More

Social Media

Light
Dark

মহাকাব্যিক চেন্নাই টেস্টের পাতায় পাতায়

শহীদ আফ্রিদি যে কত বড় মাপের ক্রিকেটার হতে পারতেন তা একটা টেস্ট ম্যাচে বোঝা যায় খুব ভাল ভাবে! স্রেফ একটা, চেন্নাই টেস্ট – এই টেস্ট নিয়ে উপমহাদেশীয় আবেগ ছিল অন্যরকম।

এই অঞ্চলে ক্রিকেট আসলে অন্য যেকোনো খেলার চেয়ে অনেক বড় ব্যাপার, তবে নব্বই দশকে সেটা ছিল আরো কয়েক ধাপ ওপরে। খেলা, রাজনীতি, জাতীয়বাদ – অনেক কিছু মিলেমিশে একাকার হওয়াটা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।

১৪১ রানের ইনিংস খেলার পথে শহীদ, টেস্ট ক্রিকেটে নি:সন্দেহে সেটা তাঁর সেরা দিন ছিল।

পাকিস্তান ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলবে এটা মেনে নেয়নি ভারতের পাকিস্তান বিরোধীরা। সেই কারণে সিরিজ এক মাস আগেই দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠের (এখনকার অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম) উইকেট খুড়ে দেয় কে বা কারা, যাদের আমরা দুর্বৃত্ত বলে থাকি।

ads

আজহারউদ্দিন তখন ভারতের অধিনায়ক, ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তানের। সময়টা ১৯৯৯ সাল। পাক-ভারত ম্যাচ নিয়ে তখন অন্যরকম ফ্যাসিনেশন। ক্রিকেট ইতিহাসেরই সর্বকালের সেরা দ্বৈরথ তখন মাঠে, মাঠের বাইরে, মন্ত্রীসভায়, ক্যাবিনেটে, পাড়া-মহল্লায় কিংবা চায়ের আড্ডায়!

মহাকাব্যিক সেই টেস্টে দর্শকের উৎসাহ বরাবরের মতই ছিল তুঙ্গে।

দিল্লী থেকে ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় চেন্নাইতে, বিশ্বকাপের বছর, এমনিতেই বাড়তি প্রণোদনা তার ওপর ইন্ডিয়া পাকিস্তান ম্যাচ।

এই ম্যাচের যা স্মৃতি আমার মনে পড়ে সেটা হচ্ছে ‘ওয়াসিম আকরামের বিশাল ভক্ত আমি।’ তাই ওয়াসিমের জন্য খেলা দেখব! ডিডি ন্যাশনাল পাওয়া যেত তখন, সেখানেই সরাসরি সম্প্রচার।

১৩৬ রান করেন শচীন, কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবে।

টেস্ট ম্যাচের আগা-মাথা বুঝি না। তবে টিভিতে খেলা দেখায় দেখতেছি। কিন্তু, ততদিনে আফ্রিদি নামের ভূতও মাথায় প্রবল।

আফ্রিদি এই টেস্টে ওপেন করে সাঈদ আনোয়ারের সাথে। আফ্রিদির জীবনের অনেক ‘হয়তো’ আর ‘হতে পারতো’র মতোই এই জুটিটাও একটা ‘হতে পারতো’ অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটি।

প্রথম ইনিংসে ৫৩ রান করেন ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’ খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়, যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়াসিম আকরামের বিশেষ পরিকল্পনা ছিল তাঁর জন্য।

এই টেস্টে দুই ইনিংসেই তৎকালীন অন্যতম সেরা ওপেনার সাঈদ আনোয়ার ফ্লপ। এই টেস্টের নায়ক হওয়ার দৌঁড়ে ছিলেন অনেকে! মানে অনেকে মানে অনেকেই! তৎকালীন ইউসুফ ‘ইয়োহানা’, মইন খান, কিংবা ওয়াসিমের ৩৮!

কুম্বলের পকেটে ছয়টি উইকেট। ভারতের ইনিংসেও লিড এনে দেন, সুনীল যোশী, জাভাগাল শ্রীনাথরাই। তার আগে স্কোরবোর্ড চালায়, দ্রাবিড়ের ৫৩ ও গাঙ্গুলির ৫৪।

সেই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় শচীন তিনটা উইকেটও নেন।

কিন্তু ভেতরে একটা অস্ত্রোপচার চালিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অফ স্পিনার সাকলাইন মুশতাক। দ্রাবিড়, শচীন, আজহারউদ্দিনকে তিনি ফেরান প্যাভিলিয়নে।

তখনও দৃশ্যপটে আসল নায়করা আসেননি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে যে রানে পিছিয়ে ছিল তাতে মনে হল। দুই দফায় পাঁচ দিন ধরে ওয়ানডে খেলবে পাকিস্তান আর ভারত।

অনিল কুম্বলের আঘাত, ৪২ রানে নেই দুই উইকেট।

সেখানে নিজের রোল পেয়ে শহীদ আফ্রিদি খেলে দিলেন ১৪১ রানের একটি ইনিংস। ৭৩ স্ট্রাইক রেটে। পুরো টেস্টে কেবলমাত্র এই একটা জিনিসই আমার তখনকার মনে আছে। বাদবাকি যা কিছু মাথায় এসেছে সব আজ ইএসপিএন ক্রিকেট মান্থলির লেখা ও ইউটিউব দেখে।

সব মিলিয়ে ভারতের জন্য ওয়ানডে টাইপ একটা টার্গেট! ২৭১! ভারতের নিজেদের মাটিতে খেলা হলেও টেস্টের চতুর্থ দিনে এই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।

শচীন আউট, সাকলাইনদের উদযাপনই বলে দিচ্ছে সব।

এবারে মাঠে ভারতের নায়ক, শচীন টেন্ডুলকার। সর্বকালের সেরা, তৎকালীন পিক ফর্মে থাকা শচীন পারলেন না আফ্রিদিকে ক্রস করতে। সেই ক্রস করতে না পারায়, ভারতের সাথে পাকিস্তানের পার্থক্য ছিল ১২ রানের।

টেস্ট ক্রিকেটে ১২ রানের পার্থক্য কী সেটা বলা বাহুল্য। শচীন আফ্রিদি ছিল এই মাঠের সুপারস্টার! শচীন বড়টা, আফ্রিদি উদীয়মানটা কিন্তু এই টেস্টের জাভি হার্নান্দেজ ছিলেন সাকলাইন মুশতাক। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৮৭ রান দিয়ে ‘সাকি’ ১০ উইকেট নিয়ে নেন।

শচীনের বিদায়ের সাথে সাথেই ইতি ঘটে চেন্নাই টেস্টের

যদিও, শহীদ আফ্রিদি কিংবা সাকলাইন মুশতাক নয়। ১৩৬ রানের এক মাটি কামরানো, অনন্য ও অতিমানবীয় ইনিংসের সুবাদে সেই টেস্টের ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান শচীন। যদিও, নায়ক ছিলেন সাকলাইন-আফ্রিদিই।

দ্বিতীয় টেস্টেই ‘ঝাল মিটিয়েছিল’ ভারত। ভারতের আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা হয়ে ওঠেন আরেক লেগ স্পিন মায়েস্ত্রো অনিল কুম্বলে! এক ইনিংসেই ১০টা নিয়ে তিনি দিয়ে দেন ওভারট্রাম্প! সেটা আরেক ইতিহাস।

ইতিহাস গড়ার পর পাকিস্তান দল।

ভাল থাকবেন, স্মৃতির রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো সব সময় সুন্দর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link