More

Social Media

Light
Dark

টম হার্টলি, অনবদ্য অভিষেকে ইতিহাসের দুয়ারে

হায়দ্রাবাদের গ্যালারি জুড়ে গণ-জোয়ার বইছে তখন। কোনোভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটার অন্তিম মহারণে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলাটাই একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু দিন শেষে তা বৃথাই গেল। স্টেডিয়াম জুড়ে গগণ বিদারী চিৎকার, উচ্ছ্বাসে বোধহয় আলাদা একটা সাহসই ভর করেছিল শেষ ব্যাটার মোহাম্মদ সিরাজের মাঝে। তাই তো ডাউন দ্য উইকেটে তেড়েফুঁড়ে গেলেন।

কিন্তু যার বলে এগিয়ে এলেন, সেই টম হার্টলি তো গোটা ইনিংসেই স্পিন-ঘূর্ণিতে কুপোকাত করেছেন ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটাররা। সেখানে টেল এন্ডার, সিরাজ তো তাঁর কাছে নস্যি। হলও তাই। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়লেন সিরাজ। আর তাতেই ২৮ রান অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। যে জয়ের পথে একাই ৭ উইকেট নিয়েছেন টম হার্টলি।

বাঁ-হাতি এ স্পিনারের টেস্ট অভিষেক হয়েছে ভারতের বিপক্ষে এই টেস্ট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাত্র ২০ ম্যাচ খেলা এ ক্রিকেটারের জন্য ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে জায়গা পাওয়াটা অনেকটা আকস্মিকই ছিল। টেস্ট দলে নেই প্রতিষ্ঠিত স্পিনার। তার উপর ভারতের কন্ডিশনে সিরিজ। কোনো উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়েই তাই টম হার্টলির উপরে ভরসা রাখে ইংল্যান্ড।

ads

 

অভিষেক ইনিংসে পেয়েছিলেন শুভমান গিল আর লোকেশ রাহুলের উইকেট। তবে ওভার প্রতি রান দিয়েছিলেন প্রায় পাঁচের উপরে। সব মিলিয়ে শুরুতে কিছুটা স্নায়ুচাপেই বোলিংয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন এ স্পিনার। তবে ইংল্যান্ডের জয়ের পথে দ্বিতীয় যে বোলিংয়ে প্রয়োজন, তার নেতৃত্ব দিলেন অভিষিক্ত হার্টলিই।

ওলি পোপের ১৯৬ রানের সুবাদে ২৩০ রানের লিড নিয়ে আগেই লড়াই জমিয়ে তুলেছিল ইংল্যান্ড। তবে তখন পর্যন্ত জয়ের আশা করাটা ছিল নিতান্তই বোকামি-তুল্য। কিন্তু প্রথম ইনিংস চারশো পেরোনো ভারত এ ইনিংসে থামল ২০২ রানে। যে ব্যাটিং অর্ডার ধ্বসের মূল নায়ক কিংবা খলনায়ক ছিলেন টম হার্টলি।

শুরুটা করেছিলেন আগের ইনিংস দুর্দান্ত ব্যাটিং করা জয়সওয়ালকে ফিরিয়ে। ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে পতনের শুরু সেখান থেকেই। এক বল বাদেই বাঁ-হাতি এ স্পিনারের বলে আউট হয়ে ফিরে যান গিলও। এক প্রান্ত আগলে রেখে রোহিত শর্মা কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন। তবে কিছুক্ষণ তিনিও হার্টলির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান।

টপ অর্ডারের এই ভাঙন ভারত আর পরবর্তীতে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বলাই বাহুল্য, টম হার্টলি সেই প্রতিরোধটা গড়তে দেননি। ভারতের ইনিংসের চতুর্থ উইকেটটাও নেন তিনিই। এরপর শ্রীকর ভরতকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই ফাইফারের স্বাদ নেন ইংলিশ এ স্পিনার। ভারতের ইনিংসের শেষ ভরসা হয়ে ক্রিজে ছিলেন রবিচন্দন অশ্বিন। কিন্তু তিনিও একটা সময় পরে গিয়ে হার্টলির স্পিনজাল ভেদ করতে পারেননি। স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ফিরে যান অশ্বিন। এরপর অশ্বিনের মতো একই কাজ করতে গিয়ে আউট হন সিরাজও। হার্টলির সপ্তমে উইকেটে ততক্ষণে ম্যাচ জয়ের উচ্ছ্বাসে ইংল্যান্ডের উল্লাসে নিরব বনে গিয়েছে হায়দ্রাবাদের গ্যালারি।

৬২ রানে ৭ উইকেট। সব মিলিয়ে দুই ইনিংসে ১৯৩ রানে ৯ উইকেট। এমন অভিষেক নিশ্চয়ই ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি হার্টলি। তবে ইতিহাস তাঁকে ঠাই দিয়ে দিয়েছে এই টেস্ট দিয়েই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই যে মাত্র দ্বিতীয় স্পিনার যিনি অভিষেক টেস্টে নিলেন ৯ উইকেট। এর আগে ১৯৫০ সালে রবার্ট বেরি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৬ রানে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট।

দুর্দান্ত অভিষেক। সাথে ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানোর স্মৃতি। এমন স্মৃতি ধরে নিশ্চয়ই শুধু আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইবেন না টম হার্টলি। তাঁর সামনে যে এখন বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরার হাতছানি। ইংলিশ স্পিনার হিসেবে সেই পথেই নিশ্চয়ই হাঁটবেন তিনি।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link