More

Social Media

Light
Dark

ওয়াকার ইউনুস ‘দ্য ডেডলিয়েস্ট’

‘তুমি আগামী মাসে পাকিস্তান দলের হয়ে শারজাহ যাচ্ছ!’

কথাটা, অন্য কেউ বললে হয়ত ১৮ তম জন্মদিনের অপেক্ষায় থাকা ওয়াকার ইউনুস হেসে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু, কথাটা যে বললেন স্বয়ং ইমরান খান, পাকিস্তানের অধিনায়ক।

আগের দিন টিভিতে ওয়াকারকে দেখে পরের দিনই জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করে বসেন ইমরান। ততদিনে ওয়াকার কেবল ছয়টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। আপাত দৃষ্টিতে বিরাট ‘খেয়ালি’ এক সিদ্ধান্তই ক্রিকেট বিশ্বকে দারুণ এক তারকা উপহার দেয়।

ads

‘বুরেওয়ালা এক্সপ্রেস’ আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে পেস বোলিংকে অন্য একটা মাত্রা দেন। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দ্রুততম সময়ে ৫০, ৩০০, ৩৫০ ও ৪০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড আজও তাঁর দখলে।

ওয়াকার ইউনুস কিংবদন্তি ছিলেন নি:সন্দেহে। কিন্তু, তিনি সর্বকালের সেরা পেসার হতে পারেননি। শুধু তাই নয়, তাঁকে পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা মানতেই নারাজ অনেকে। সেই জায়গাটা দখল করে আছেন ওয়াসিম আকরাম।

যদিও, অনেক পরিসংখ্যানেই এগিয়ে আছেন ওয়াকার। বিশেষ করে ওয়াকার ম্যাচ জেতানোর দক্ষতায় ওয়াসিমের থেকে এগিয়ে। ওয়াসিম ৩৫৬ টি ওয়ানডে খেলেছেন যেখানে পাকিস্তান ১৯৯ টি ম্যাচ জিতেছে। অপরদিকে ওয়াকার ২৬২ ওয়ানডে খেলেছেন সেখানে পাকিস্তান ১৪৯ টি ম্যাচ জিতেছে।

এবার প্রশ্ন আসতে পারে, জয় পাওয়ার ম্যাচ গুলোতে কার অবদান কতটা। জয় পাওয়া ১৯৯ টি ম্যাচে ওয়াসিম উইকেট পেয়েছেন ৩২৬ টি। পাঁচ উইকেট ৬ বার আর ৪ উইকেট ১২ বার। ম্যাচ সেরা ২২ বার, ও সিরিজ সেরা দুই বার।

অন্যদিকে, ওয়াকার ২৭৮ টি পেয়েছেন জয় পাওয়া ১৪৯ টি ম্যাচে। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ১১ বার আর ৪ উইকেট ১০ বার। ১৬ বার ম্যাচ সেরা আর তিনবার সিরিজ সেরা হয়েছেন।

এবার আসা যাক, টেস্টের পরিসংখ্যান। ১০৪ টি টেস্ট খেলে ৪১ টিতে জিতেছেন ওয়াসিম। সেখানে উইকেট পেয়েছেন ২১১ টি। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ১৩ বার। ১২ বার ম্যাচ সেরা ও তিনবার সিরিজ সেরা হয়েছেন।

অপরদিকে ওয়াকার ইউনুস ৮৭ টি টেস্ট খেলেছেন। পাকিস্তান এর মধ্যে ৩৯ টিতে টেস্ট জিতেছে। এখানে ওয়াকার উইকেট পেয়েছেন ২২২ টি। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ১৪ বার। ছয়বার ম্যাচ সেরা হওয়ার পাশাপাশি চারবার সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি।

বোঝাই যাচ্ছে, ওয়াসিমের চেয়ে কিছুটা হলেও প্রভাব বেশি ছিল ওয়াকারের। তবে, তাকে সর্বকালের সেরা না মানার পেছনে আরও কিছু কারণও আছে। এর মধ্যে দু’টি কারণ খুব বড় – প্রথমটা আক্ষেপ, দ্বিতীয়টা দলের অন্দরমহলের রাজনীতি।

প্রথমত, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের আগে পরে দারুণ পারফর্ম করার পরও বিশ্বকাপ খেলা হয়নি ওয়াকারের। কারণ, তিনি স্ট্রেস ফ্র্যাকচারে টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে ছিটকে যান তিনি। বিশ্বকাপ না খেললেও তিনি সেই বছরে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন।

আর দ্বিতীয় কারণটা হল, নিন্দুকেরা মনে করেন, ওয়াকার তার সবচেয়ে স্মরণীয় সময়টা কাটাতে পারতেন ওয়াসিম আকরামের অধিনায়কত্বে। তবে, ওই সময় একাদশেই তাঁকে খুব একটা জায়গা দেওয়া হত না।

শোয়েব আখতারের উত্থান হয়ে গিয়েছে ততদিনে, পেস বোলিং অলরাউন্ডার আজহার মেহমুদ আছেন, আর ওয়াসিম তো অধিনায়কই, তিনি তো থাকবেনই। ফলে, ওয়াকার আসলে তাঁর সেরাটা কখনও দেওয়ার সুযোগই পাননি।

তাহলে, ক্রিকেট রোম্যান্টিকরা যে ‘টু ডব্লিউ’-এর মধ্যে বিরাট বন্ধুত্ব খোঁজার চেষ্টা করেন, তা কি ভিত্তিহীন?

সেটা ভিত্তিহীন হোক কিংবা না হোক, দু’জনের যৌথ অর্জনও কম নয়। এক সাথে তাঁরা যে ৫৬ টেস্ট খেলেছেন, তাতে ২২.৩৯ গড়ে নিয়েছেন ৪৭৬ উইকেট। সুইং বোলিংয়ের এমন জুটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link