More

Social Media

Light
Dark

সম্ভাবনার ‘সলিল’ সমাধি

সলিল আঙ্কোলা – ভারতীয় ক্রিকেটের কথা যতদিন আসবেন, ততদিন তাঁর প্রসঙ্গও আসবে!

কি? একটু গোলমেলে ঠেকছে?

তাহলে এবার ১৯৮৯ সালের করাচি টেস্টের গল্পটা বলা যাক।

ads

সেদিন ছিল ১৫ নভেম্বর। ভারত-পাকিস্তান টেস্ট, আবহটা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হয় না। সেদিন দু’দলের চার প্রতিভাবানের অভিষেক হয়। এর মধ্যে দু’জনকে সবাই চেনে – তারা হলেন শচীন টেন্ডুলকার আর ওয়াকার ইউনুস। তাঁদের সেই ম্যাচ ও তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে অসংখ্য কাব্য করা হয়েছে।

কিন্তু, দু’জন এমন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়, যাদের সেটাই ছিল শেষ টেস্ট। ভারতের সলিল আঙ্কোলো ও পাকিস্তানের শহীদ সাঈদ।

এর মধ্যে আঙ্কোলার গল্পটা আবার ‘অভিনব’। কারণ, পরের মাসে সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই যখন তাঁর ওয়ানডে অভিষেক হয়, সেটা ওই শচীনেরও অভিষেক ওয়ানডে ছিল। কেন এই সলিল আঙ্কোলাকে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের অংশ বললাম – তা নিশ্চয়ই আর ভেঙে বলাটা জরুরী নয়।

কিন্তু, কেন তিনি বা তাঁর জীবনটা অভিনব সেটা বলা দরকার। তিনি ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রতিভাবান এই পেসারের অ্যাকশনটা ছিল খুবই ইনজুরি প্রবণ। টেস্ট তো আর খেলতেই পারলেন না। ১৯৯৭ সাল অবধি খেলেছেন ওয়ানডে – তবে ক্যারিয়ারে ওয়ানডের সংখ্য মাত্র ২০ টি।

তবুও তাঁর জীবন নিয়ে অনেক কাব্য করার সুযোগ আছে। ব্যর্থ খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে তিনি নাম লেখান বিনোদন জগতে। একটা সময়ে রুপালি পর্দা কিংবা ছোট পর্দায় হয়ে ওঠেন নিয়মিত মুখ। সেই প্রসঙ্গে একটু পরে আসি।

এবার আবার একটু তাঁর ক্রিকেট জীবনে ফিরি।

সলিলের ক্যারিয়ারের শুরুটা ১৮৮৮-৮৯ মৌসুমে মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে। অভিষেক মৌসুমেই দূর্দান্ত পারফর্ম করে নজর কাড়েন জাতীয় দলের নির্বাচকদের।

এই দুর্দান্ত পারফর্মের পর জাতীয় দলে ডাক পান সলিল আঙ্কোলা। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে পাকিস্তান সফরের জন্য ডাক পান ভারতীয় দলে। প্রস্তুতি ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে প্রথম টেস্টে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন সলিল।

সিরিজের প্রথম টেস্টে সলিল আঙ্কোলার পাশাপাশি অভিষেক হয় আরো দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার এবং ওয়াকার ইউনুসের। অভিষেক টেস্টে ১২৮ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট বেশ ভালো একটাই সূচনা করেন সলিল। ইনজুরির কারণে সিরিজের বাকি টেস্টগুলো খেলতে পারেননি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এটাই ছিলো তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম এবং শেষ টেস্ট। কেন শেষ হয়ে গেলেন – সেটা তো আগেই বলা হল।

এরপর জাতীয় দলে বেশ কয়েকবার টেস্ট দলে ডাক পেলেও আর কখনো টেস্ট জার্সিতে দেখা যায় নাই তাঁকে। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে খেলছিলেন ২০ ওয়ানডে। এমনকি খেলেছিলেন ১৯৯৬ বিশ্বকাপ। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে এক ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সলিল আঙ্কোলা।

বিশ্বকাপের পর জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়া হয় তাঁকে। সাথে বাদ পড়েছিলেন ব্যাটসম্যান বিনোদ আম্বলি এবং অলরাউন্ডার মনোজ প্রভাকর। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার এই ঘটনাকে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই একে আখ্যায়িত করেছেন ‘আঙ্কোলাদ’ নামে।  বিশ্বকাপে পর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরও কয়েকবার জাতীয় দলে সুযোগ ডাক পেয়েছেন তিনি। রঙিন পোষাকে মাঠে নামার সুযোগ এলেও সাদা পোশাকে আর কখনই মাঠে নামতে পারেননি সলিল আঙ্কোলা।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের পর আর কখনোই জাতীয় দলে সুযোগ পাননি সলিল আঙ্কোলা। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেট মনোযোগ দেন তিনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রঞ্জি দলের হয়ে ম্যাচ খেলার সময় পায়ে চোট পান সলিল। এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় এটি ছিলো বোন টিউমার।

এই টিউমারের অস্ত্রোপচারের পর প্রায় দুই বছর হাটা এবং দৌড়াতে পারতেন না সলিল। এর জন্য ক্রিকেটকে বিদায় জানান সলিল আঙ্কোলা। তবে,এবার তিনি নেন নতুন চ্যালেঞ্জ।

ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর রুপালি পর্দায় আগমণ ঘটে সলিল আঙ্কোলার। ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে এতো সহজেই রুপালি পর্দায় সুযোগ পেলেন তিনি? না, এতো সহজেই সুযোগ পাননি তিনি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে রুপালী পর্দা থেকে কিছু অফার পান সলিল আঙ্কোলা। আর সেখান থেকেই ক্রিকেট দুনিয়া থেকে রুপালি দুনিয়াতে আসেন সলিল। রুপালি দুনিয়াতে আসার পথ এবং এখানে টিকে থাকতেও বেশ কষ্ট করতে হয়েছে সলিল আঙ্কোলাকে।

নিজের জীবন নিয়ে সলিল আঙ্কোলা বলেন, ‘জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। আমি কখনো ভাবি নাই আমি অভিনয় জগতে আসবো কিংবা কখনো ভাবি নাই আমি খাবারের ব্যবসা করবো। যা আমি এখন করতেছি। আপনি জানেন আপনার জীবন একটাই কিন্তু কখন কি ঘটবে সেটা আপনি বলতে পারবেন না।’

বোন টিউমার তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে শেষ করে দিয়েছে। তাঁর বোন টিউমার নিয়ে বলেন, ‘বোন টিউমারের চিকিৎসা এবং অপারেশন দুইটাই ভুল ছিলো। এর জন্য আমি প্রায় আড়াই বছর ঠিক মত হাটতে পারিনি। আমি কখনো ভাবিনি আমার ক্যারিয়ার এর কারনে শেষ হয়েও যাবে।’

মালায়ালাম পরিচালক সঙ্গীত শিভানের তৃতীয় ছবি, ‘চুরা লিয়া হ্য়ায়’ এর মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন সলিল আঙ্কোলা। এছাড়াও ২০০০ সালে ‘কুরুক্ষেত্র’ ছবিতে সঞ্জয় দত্তের সাথে অভিনয় করেন তিনি। এরপর আরো বেশ কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে বিগ বস অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছিলেন সলিল আঙ্কোলা। এই জগতে তিনি পরিচিত মুখ বটে তবে খুব বেশি সফল নন।

ফলে, ক্রিকেটার ও অভিনেতা – টানা দুই জগতে ব্যর্থতার বোঝা নেমে আসে তাঁর জীবনে। মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েন তিনি।  মদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন সলিল। এর জন্য তাঁর প্রথম স্ত্রী আত্মহননের পথ বেছে নেন। সময়টা খুব কঠিন ছিল আঙ্কোলার জন্য। তবে, তিনি সেটা কাটাতে পেরেছেন। সাথে ক্রিকেটেও ফিরেছেন। মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশেনের (এমসিএ) প্রধান নির্বাচক তিনি।

নিজে বড় ক্রিকেটার হতে পারেননি, এবার তাঁর সামনে বড় ক্রিকেটার বাছাই করার নতুন চ্যালেঞ্জ। এবার নিশ্চয়ই আর ব্যর্থ হইতে চাইবেন না তিনি!

 

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link