More

Social Media

Light
Dark

চামিন্দা ‘আন্ডাররেটেড’ ভাস!

যখন সর্বকালের সেরা পেসার নির্ধারণের প্রশ্ন আসে, তাঁর নাম সেরা পাঁচেও কেউ রাখেন না। কিংবা যদি বলা হয় বাঁ-হাতিদের মধ্যে সেরা? – নাহ, সেখানেও নেই তিনি।

কিংবা শুধু যদি ওয়ানডের কথা বলি? না সেখানেও নেই তিনি। কিন্তু, বাস্তবতা হল ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন মোটে তিনজন – স্বদেশী মুত্তিয়া মুরালিধরণ, ও ‘টু ডব্লিউজ’ খ্যাত পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস।

তারপরও কেন চামিন্দা ভাস আন্ডাররেটেড? একজন ফাস্ট বোলারের অস্ত্র-শালয়ে যা যা থাকা দরকার তার সবই ছিল তাঁর। দুই দিকে স্যুইং করাতে জানতেন, ডেথ ওভারে ইয়র্কার আর কাটারগুলো ছিল খুবই কার্য্কর। একটা সময় অস্ত্র-শালাতে রিভার্স স্যুইংও যোগ হয়েছিল। আর সেটা দিয়েই তিনি উপমহাদেশে সফল পেসারদের একজন হয়ে উঠেছেন।

ads

বাংলাদেশের বিপক্ষে ইনিংসের প্রথম পাঁচ বলে চার উইকেট কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যখন ব্যাটিং এন্ডে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস তখন ৭-৮ রান ডিফেন্ড করা, ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজে ২৬ উইকেট, বিশ্বকাপের এক আসরে ২৩ উইকেট – এরকম অনেক অস্বাভাবিক বোলিং তিনি ক্যারিয়ার জুড়ে করে গেছেন।

ওয়ানডেতে ৪০০, টেস্টে ৩৫৫ উইকেট নিয়েছে। তারপরও তাঁকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। অন্তত, সমসাময়িকদের সাথে তাঁর নাম উচ্চারিত হতেই পারে। আলোচনা হওয়া দরকার, আর এখানে বলে রাখা দরকার এর অধিকাংশ উইকেট তিনি নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার পাটা উইকেটে।

ওয়ানডের ইতিহাসের সেরা বোলিং ফিগারের মালিকও ভাস। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে সিংহলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন আট উইকেট। ওয়ানডেতে আর কোনো বোলার কখনো আট উইকেটই নিতে পারেননি। জিম্বাবুয়ে সেই ম্যাচে মাত্র ৩৮ রানে অলআউট হয়।

নতুন বলের জাদুকর ছিলেন ভাস। ওয়ানডের ইতিহাসে প্রথম তিন বলে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার তিনি। স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারের বিপক্ষে তাঁর সাফল্য অন্য যে কারো চেয়ে বেশি। ওয়ানডেতে দু’জন মুখোমুখি হয়েছেন ৪৯ বার। এর মধ্যে নয় বার তিনি ভারতের লিটল মাস্টারের উইকেট পেয়েছেন।

শুধু শচীন নয়, ক্রিস গেইল কিংবা হার্শেল গিবসের বিপক্ষে দারুণ সফল তিনি। দু’জনকে মোট সাতবার ‘ডাক’ উপহার দিয়েছেন ভাস। ভাসের বিপক্ষে গিবসের ব্যাটিং গড় ২.৩৩, আর গেইলের ৬.৫!

ইতিহাসে মাত্র দু’জন উপমহাদেশীয় পেসার এক টেস্টে ১৪ উইকেট নেন। তাঁদের একজন হলেন চামিন্দা ভাস। তিনি এই কীর্তি গড়েন ২০০১ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আগে এটা ছিল কেবল ইমরান খানের দখলে, ১৯৮২ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

এবার একটু ‘অত্যাধুনিক’ ক্রিকেট জমানায় ফিরি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ইতিহাসে মাত্র দু’জন বোলার আসরের প্রথম ডেলিভারিতে উইকেট পান। ২০১০ সালে প্রথম এই কীর্তি গড়েন ডেকান চার্জার্সের ভাস, আউট করেন মনোজ তিওয়ারি। এরপর ২০১৩ সালে আবারো একই ঘটনা ঘটান অস্ট্রেলিয়ান পেসার ব্রেট লি।

মজার একটা তথ্য দিয়ে ইতি টানি।

যেদিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সেই বোলিং করেন, সেদিন ছিল চামিন্দা ভাসের স্ত্রীর জন্মদিন। সকালে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কি উপহার নেবে?’ স্ত্রী ওয়াসানা বলেছিলেন, ‘তুমি আজ সাত উইকেট পেয়ে দেখাতে পারবে?’

বাকি ইতিহাসটা তো সবারই জানা, শুধু সাতটা নয় স্ত্রীর দাবির চেয়ে একটা উইকেট বেশিই পেয়েছিলেন ভাস!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link