More

Social Media

Light
Dark

গঙ্গার ধারে আইপিএল শিরোপার তৃতীয় ঝড়

তোরা সব জয়ধ্বনি কর, তোরা সব জয়ধ্বনি কর। গঙ্গার কোল ঘেষে বেজেছে উৎসবের সানাই। সাথে তাল মেলাচ্ছে ঢাক, ঢোল আর কাঁসর। মোহনবাগান আর ইস্ট বেঙ্গলে বিভক্ত গোটা কলকাতা হয়েছে একত্র। উৎসব যে এবারে শিরোপার। বছর যখন দশ খানা হল, ঠিক তখনই আবার শিরোপা এলো।

সেই ২০১২ ও ২০১৪, দুই দফা শিরোপা হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। এরপর রীতিমত হয়েছে অপেক্ষা। তারকার কমতি হয়নি। ছিলনা পারফরমারের অভাব। তবুও কোথাও একটা থেকে গিয়েছিল ফোঁকর। কিছুতেই যেন সমীকরণের বাম পাশের সাথে মেলানো যাচ্ছিল না ডান পাশকে।

অবশেষে ‘লাকি চার্ম’ ইংরেজি শব্দজোড়া সত্যি হল। গৌতম গম্ভীরের ফেরাতেই যেন আবার শিরোপা কলকাতার ঘরে উঠল। অথচ টুর্নামেন্টের শুরুতে কত না গুঞ্জন উঠল। এই দল আর কতদূর যাবে, সেই সংশয়ে ছেয়ে গেল। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আসর মঠে তখনও গড়ায়নি। এর আগেই জার্সি নিয়ে এক ফিরিস্তি নিন্দার ঝড় বয়ে গেল।

ads

শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বে দলটা মাঠে কিছু করে দেখানোর অপেক্ষায় ছিল। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই সে স্পৃহার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের আসরে। রাউন্ড রবিন লিগে টেবিলের সবার উপরের স্থানটা দখল করে নেয় দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দল। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২০ খানা পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে অবস্থান।

প্রথম কোয়ালিফায়ারে উড়তে থাকা সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে স্রেফ উড়িয়ে দিলো কলকাতা। আট উইকেট বড় জয়ে ফাইনালে উঠে যায় ভেঙ্কেটেশ আইয়ার আর শ্রেয়াস আইয়ারের যুগলবন্দীতে। সেদিন বল বাকি ছিল ৩৮টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিবেচনায় বিশালের থেকেও সম্ভবত আরও বড় জয়।

এরপর ঘুরে ফিরে সেই হায়দ্রাবাদই এলো ফাইনালে। এদফা চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামের গোলকধাঁধাতে গিনিপিগ যেন হায়দ্রাবাদের দুর্ধর্ষ সব ব্যাটার। তাদেরকে ঘোল খাওয়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি মিচেল স্টার্ক, হার্শিত রানারা। হাবুডুবু খেয়ে কোন মতে ১১৩ রান স্কোরবোর্ডে। শিরোপা থেকে কলকাতার দূরত্ব তখন ১১৪ রানের।

তৃতীয় শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খান যেন দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতেই চাইলেন না। হয়ত তার মনের কথা জেনে গিয়েছিলেন ভেঙ্কেটেশ আইয়ার। ওই যে টেলিপ্যাথি বোধহয়। ব্যাস তিনি তাণ্ডব নৃত্য করলেন বাইশ গজে দাঁড়িয়ে। হায়দ্রাবাদকে ফাইনালে একটু ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগই দিতে চাইলেন না।

সেই ভেঙ্কির ব্যাটেই এসেছে শিরোপা। জয়সূচক রানটায় লেগেছিল তার ব্যাটের আলতো ছোঁয়া। তাতে করেই চেন্নাইয়ের আকাশে কলকাতার উৎসবের আতশবাজি। কি এক দাপুটে শিরোপা জয়! লিগ পর্যায় থেকে প্লে-অফ কোথাও এক রত্তি ছাড় দেয়নি কলকাতা। এমন একপেশে ফাইনাল আইপিএলের ইতিহাসেও ছিল বিরল।

এভাবেই সম্ভবত শিরোপা জিততে হয়। এভাবেই অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটাতে হয়। গৌতম তার গম্ভীর চেহারা নিয়ে জানেন শিরোপা জয়ের মন্ত্র। অভিমান ভুলে কলকাতার ডেরায় তিনি ফেরা মাত্রই শিরোপা দিয়েছে ধরা। খেলোয়াড়দের অবদান অবশ্য নেহায়েত কম নয়। তবে গম্ভীরের নেওয়া ছোট ছোট বহু সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে গোটা দলকে। পিঞ্চ হিটার সুনীল নারাইনকে ফিরে পাওয়া সেসবের অন্যতম।

তাইতো শেষতক গৌতমও থাকেননি গম্ভীর হয়ে। সময় যে উল্লাসের, সময় যে আনন্দের। শিরোপা জয়ের আনন্দে গঙ্গায় গা ভাসিয়ে দেওয়ার সময়। জৌলুশের ট্রফিটা তৃতীয় দফা হয়েছে যে কলকাতার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link