্যাচের মধ্যে ২৪ জয়ের বিপরীতে হেরেছে ৯ ম্যাচ। বাকি দুটো ম্যাচ কোন ফলাফল দেখেনি। দুর্দান্ত পরিসংখ্যান, তাহলে নিউজিল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে বলছি কেন?

কারণ নিজেদের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের প্রথমে ফিল্ডিং করা ম্যাচের পরিসংখ্যান আরো সাংঘাতিক। নিজেদের মাটিতে খেলা ওয়ানডেতে ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে এখন অব্দি তারা ২৯ ওয়ানডেতে প্রথমে ফিল্ডিং করেছে, এই ২৯ ওয়ানডের মধ্যে নিউজিল্যান্ড হেরেছে মাত্র ৫ টা ওয়ানডেতে। বাকি ২৪ ওয়ানডেই জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

এই আগে ফিল্ডিং করে ম্যাচ জয়ের অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। নিউজিল্যান্ডের বেশিরভাগ মাঠই আকৃতিতে ছোট। এই ছোট মাঠে মূলত কোন রানই ডিফেন্ড করার জন্যে নিরাপদ নয়। আপনি যদি প্রথমে ব্যাট করে ৩৫০ রানও স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলেন, তাহলেও আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন না। আর এমনিতেও বিগত কয়েক বছরে নিউজিল্যান্ডে যে কয়টি সীমিত ওভারের ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে বেশিরভাগ ম্যাচেই ফ্লাট উইকেট দেওয়া হয়েছে।

ছোট মাঠের এই ব্যাটিং স্বর্গে তাই নিরাপদ ভাবার মত কোন রান নেই। সে হিসেবে আপনি যদি পরে ব্যাট করেন তাহলে আপনার সামনে একটা সেট টার্গেট থাকবে। সেই টার্গেটে ব্যাট করতে আপনি ছোট মাঠের সুবিধা যেমন পাবেন, তেমনই ফ্লাট পিচে রানও তুলতে পারবেন। তবে এখানেও ঘুরে ফিরে একটা প্রশ্ন আসছে- উপমহাদেশীয় দলগুলো এই সুবিধা কতটা নিতে পারবে? বিশেষত বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের কথা কেন বলছি, কারণ আমাদের দল হিসেবে মানসিক শক্তি যথেষ্ট কম। দেখা গেল আমরা টসে জিতলাম, টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠালাম। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ৩২০ রানের বেশি তুলে ফেলল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয় বাংলাদেশ ওখানেই ম্যাচ হেরে বসে। অথচ, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এমন রান খুবই স্বাভাবিক আর সেটা সহজে তাড়াও করা যায়। তবে বাংলাদেশের এই বড় রান তাড়াতে ভয় পাওয়ার বিশেষ কারণও আছে। সেটা বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি।

বড় রান তাড়া করাতে দলের ওপেনিং জুটিকে বড় ভিত দিতে হয়, দ্রুত রান তুলতে হয়, পাওয়ারপ্লেতে রান করতে হয়। যে তিনটে নিয়ামকের কথা বললাম এর একটাও মিস গেলে সেই দলের বড় রান তাড়া করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। খুবই দুঃজনক সত্যি হল বাংলাদেশের এই তিনটে নিয়ামকের তিনটেরই অভাব। আমাদের যেমন নন-স্ট্রাইকে ধারাবাহিক ওপেনিং পার্টনার নেই, তেমনি স্ট্রাইকে নামা সিনিয়র নিজের খেয়ালে এতটাই মশগুল যে দলের রান ৩২০ তাড়া করতে হোক বা ২২০- তিনি খেলবেন নিজের মত করেই। এই পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংটাই ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশকে অবশ্য আরো একটা ব্যাপার ভোগাতে পারে- একাদশ নির্বাচন। তিনে শান্ত আর সাতে যদি আবারও সৌম্য খেলেন তাহলে এই দুই জায়গাতে কার্যকরী দুই ব্যাটসম্যানকে মিস করবে বাংলাদেশ। আর আরেকটা ব্যাপার হল, দলে পেসার কয়জন থাকছেন সেটা।

গত নিউজিল্যান্ড সফরে আমাদের একাদশ নির্বাচনে বড় ধরণের ভুল ছিল। আমরা দলে একাদশে পুরোদস্তুর পেসারের বদলে অতিমাত্রায় স্পিনে নির্ভর ছিলাম। যে কয়জন পেসার খেলেছিলেন তাদের মধ্যে দুই জন আবার এ ধরণের কন্ডিশনে বল করার মত কার্যকরীই ছিলেন না। তামিম ইকবাল আশা করছি গত সফরের দুর্বল অধিনায়কত্বকে অনুসরণ করবেন না, কন্ডিশন মোতাবেকই একাদশ সাজাবেন।

মোটা দাগে, যে যেভাবেই বলুক না কেন বাংলাদেশের জন্যে আগামীকালের ম্যাচ জেতাটা একটু কঠিনই। কিন্তু কালকেরটা কঠিন হলে পরেরগুলো হবে ‘কঠিনতর’। ওয়ানডে লিগে তাই অন্তত ১০ পয়েন্ট বাগাতে হলে বাংলাদেশের প্রধাণ সুযোগ কালকের ম্যাচটাই। দেখা যাক সেটা দল নিতে পারে কিনা।

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link