More

Social Media

Light
Dark

এ তো আরেক ভিভ!

আমার কাছে আগ্রাসনের শেষ কথা ভিভ। শেষ মানে শেষ, ফুল স্টপ।

শরীরী ভাষা আর ব্যাটিংয়ের ধরনে প্রতিপক্ষের বোলিং আর মনোবল, দুটিই গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ভিভ রিচার্ডসের তুলনীয় কেউ নেই।

আজকে মার্ক উডের বলে বিরাট কোহলির পুল শটে ছক্কাটি দেখে, মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়ে গেল, ‘এ তো আরেক ভিভ!’

ads

‘প্রিমেডিটেটেড’ শট; আগেই ঠিক করে রাখা। উড লেংথ ডেলিভারি করবেন, অফ স্টাম্পে বা বাইরে, অনুমান করতে পেরেছিলেন। উড বল ছাড়ার মুহূর্তে ত্বরিত লম্বা শাফল করে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে চলে গেলেন কোহলি। সিক্সথ বা সেভেন্থ স্টাম্পে হবে। তাতে যেটা হলো, অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলেও পুল খেলার জন্য পারফেক্ট পজিশনে চলে গেলেন তিনি। ১৪৭ কিলোমিটার গতির বল চোখের পলকে উড়ে  গেল সীমানায়। বলের সঙ্গে যখন ব্যাটের দেখা হলো, তার পজিশন তখন অবিশ্বাস্য। হেড পজিশন ঠিকই অনড়।

বলের ওপর চড়ে তিনি পুল খেললেন, যে শব্দটা হলো শটের, ক্রিকেটপ্রেমী হলে সঙ্গে সঙ্গে কোহলির প্রেমে পড়ে যাওয়ার কথা। আহ! এখনও আমার কানে অনুরণন তুলছে। ওই ছবি, ওই ঝংকার ভুলতে পারছি না।

ওই শটে যদি থাকে বোলারের প্রতি তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা, পিষে ফেলার তাড়না, পরের শটেই তিনি ভিন্ন একজন। যার আগ্রাসন শিল্পিত, যে মারে মিশে থাকে নেশা, যে শট জড়ায় ঐন্দ্রজালিক আবহে।

উডের ১৫০ কিলোমিটার গতির বল। অফ স্টাম্পে, ফুল লেংথ। শট খেলার আমন্ত্রণ। কোহলি সেই আহবানে সাড়া দিলেন নান্দনিকতার ডানায় ভেসে। আবারও হেড পজিশন দুর্দান্ত, হাই-এলবো, ব্যাটের ফুল ফেস, টাইমিং নিখুঁত, ফলো থ্রু মোহনীয়। বল পাখা মেলে উড়ে গেল গ্যালারিতে।

এবার ভিভের কথা মনে হয়নি। অযুতবারের মতো মনে হয়েছে, কোহলি কতটা স্পেশাল!

ইনিংসের শুরুর দিকে ক্রিস জর্ডানের বলে একটি বাউন্ডারি মারলেন। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ওয়াইড লং অন দিয়ে চার। বটম হ্যান্ডেড ফ্লিক নাকি হাফ-স্কুপ নাকি স্লগ, বলা কঠিন। শটের কোনো নাম নেই। তবে ছাপ আছে। গ্রেটনেসের ছাপ।

জর্ডানের আরেকটি ডেলিভারিতে কোহলি লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে সরে গেলেন অনেক। জর্ডানও তাকে অনুসরণ করলেন শরীর সোজা বল করে। জায়গা ছিল না যথেষ্ট, তবু কী টাইমিং! বল ছক্কায় উড়তে দেখে অসহায়ের মতো ভঙ্গি করলেন জর্ডান।

জর্ডানেরই আরেকটি স্লোয়ার ডেলিভারিতে এত জোরে ওয়াইড লং দিয়ে দিয়ে চার মারলেন, ধারাভাষ্যে হার্শা ভোগলে বলছিলেন, ‘এমন শট কীভাবে খেলা সম্ভব!’

আজকে তার প্রথম স্কোরিং শটের বাউন্ডারি; আরও কিছু শট; কোনটি রেখে কোনটির কথা বলি!

 

__________

ভিভ রিচার্ডসকে নিয়ে যখন কেউ শুধু পরিসংখ্যানের অমুক-তমুক বলতে থাকেন, আমার প্রচণ্ড হাসি পায়। বিরক্তিও লাগে। নিষ্প্রাণ কিছু সংখ্যার কতটা সাধ্য কিং ভিভকে ফুটিয়ে তোলার! ভিভকে বুঝতে হলে জানতে হবে তার ব্যাটসম্যানশিপ।

কোহলির পরিংসংখ্যান  চোখধাঁধানো। অভাবনীয় সব সংখ্যা। তবু, এই সংখ্যাগুলি কতটাই বা বোঝাতে পারছে কোহলির ব্যাটসম্যানশিপকে!

আমার দেখা কোহলির সেরা ইনিংসগুলোর একটি, আমার খুব প্রিয় ইনিংস, স্রেফ ৪৯ রানের। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে।

টি-টোয়েন্টিতে ৫১ বলে ৪৯ রানের ইনিংস তো আদর্শ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রতিপক্ষের বোলিং, ম্যাচের পেক্ষাপট, চাপ, আবহ; সেসব কি পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাবে? রেকর্ড বই কি বলতে পারবে, ৫১ বলে ৪৯ রানের টি-টোয়েন্টি ইনিংসও ব্যাটিং মাস্টারক্লাস হতে পারে!

আজকে দলের হেরে যাওয়া ম্যাচে ৭৭ রানের ইনিংসটি যেমন একটি মাস্টারক্লাস। ইনিংস ধরা, ইনিংস গড়া ও ইনিংস সাজানোর প্রামাণ্যচিত্র।

ভিভকে লাইভ দেখতে পারিনি, এক জীবনের আক্ষেপ।

বিরাটকে এক যুগ ধরে দেখছি সরাসরি টিভি পর্দায়, প্রেসবক্স থেকে চোখের সামনে; এক জীবনের প্রাপ্তি!

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link