More

Social Media

Light
Dark

গোলকধাঁধাঁয় টেস্ট ক্রিকেট

বরাবরই সাদা পোশাকে বেশ দূর্বল টাইগাররা।

২০ বছরের বেশি সময় ক্রিকেট খেললেও সাদা পোশাকে ব্যর্থতার কারণ বের করতে পারেনি খোদ বিসিবি! দায়টা কাদের খেলোয়াড় নাকি নির্বাচক? ম্যাচ শেষে পেস কনফারেন্সে ‘আমরা ভুল থেকে শিখছি’ বলাটা এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। বিসিবির উদ্ভট একাদশ সিলেকশন নিয়ে তৈরি গোলক ধাধার মার-প্যাচ স্পষ্ট নয় ক্রিকেট সমর্থকদের কাছেও!

চলতি উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে কাইল মেয়ার্সের চোখ ধাধানো রেকর্ডময় ইনিংসে ৩ উইকেটের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। স্কোয়াডে পাঁচ পেসার থাকলেও একাদশে সুযোগ পান মাত্র এক পেসার। তাও দুই ইনিংসে মুস্তাফিজ বল করেন মাত্র ২৮ ওভার! চার স্পিনার নিয়ে ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ বধ করতে গিয়ে নিজেদের করা ফাঁদে পড়ে দল। আগের সিরিজেই ঘরের মাঠে নব্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে লজ্জাজনক হারের পরেও টনক নড়েনি বিসিবির, একই ভুল উইন্ডিজের বিপক্ষেও!

ads

পর্যাপ্ত সুযোগে অভাবে পেসাররা দেশের বাইরে উইকেট নিতে প্রতিনিয়ত খাবি খায়! অভিজ্ঞতার অভাব, অচেনা কন্ডিশন, পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়া সব মিলিয়ে রাহী-এবাদতরা একপ্রকার কোনঠাসা হয়ে পড়ে। তাহলে সাদা পোশাকে ভালো ফল আসবে কিভাবে?

এরপর আলোচনার আরেক নাম নাজমুল শান্ত। যিনি উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি! ঘরোয়া ক্রিকেট ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের পার্ফরমেন্স বিবেচনায় ওয়ানডে ও টেস্ট দলে সুযোগ পেলেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন শান্ত। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে রান ২৫ ও ০ তারপর ২য় টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছেন মাত্র ৪ রান! ওয়ানডে সিরিজেই সাকিবকে সরিয়ে শান্তকে তিনে খেলানো নিয়ে বেশ সমালোচনা হলেও ম্যানেজমেন্ট তা আমলেই নেননি! ঘরোয়া ক্রিকেটে এক সেশন পারফরম করা শান্তকে সুযোগ দিতে গেলো বিশ্বকাপে সেরাদের তালিকায় থাকা ইনফর্ম প্লেয়ারকে পজিশন ছাড়া করার মতো কান্ড করে বিসিবির নির্বাচক প্যানেল।

বলা হয় টেস্ট অভিজ্ঞদের খেলা। কিন্তু শেষ কয়েক ম্যাচে ঈর্ষনীয় পার্ফরমেন্স করলেও দলে নেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ! যার ব্যাখ্যা দেননি নির্বাচকরাও। প্রায় ২ বছর দলের সাথে থেকে পানি টানলেও জাতীয় দলে সুযোগ পাননি ইয়াসির আলী, কিন্তু পুরোদস্তুর ব্যর্থ একজন পার্ফম না করেও দলে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত! ২য় টেস্টে সাদমানের ইঞ্জুরিতে সুযোগ পেলো মিথুন কিন্ত প্রস্তুতি ম্যাচে পারফরম করেও বেঞ্চ গরম করছেন সাইফ হাসান! সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনা ইয়াসির আলীও হয়তো আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

সাকিবের ইঞ্জুরিতে স্কোয়াডের বাইরে থেকে ডাকা হলো সৌম্য সরকারকে। ওয়ানডেতে যে সৌম্যকে সাতে খেলানো নিয়ে বেশ সমালোচনা হলো সেই সৌম্যকে ২য় টেস্টে হুট করেই নিয়ে আসা হলো ওপেনিংয়ে! ফলাফল প্রথম ইনিংসে আউট শূন্য রানে। দোষ টা কি সৌম্যর? যে নিজেই জানে না পরের ম্যাচে তার আসল পজিশন কি, সে কোন ফর্মেটে নিয়মিত খেলবে! তাহলে তাকে দোষ দিয়ে লাভ কোথায়?

প্রথম টেস্টের একাদশে থাকা মুস্তাফিজ নেই ২য় টেস্টে, সুযোগ পেলেন রাহী! যেই সিদ্ধান্তে অবাক খোদ কমেন্ট্রি প্যানেলে থাকা ইয়ান বিশপ, আঞ্জুম চোপড়া, আতাহার আলীরা। মুস্তাফিজ ভালো বোলিং করেও ২য় টেস্টে নেই! আবার প্রথম টেস্টে রাহীকে কেনো খেলানো হলো না সে বিষয়ে তারাও হতবাক, সেই রাহীকেই আবার আনা হলো ২য় টেস্টে!

কাঠগড়ায় অবশ্য মুমিনুলের অধিনায়কত্বও! সঠিকভাবে বোলারদের ব্যবহার না করা, ফিল্ড সেটআপ সব মিলিয়ে অনেকটাও নেগেটিভ অবস্থানে মুমিনুলের অধিনায়কত্ব। রিভিউ নেওয়ার ব্যাপারেও বেশ দোটানায় পড়ছেন তিনি! সাথে ক্যাচ মিসের মহড়া তো রয়েছেই, প্রথম টেস্টে হারের অন্যতম কারণ এই ক্যাচ মিস। একপ্রকার পাল্লা দিয়েই সুযোগ মিস করেছেন শান্ত-লিটনরা।

এর দায়ভার অবশ্যই অধিনায়কের আছে। ম্যাচ হারের দায়ভারের সিংহভাগই থাকে অধিনায়কের ঘাড়ে। কিন্তু বিসিবির দায় টা কোথায়? নির্বাচকদের এমন মনগড়া প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ নিয়ে বিসিবির ব্যাখ্যা আছে কি? এভাবে ঘরের মাঠে খর্বশক্তির দলগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত সাদাপোশাকে লজ্জাজনক হারে বড় দায় কি বিসিবির উপর বর্তায় না?

কোন খেলোয়াড় কোন ফর্মেটে সেরা, কোন খেলোয়াড় কোন পজিশনে সেরা, পিচ কেমন হবে, মাইন্ড সেট আপ কেমন হবে এসব বিষয়ে যারা দক্ষতার পরিচয় দেয় না এমন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো সাফল্য আশা করা নেহায়েত বোকামি। এক পেসার নিয়ে মাঠে নামার মতো সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারে তাদের কাছ থেকে সাদা পোশাকে টাইগারদের সাফল্য আশা করা দিবাস্বপ্নের মতোই!

তবুও আমরা শিখছি, কতদিন শিখবো জানি না, এই শিক্ষার শেষ কোথায় কেউ জানে না! প্রতিনিয়ত জয়ের নেশায় আশায় বুক বাধে বাঙ্গালি ক্রিকেট ভক্তরা। বিসিবির এমন উদ্ভট সিদ্ধান্ত আর দায়িত্বহীনতায় সাদা পোশাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার সে বিষয়ে কারো দ্বিমত পোষনের কথা না।

পাশের দেশ ভারতেই শুভমান গিল, রিশাভ পান্টের মতো তরুনরা জাতীয় দলে এসে নজরকাড়া পার্ফরমেন্স করছেন। এর পিছনে একটিই কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিন পারফরম করা, বিভিন্ন লিগে ঈর্ষনীয় পারফরমেন্স করা, আইপিএল, ভিজয় হাজারী ট্রফি, রঞ্জির ট্রফির মতো লিগ গুলোতে নিজেদের প্রমাণ করা। ঘরোয়া ক্রিকেটে শতভাগ প্রস্তুত হয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পায় বিধায় এরা বিশ্বক্রিকেটে সহজেই মানিয়ে নেয়। অথচ তার ঠিক উল্টোটা আমাদের ক্ষেত্রে! ঘরোয়া ক্রিকেটে বা লিগে এক সেশনে পারফরম্যান্স যখন জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয়, পূর্ণ প্রস্তুতির আগেই যখন জাতীয় দলে খেলতে নামে তখনি ব্যর্থ হয় আর কিছু সুযোগের পর হারিয়ে যায় নাঈম ইসলাম, নাজমুল হোসেনদের মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link