More

Social Media

Light
Dark

পিংক টেস্ট কী ও কীভাবে

ছবিতে দেখতে বলটা লালচে। কাছে নিয়ে দেখলে একটু অন্যরকম। ভারতের বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন বলেছেন, কাছ থেকে বলটাকে দেখতে কমলা রংয়ের। অথচ এই বলের নাম নাকি ‘পিংক বল’; বেগুনি বল!

রং নিয়ে আর কথা না বলি। এই তো আহমেদাবাদে ২৪ তারিখ দুপুর বেলায় শুরু হতে যাচ্ছে আরেকটা পিংক টেস্ট।

দুপুর বেলায় টেস্ট শুরু!

ads

এখানেই তো আসল ব্যাপারটা। দুপুর বেলায় শুরু, বিকেল বেলায় ‘লাঞ্চ’, রাতের বেলায় শেষ; টেস্ট একেবারে চেহারা বদলে হাজির হয়েছে মানুষের সামনে। পিংক টেস্ট হচ্ছে আসলে বেশ আগে থেকেই। ২০১৫ সাল থেকেই কমবেশি প্রতি বছর এমন টেস্ট হচ্ছে পৃথিবীতে।

গোলাপি বল অনেক আগে থেকেই ছিলো পৃথিবীতে। সব দলই এই বল দিয়ে দিবারাত্রির টেস্ট খেলে। তারপরও ব্যাপারটা ঠিক ‘গা সওয়া’ হয়নি এখনও। আমরা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না এই দিবারাত্রির টেস্টে পার্থক্যটা আসলে কী হয়। কেনো বোলাররাও আরও ঘাতক হয়ে ওঠেন, কেনো ব্যাটসম্যানরা আরও অসহায় হয়ে পড়েন এবং কেনো কিছু ব্যাটসম্যান গোলাপি বলের টেস্ট খেলতেই চান না!

এই সুযোগে গোলাপি বল সম্পর্কে দু চারটে কথা জেনে নেওয়া যাক।

  • গোলাপি বল কেনো?

২০১৫ সালের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হতো দুই রংয়ের বলে-সাদা ও লাল। বিভিন্ন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কথা মাথায় রেখেও বলা যায় ক্রিকেট বলের আদি রং হচ্ছে লাল। এই লাল বল দিয়েই টেস্ট ও প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলা হয় এবং হতো।

আদিকাল থেকে এই লাল বল ব্যবহার হয়ে আসছে ক্রিকেটে। এমনকি শুরুর দিকে ওয়ানডে ক্রিকেটও লাল বলেই খেলা হতো। কিন্তু দিবারাত্রির ওয়ানডে শুরু হওয়ার পর সাদা বল চালু হলো।

ফ্লাড লাইটের আলোয় লাল বলটা ভালো দেখা যায় না। ফলে ওটাকে ব্যাটসম্যান ও ফিল্ডারদের চোখে আরও উজ্জল করে তুলতে সাদা বলের আবির্ভাব হলো। আপাতত একটা সংকটের সমাধাণ হলো। এরপর টি-টোয়েন্টি এলেও সাদা বল চলতে থাকলো।

কিন্তু মুশকিল হলো, দিবারাত্রির টেস্ট বা প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট চালুর চিন্তা এলে।

নব্বইয়ের দশক থেকেই সারা দুনিয়ায় টেস্ট, তথা দুই ইনিংসের ক্রিকেটের দর্শক কমতে শুরু করে। কর্মব্যস্ত জীবনে পাঁচ দিন ধরে সকাল-সন্ধ্যা ক্রিকেটের পেছনে ব্যয় করা বেশিরভাগ মানুষের জন্যই কঠিন হয়ে যায়। আর তাদের সামনে বিকল্প হিসেবে সে সময় ওয়ানডে ক্রিকেট ছিলো। পরে টি-টোয়েন্টি আসায় আরও সংকটে পড়ে যায় টেস্ট। এই সময় বড় দৈর্ঘের ম্যাচে দর্শক বাড়াতে দুনিয়ার নানা প্রান্তে নানা আইডিয়া কিলবিল করছিলো।

সেসব আইডিয়ার একটা ছিলো দিবারাত্রির টেস্ট। বলা হলো, মানুষ দিনের কাজ শেষ করে বিকেল বেলা মাঠে গিয়েও যাতে খেলা দেখতে পারে, সে জন্য টেস্টের এই পদ্ধতিটা খুব কাজে দেবে।

আর এই সময় প্রশ্নটা এলো, কী বলে খেলা হবে?

চিরায়তভাবে টেস্টের যে বল, সেই লাল বলে দিবারাত্রির ম্যাচ খেলা সম্ভব না। কারণ, লাল বল রাতে ভালো দেখা যাবে না। সাদা বল? না, এটাও চলবে না। কারণ, সাদা বল ৮০ ওভার টেকে না। টেস্টে একটা বলকে কমপক্ষে ৮০ ওভার আয়ু পেতে হয়। কিন্তু সাদা বল ৫০ ওভারের পর ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায় প্রায়। আসলে ৪০ ওভার পরই এই রঙের বলগুলো রঙ হারিয়ে ফেলে। ইদানিং ওয়ানডেতে তাই দুই প্রান্ত থেকে দুটো নতুন সাদা বল ব্যবহার করা হয়। সেই সাথে সাদা পোশাকে সাদা বলে খেলাটাও একটা বিড়ম্বনা। ওতে বল প্রায়শ চোখের আড়াল হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।

  • তাহলে উপায়?

কমলা বল, সবুজ বল; নানা রং ভাবা হলো। শেষ অবধি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বললো, গোলাপি বলই সঠিক সমাধান। এটা লাল বলের কাছাকাছি। তবে ফ্লাড লাইটের আলোয় ভালো দেখা যায়। ২০০০ সালে তারা গায়না ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগের মধ্যে প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ আয়োজন করলো ফ্লাড লাইটের নিচে এবং সেখানে বল ছিলো গোলাপি। এরপর অস্ট্রেলিয়াতে গোলাপি বলের ব্যবহার করা হলো। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে দেখা গেলো বলটা দ্রুত রং হারিয়ে ফেলছে। ফলে বাড়তি রংয়ের আস্তরন দেওয়া হলো। তাতেও কাজ না হওয়াতে ধাতব পালিশ করা হলো। আর এভাবে পরীক্ষা চলতে থাকলো।

অবশেষে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ফ্লাড লাইটের নিচে টেস্ট খেলতে নামলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। কৌলিন্য পেলো গোলাপি বল।

  • গোলাপি বল কেমন?

ভালো।

আচ্ছা। জিনিসটা কেমন, সেই কথা? গোলাপি বল একটু অন্যরকম। সাদা বা লাল বলের চেয়ে তার আচরণ একটু ভিন্ন। এটা পেসারদের হাতে পড়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে একটু বেশি সুইং করে। এটার রং অনেক বেশি সময় টেকে। ওজনে সামান্য একটু বেশি। তবে বাকি বলের চেয়ে এসজি গোলাপি বল দ্রুত ছোটে বলে ফিল্ডাররা দাবি করেন।

একটু খতিয়ে দেখা যাক।

প্রথম কথা হলো গোলাপি বলের সিম বা সেলাইয়ের অংশটা সাদা ও লাল বলের চেয়ে কয়েক মিলিমিটার বেশি চওড়া। আর এই সিমের ওপরই নির্ভর করে পেসারদের বলের নড়াচড়া। তারা সিমটা যেদিকে চাপ দিয়ে উইকেটে ফেলেন, তার বিপরীত দিকে বল সুইং করে। ফলে এটা সহজেই বোঝা যায় যে, সিম চওড়া হওয়াতে এই বলটা বেশি সুইং করবে।

এর সাথে যোগ করুন এসজি কোম্পানির রীতি। তাদের সব বলের সিম হাতে সেলাই করা হয়। ফলে একটু বেশি বাউন্স পায় বল। সেটা আরও বেশি পাবে এই গোলাপি বলে।

গোলাপি বলের উজ্জলতা অন্য বলের চেয়ে বেশি। এর একটা কারণ হলো এই রংটা টেকসই করার জন্য বলের ওপর ধাতব একটা পালিশ বা ল্যাকার করা হয়। এর ফলে বলটা অনেক বেশি সময় ধরে চকচকে থাকে। এটা আবার সাকিব আল হাসানদের বলে বড়াই করতে যাবেন না। কারণ, এই চকচকে ব্যাপারটা স্পিনারদের খুব অপছন্দ। বলে যতো সময় ধরে উজ্জলতা থাকবে, স্পিন ততো সময় খুব ভালো করবে না সে। তাহলে বল পুরোনো না হলে স্পিনাররা টার্ন করাবে কখন? বুঝতেই পারছেন, এই বল স্পিনারদের বন্ধু হবে না।

গোলাপি বল বানাতে অনেক সময় লাগে। এটা সাধারণ বল তৈরিতে তিন চার দিন লাগে। কিন্তু গোলাপি বল তৈরি করতে ৭-৮ দিনও লাগতে পারে। সব বলের ভেতরেই ধাতব একটা পরত থাকে কর্ক ও চামড়ার মাঝে। এই বলে সেই ধাতব পরতটা একটু বেশি পুরু। ফলে ওজনটা বেশি।

শীতের আশেপাশে এই উপমহাদেশে আরেকটা সমস্যা যোগ করুন। এই ধাতব পরতের ওপর শিশির জমে বলের ওজন আরও বাড়িয়ে দেবে। ফলে এটা আরও বেশী আনপ্লেয়েবল হয়ে উঠবে।

বল শিশিরের প্রভাবে আরও ভারি হবে।

এ তো গেলো সব কাগজের কথা। খেলা দেখে আপনাদেরও বুঝি কিছু ধারণা হয়ে গেছে, কোথাকার বল কোথায় গড়ালো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link