More

Social Media

Light
Dark

ইতিহাস সেরা সেই কামব্যাক

অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের আলতো চিপ শটে বল পিএসজির রক্ষণভাগের মাথার উপর দিয়ে যখন ভেসে যাচ্ছে সেই মিলি সেকেন্ড সময়ে সার্জিও রবার্তো পৌঁছে গেছেন পেনাল্টি মার্কের কাছাকাছি। উড়ে আসা বল স্লাইডিং টাচে জালে জড়ান বদলি খেলোয়াড় রবার্তো। সেই গোলে তৈরি হয়েছিল ইতিহাস, গোটা বিশ্ব সাক্ষী হয়েছিল এক অবিস্মরণীয় কামব্যাকের।

বলছিলাম ২০১৬/১৭ মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের শেষ গোলের কথা৷ কল্পনাতীত এক জয়ে সেবার বার্সা জায়গা করে নিয়েছিল শেষ আটে। সেদিনের ন্যু ক্যাম্প থেকে শুরু করে গোটা বিশ্ব দেখেছিলো হারতে হারতে জিতে যাবার এক গল্প।

প্রথম পর্বে পিএসজির মাঠে ৪-০ গোলের পরাজয়ে সমর্থকেরা ধরেই নিয়েছিল এবার হয়তো বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগ যাত্রা শেষ হতে চলেছে দ্বিতীয় রাউন্ডেই। হয়ত মেসি-নেইমার, কিংবা কোচ এনরিকে ভাবতে চাননি তারা বাদ হয়ে যাবেন। বরং তারা পাহাড় সমান উঁচু গোল ব্যবধান টপকে চলে যেতে চেয়েছিলেন পরের রাউন্ডে। সৃষ্টি করতে চায়েছিল এক নতুন ইতিহাস। ইতিহাস তৈরিতে পরিসংখ্যান, গোল ব্যবধান তাদের বিপক্ষে থাকলেও পক্ষে ছিল ঘরের মাঠের দর্শক আর বার্সার নয়নের মনি মেসি এবং তার দুই অনবদ্য সতীর্থ নেইমার ও সুয়ারেজ।

ads

মাঠ ভর্তি দর্শক, স্নায়ুর টানাপোড়ান, গোল ব্যবধান, বাদ হয়ে যাবার সম্ভাবনা এত সবকিছু মাথায় ঘুরছিল বার্সা খেলোয়াড়দের। সবকিছুকে সরিয়ে রেখে জয় পেতেই মাঠে নেমেছিল কাতালানরা, তার প্রতিফলন ঘটে ম্যাচ শুরু হবার মিনিট তিনেকের মধ্যেই। সুয়ারেজের হেড থেকে করা গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় বার্সালোনা। মুহুর্তেই সকল মানসিক চাপ যেন স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে পিএসজির মাথায়।

বার্সার একের পর এক আক্রমণ সামাল দিতে দিতে দিশেহারা পিএসজির রক্ষনভাগের খেলোয়াড় কুরজাওয়া করে বসেন আত্মঘাতী গোল হাফ টাইমের ঠিক পাঁচ মিনিট আগে। ২-০ গোলে এগিয়ে মোট গোল ব্যবধান ২-৪ এ নামিয়ে বিরতিতে যায় কাতালানরা। আশায় বুক বাঁধতে থাকেন বার্সা সমর্থকেরা আর ফুটবল বিশ্ব অধীর অপেক্ষায় ছিল অবিস্মরণীয় কোন মুহুর্তের সাক্ষী হবার।

বিরতির পর পিএসজির রক্ষন দূর্গ যেন বনে যায় তাসের ইমারত। নেইমার, সুয়ারেজ, মেসিদের অলআউট আক্রমণ সামল দিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় সিলভা, মারকুইনহো৷ টালমাটাল পিএসজি রক্ষনভাগ ডি-বক্সের ভেতরে করে বসে ভুল, ফলাফল পেনাল্টি। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মেসি ঘাড়ে চলে আসে দায়িত্ব দলের আশা বাঁচিয়ে রাখবার। নিরাশ করেননি তিনি। বার্সা এগিয়ে যায় ৩-০ গোলে। সেদিন বার্সার বিধ্বংসী রুপের প্রমাণ ৭০ শতাংশ বল পজিশন আর ১০ টি গোলবার অভিমুখে শট৷ সেদিনটা ছিল শুধুই বার্সার। তবে স্রোতের বিপরীতে, অসাধারণ এক ভলি শটের কল্যাণে ম্যাচের ৬২ মিনিটে গোল আদায় করে নেন পিএসজি ফরোয়ার্ড এডিনসন কাভানি।

বার্সার শেষ আটে যাবার স্বপ্ন খানিক মলিন হয়ে যায়। কেননা এ্যাওয়ে গোলের হিসেবে বার্সা ম্যাচটি যদি ৫-১ গোলেও জেতে তাহলেও পিএসজি চলে যাবে পরের রাউন্ডে। জিততে হলে তখন প্রয়োজন আরো ৩ টি গোল এবং গোল খাওয়া থেকে বিরত থাকা। সমর্থকদের মনে আতংক বাড়তেই থাকে। কাতালানদের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে নিজেদের পথ সুগম করছিলেন পিএসজির খেলোয়াড়েরা। ৮৭ মিনিট পর্যন্ত গোল বার যেন বুকে আগলে রেখেছিলেন তারা। তার পর মূহুর্তেই ডি-বক্সের খানিকটা বাহিরে করা ফাউলে ফ্রি-কিক পায় বার্সালোনা। নেইমারের ডানপায়ে করা ফ্রি-কিক হয়ত বহুকাল মনে রাখবে পাগলাটে সমর্থকেরা। কি ফুটবলিয় সৌন্দর্যই না ছিল সে গোল। ঠিক গোল বারের উপরের বাম কর্ণার দিয়ে বলটি জড়িয়ে যায় জালে।

খেলা গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে। রেফারির নির্দেশ মতে আরো মিনিট পাঁচেক খেলা বাকি তখন। বার্সার দু’পর্ব মিলিয়ে জিততে হলে চাই আরো ২ গোল। অতিরিক্ত সময়ের ১ মিনিটের মাথায় সুয়ারেজকে পেনাল্টি এরিয়ায় ফাউল করার সুবাদে আরো একটি পেনাল্টি পেয়ে যায় বার্সা, সে পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করেন নেইমার।

খেলা বাকি তখন আর ৪ মিনিট। এই ৪ মিনিট ন্যু ক্যাম্পে থাকা প্রায় লাখখানেক মানুষের কাছে হয়ত ৪ সেকেন্ড মনে হয়েছিল। আশার প্রদীপ নিভু নিভু করছিল। তবে ৮ মার্চ ২০১৭ দিনটি যেন বার্সার ছিল, নেইমারের ছিল। তিনি কি করে আশাহত করতেন এত সমর্থকদের? করেননি সেদিন নেইমার আশাহত অসাধারণ রক্ষণভেদ করা পাস বাড়িয়ে দেন সার্জিও রবার্তোর দিকে। রবার্তো সেই বল জালে জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি। সেই গোলটি তৈরি করলো আরেক ইতিহাস। রেকর্ড বুকে সেদিন হলো কাটাছেঁড়া।

এমনই আরেক রেকর্ডের দারপ্রান্তে আবার সেই বার্সা-পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসরে শেষ ষোলোতে আবারও তারা মুখোমুখি। বার্সা ঘরের মাঠে হেরেছে ৪-১ গোলে। রক্ষন নিয়ে ধুকতে থাকা বার্সা প্যারিসে গিয়ে জয় নিয়ে আসতে পারবে কি না তা দেখতে আগামী ১১ মার্চ টিভি সেটের সামনে বসে যাবে কোটি সমর্থক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link