More

Social Media

Light
Dark

টেস্টের যুদ্ধপ্রান্তে স্বাগতম…

ঘরের মাঠ,চেনা পরিবেশ তার উপর নিজেদের শক্তিনির্ভর স্পিন পিচ। উপলক্ষ্য টা তো সাজানো ই ছিল। সেটাকে সমর্থন করতেই যেন একাদশে জায়গা হলো মাত্র একজন পেসারের। প্ল্যান সিম্পল, স্পিন দিয়েই ঘায়েল করতে হবে স্পিনে মোটামুটি দুর্বল এই খর্বশক্তির উইন্ডিজ কে। সব প্ল্যানমাফিক এ এগোচ্ছিলো চট্টগ্রামে, অন্তত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস পর্যন্ত তো বটেই।

পিচ স্পিন ও করছে সাথে আনইভেন বাউন্স তো মরার উপর খাড়া’র ঘা, তাই হয়তো অধিনায়ক ৩৯৫ রান কে অসম্ভব ভেবেই অল-আউটের জন্য যথেষ্ট সময় থাকতেই ডিক্লেয়ার করলেন ইনিংস। তারপরের গল্প টা তরুন উইন্ডিজ দের, বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমী কে যে ভীষন বেদনাদায়ক স্মৃতি উপহার দিলেন কাইল মেয়ার্স-নক্রুমাহ বনার রা তা অনেকদিন মনে দাগ কেটে রয়ে যাবে।

তবে এটা একমাত্র উদাহরণ নয় চতুর্থ ইনিংসে পঞ্চম দিনে পাহাড়সম টার্গেট চেজ করে জেতার,তাই দুঃখ ভোলাতে রেকর্ড টার্গেট চেজ করে জেতা সেসব ম্যাচ নিয়েই একটু আলোচনা করা যাক।

ads

টেষ্ট ক্রিকেট হল ক্রিকেটের আদি সংস্করণ, হালের টি-টোয়েন্টি লিগ থেকে শুরু করে নবাগত টি-টেন আর ১০০ বলের টুর্নামেন্ট এর রঙ্গিন দুনিয়া আর ধুন্ধুমার বিনোদন ও যার আবেদন এতটুকু কমাতে পারেনি।

এখানে ম্যাচের রঙ পাল্টায় ক্ষণে ক্ষণে, প্রতি সেশনে উত্তেজনা, যেখানে এক দু ওভার ভালো করে ম্যাচ জেতা যায় না, ম্যাচ জিতলে হয় সেশন বাই সেশন জিতে, তাইতো এত বছরের এত পরিবর্তনের পরেও টেষ্ট ক্রিকেট বিরাজ করছে স্ব-মহিমায়।

আজকের লেখার বিষয় যদিও টেষ্ট ক্রিকেটের মাহাত্ম্য নিয়ে নয়, আজকের লেখা কয়েকটি কিংবদন্তি টেস্ট ম্যাচ নিয়ে। যে ম্যাচগুলতোতে সকল প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে অসাধ্য টার্গেট কে মাটিতে নামিয়ে এনে ইতিহাস রচনা করা হয়েছে।

  • দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া: পার্থ, ২০০৮

একদিকে ম্যাকগ্রা, ওয়ার্ন, গিলক্রিস্ট, ল্যাঙ্গার, মার্টিন দের রিটায়ারমেন্টের পরের অস্ট্রেলিয়া অন্যদিকে গ্রায়েম স্মিথের ক্যাপ্টেন্সিতে উদীয়মান এবিডি ভিলিয়ার্স, স্টেইন, ডুমিনি আমলারা

তবু ২য় ইনিংসে জনসনের ৮/৬১ এর বদৌলতে তৃতীয় ইনিংস শেষে প্রোটয়াদের টার্গেট দাঁড়ায় ৪১৪। ৪থ ইনিংস, ওভারসিস কন্ডিশন, ড্র করাটাও মোটামুটি অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল, সেই অসম্ভব টার্গেট টাকেই সবাই মিলে সেদিন মাটিতে নামিয়ে এনেছিল সাউথ আফ্রিকা, ভিলিয়ার্স-স্মিথের সেঞ্চুরি, সাথে আমলা-ক্যালিস আর অভিষিক্ত ডুমিনির হাফসেঞ্চুরি তে সেদিন পার্থে রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস।

  • ভারত-ইংল্যান্ড: চেন্নাই, ২০০৮

সেই ঐতিহাসিক চেন্নাই টেষ্ট, যেখানে মাঠের অসাধারন অর্জন গুলো বড্ড ফিঁকে হয়ে যায় মাঠের বাইরের এক ক্রুর সন্ত্রাসী হামলার কাছে।

কুখ্যাত ২৬/১১ মুম্বাই এটাকের সময়কার ঘটনা, ইংল্যান্ড ভারত সফরে ছিল, ৭ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পরে দুই ম্যাচের টেষ্ট সিরিজ, কিন্তু  মাঝখানেই বাতিল করতে হয় সিরিজ।

কিছুদিন পরেই এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দিতে টেষ্ট সিরিজ খেলতে আসে ইংল্যান্ড, চতুর্থ ইনিংসে ৩৮৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শেবাগের ৬৭ বলে ৮৩ ভিত গড়ে দেয়, সাথে উইনিং রান করা শচীন অপরাজিত থাকেন সেঞ্চুরি করে, ম্যাচ শেষে যেটাকে তিনি তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বলে ঘোষনা করেন।

  • ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া, লিডস, ২০১৯

প্যাট কামিন্সের বলে স্কয়ার ড্রাইভ করে জেতানো ‘স্যার’ বেন স্টোকস এর ওই সেলিব্রেশনকে ই বা ভুলতে পারে। একা হাতে অসাধ্য সাধন করে সেদিন নিজের নামকে এক অনন্য উচ্চতায় ই যে নিয়ে গেছেন তিনি। টেষ্ট ক্রিকেটের এলিট মেম্বার  ইংল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম ৩৫০+ টার্গেট তাড়া করে জেতার রেকর্ড হয়েছিল লিডস টেস্টে, যার জয়গাথা লিখেছিল অদম্য স্টোকস আর জ্যাক লিচ।

প্রথম ৭২ বল থেকে মাত্র ৩ রান, আর পরবর্তীতে সুইচ হিট, রিভার্স প্যাডল, স্কয়ার কাট আর অদম্য স্কুপে একের পর এক বাউন্ডারি, এই এক ইনিংসে নিজের সমস্ত রঙ চিনিয়েছেন স্টোকস, সাথে ইংল্যান্ড কে উপহার দিয়েছেন নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেষ্ট জয়

সাথে প্রতিবার বল মোকাবেলা করার আগে চশমার কাচ মুছে নেয়া জ্যাক লিচ হয়ে গেছেন ইতিহাসের অংশ।

  • শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা: ডারবান, ২০১৯

দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশনটা এশিয়ান দের জন্য বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। তার উপরে যদি থাকে ৩০৪ রান করার চাপ? ভেঙে পড়াটাই স্বাভাবিক, তাই না? ভেঙে পড়েছিল শ্রীলঙ্কাও, কিন্তু একজন তখনো হাল ছাড়েননি, চোখ মেলে স্বপ্ন দেখেছেন অসাধ্য সাধনের, আর স্বপ্নটা সত্যিও করে দেখিয়েছেন।

বলছিলাম কুশল পেরেরার কথা, চতুর্থ ইনিংসে সাউথ আফ্রিকার মাটিতে ৩০০+ টার্গেটে নিজেই দলের ৫০%+ রান করেও যে ম্যাচ জেতানো যায় সেটাতো তিনিই বাস্তব করে দেখিয়েছেন।

শেষ উইকেট জুটিতে রেকর্ড ৭৮ রান যোগ করে ম্যাচ জিতিয়ে প্রথম এশিয়ান দলে হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয় করার গৌরব এনে দেন শ্রীলঙ্কাকে, সাথে চতুর্থ ইনিংসের অন্যতম সেরা এক ইনিংস খেলে ইতিহাসে নিজের নাম লেখান কুসল।

  • অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ: অ্যান্টিগা, ২০০৩

সামনে বিশ্বের সেরা দল অস্ট্রেলিয়া, যারা অলরেডি ৩-০ তে সিরিজটা জিতে নিয়েছে, যাদের বোলিং এটাক সাজানো গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি, জ্যাসন গিলেস্পি আর স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল দের নিয়ে সেই  তাদের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসের পিচে ৪১৮ রান চেজ করার চাপ। এতগুলো চাপ ই কি তবে চন্দরপল-সারওয়ান দের থেকে সেরাটা বের করে এনেছল সেদিন?

সে টেষ্টের গল্পটা অনেকটা রুপকথার মতই, প্রথম ইনিংসে দু দলই ২৪০ রানে অল-আউট হলে টেষ্টের ভাগ্য গড়ায় এক ইনিংসে, দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসে চেনা রুপে, দুই ওপেনার জাষ্টিন ল্যাঙ্গার(১১১) আর ম্যাথু হেডেন (১৭৭) ওপেনিং জুটিতেই  ২৪২ রান তুলেন। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের টার্গেট দাঁড়ায় ৪১৮, শিবনারায়ণ চন্দরপল আর রামনরেশ সারওয়ানের সেঞ্চুরি আর সাথে ড্রেকস (২৭*) আর ব্যাঙ্ক (৪৭*) এর অপরাজিত জুটিতে বিশ্বরেকর্ড ভেঙ্গে জয় তুলে নেয় উইন্ডিজরা।

এরই মাধ্যমে ১৪২ বছরের টেষ্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড টা এখনো নিজেদের করেই রেখেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link