More

Social Media

Light
Dark

ভারতের প্রথম গ্রেট

বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তখনো ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশগুলো। ঠিক সেই সময় আজ থেকে আরো প্রায় ৭০ বছর আগে ভারত আর ইংল্যান্ড একটি টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয়। সেই ম্যাচের প্রথম দিনেই ভারত ১৩৮ রানে অল আউট হয়ে যায়।

ম্যাচের দ্বিতীয় দিন কাটে সেই সময়ের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান লেন হটনের ব্যাটিং দেখেই। সারাদিন ব্যাটিং করে লেন হাটন অপরাজিত ছিলেন ১৮৩ রানে। সেদিন রাতে ভারতের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রুশি মোদি একটু হাঁটতে বেড়িয়েছিলেন।

তাঁর সাথে ছিলেন ভারতের আরেকজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনি মোদিকে সেই রাতে বলেছিলেন, ‘আজকে সারাদিন হটনের ব্যাটিং দেখে মনে হলো আমি ঠিক করে ব্যাটটাই ধরতে জানি না।’

ads

অথচ সেই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ছিলেন তখন ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান। ইতোমধ্যে ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরিও করে ফেলেছেন। যার নেতৃত্বে ভারত তাঁদের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় তিনি হলেন বিজয় হাজারে।

১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে ৩০ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। যার মধ্যে ১৪ টি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বলা হয়, ভারত এখন অবধি যতজন আন্তর্জাতিক মানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্ম দিয়েছে তাঁদের অন্যতম ও প্রথম হচ্ছেন এই বিজয় হাজারে।

প্রথম ভারতীয় হিসেবে দুইবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান ছিলেন ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদণ্ড। তখনকার দুর্বল শক্তির ভারতীয় দলে একাই কত ম্যাচে প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে লড়ে গেছেন।

যদিও তাঁর ব্যাট ধরার স্টাইল দেখে তাঁকে কখনো বড় মাপের ব্যাটসম্যান মনে হতো না। ভুল গ্রিপে ব্যাট ধরেও যখন শট খেলতেন তখন মনে হতো কোনো গানের সুরে নাচছেন। বিশেষ করে যখন স্কয়ার কাট খেলতেন তখন মনে হতো উনিই একমাত্র ঠিকভাবে ব্যাটিংটা করতে জানেন।

ভারতের হয়ে ৩০ টেস্টে প্রায় ৪৮ গড়ে করেছেন ২১৯২ রান। ভারতের হয়ে ৭ টি সেঞ্চুরিও করেছেন সাবেক এই অধিনায়ক। ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাহাড়সম ১৮৭৪০ রান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এখানে তাঁর ব্যাটিং গড় ৬০ ছুঁই ছুঁই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে  তাঁর রয়েছে ৬০ টি সেঞ্চুরি।

বোলার হিসেবেও প্রায়শই দলের জন্য উইকেট এনে দিয়েছে বিজয় হাজারে। তাঁর মিডিয়াম পেস দিয়ে এক সিরিজে দুইবার আউট করেছিলেন স্যার ব্রডম্যানকে। তবে মিডিয়াম পেসের পাশাপাশি লেগ স্পিন ও করতে পারতেন তিনি। যদিও পেশাদার ক্রিকেটে ওভাবে কখনো লেগ স্পিন করতে দেখা যায়নি তাঁকে।

দলের সেরা ব্যাটসম্যান হলেও তাঁর চরিত্রে এর কোনো প্রভাব ফেলেনি কখনো। হাজারের ব্যবহারে মুগ্ধ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে একটু কম কথা বলতেই পছন্দ করতেন তিনি। একেবারে দরকার না হলে নাকি কথাই বলতেন না। তবে তাঁর ব্যাট কথা বলতো ভারতের হয়ে।

সেদিন যে লেন হটনের ব্যাটিং দেখে বলেছিলেন তিনি ঠিক করে ব্যাটই ধরতে জানেননা। সেই বিজয় হাজারে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে। আর সেই তালিকার প্রথম ছিলেন লেন হটন।

১৯৬০ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে ভারত সরকার। অবসরের পর সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। তবে ২০০৪ সালে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করার দায়িত্ব নিলেও তিনি সে বছরই মৃত্যুবরণ করেন।

ভারতের ন্যাশনাল ওয়ানডে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের নাম বদল করে পরে বিজয় হাজারে ট্রফি করা হয়। এই নামকরণের মধ্য দিয়েই আজীবন ভারতীয় ক্রিকেটে লেখা থাকবে বিজয় হাজারের নাম!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link