More

Social Media

Light
Dark

বিশ্বকাপে যেদিনটা শুধুই সাকলাইনের

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট এখন ধ্বংসপ্রায়। একসময় বিশ্ব ক্রিকেটে দাপট দেখানো এই দলটা এখন হরহামেশাই প্রতিপক্ষের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করছে। এই দলটাই নব্বইয়ের দশকে বিশ্বের শক্তিশালী দলগুলোকে হারিয়ে দিত দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্সে।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছিল দেশটি। সেবার বেশ ভাল দল নিয়েই বিশ্বকাপের মঞ্চে এসেছিল জিম্বাবুয়ে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরুতেই হোঁচট খেতে হয় নিল জনসন, হেনরি ওলোঙ্গাদের। ওই ম্যাচে পাকিস্তানি পেসারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের আড়ালে হ্যাটট্রিক কীর্তি গড়েছিলেন অফস্পিনার সাকলাইন মুশতাক।

পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটা ছিল বাঁচা মরার লড়াই। টানা তিন ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে প্রায় অবস্থা ছিল আকরাম বাহিনীর। সেখান থেকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। সেবার ফাইনালেও পৌঁছে যায় আকরাম-মুশতাকরা।

ads

হিথ স্ট্রিক, হেনরি ওলোঙ্গাদের বোলিং দাপটে সেদিন দাঁড়াতেই পারছিলেন না পাকিস্তানি ব্যাটাররা। একপ্রান্তে সাঈদ আনোয়ার একাই লড়ে যাচ্ছিলেন। আরেকপ্রান্তে বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে। ওপেনিং জুটিতে আসে ৯৫ রান।

একপ্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাট করে সাঈদ আনোয়ার তুলে নেন ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি। আনোয়ারের ব্যাটেই ওই ম্যাচে ২৭১ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। পাঁচ ব্যাটার ফিরেছিলেন এক অঙ্কের ঘরে। ওয়াজতুল্লাহ ওয়াস্তি ও শহীদ আফ্রিদি ছাড়া কেউই পেরোতে পারেননি ত্রিশের কোটা।

এই রান তাড়া করার সক্ষমতা ছিল জিম্বাবুয়ের। তবে সক্ষমতাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। লক্ষ্যমাত্রা তাড়া কর‍তে নেমে পাকিস্তানি পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ৫০ রানেই দলের ৪ উইকেট নেই। আব্দুল রাজ্জাক, আজহার মেহমুদের জাদুকরী বোলিংয়ে ৯৫ রানে ৬ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।

ম্যাচ থেকে তখন ছিটকে গেছে জিম্বাবুয়ে। সবার শেষে যেন মুশতাকের শুরু। অপেক্ষা জাদুকরী এক স্পেলের।

৪০তম ওভারের প্রথম বলে হেনরি ওলোঙ্গাকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেললেন। পরের বলে অ্যাডাম হাকলেও একই ভাবে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে শিকার করলেন। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার মুশতাকের সামনে হ্যাটট্রিকের হাতছানি। ওভারের তৃতীয় বলে পমি এমবাঙ্গুয়াকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে শিকার করলেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকের।

ওভালে সেদিন দুর্দান্ত এক রেকর্ড গড়েছিলেন মুশতাক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। বিশ্বকাপ ইতিহাসেও এটি ছিল দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। ওয়াসিম আকরামের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দুইবার হ্যাটট্রিক শিকারের কীর্তি গড়েন সাকলাইন মুশতাক। এর আগে ১৯৮৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নাগপুরে প্রথম বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন ভারতের চেতন শর্মা।

আব্দুল রাজ্জাক ও সাকলাইন মুশতাকের জোড়া তিন উইকেট শিকারে ১২৩ রানেই গুড়িয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ১৪৮ রানের দুর্দান্ত এক জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পরই টুর্নামেন্টে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতে দাপট দেখিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় দলটি। ফাইনালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে পরাজিত হয়ে সেবার শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় পাকিস্তানের।

ওই বিশ্বকাপের ১০ ম্যাচে ৪.৫২ ইকনমিতে ১৭ উইকেট শিকার করেন মুশতাক। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ও টুর্নামেন্টে পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি। মুশতাকের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে সেবার ফাইনালে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকটা ছিল তাঁর সেরা মুহূর্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link