More

Social Media

Light
Dark

লরিসের তিন কাঠির গল্প বলেনি কেউ

ফুটবল বিশ্বে কারো কারো জন্য জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া খুব সহজ। একটা ম্যাচ কিংবা একটা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্তই যথেষ্ট তারকা বানিয়ে দেওয়ার জন্য। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে একটা ঝলমলে ক্যারিয়ারও যথেষ্ট হয় না। তাঁকে পাদপ্রদীপের আলো ছুঁয়ে দেখেনা কখনো। হুগো লরিস তেমনই একজন।

১৯৮৬ সালে ফ্রান্সের নিস শহরে জন্ম নিয়েছিলেন যখন, তখন কে ভেবেছিল হুগো লরিস একদিন জিতবেন বিশ্বকাপ! ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে অবসর সময়ে ফুটবল খেলে শুরু, তারপর মাত্র ছয় বছর বয়সেই শুরু ফুটবলের ক্যারিয়ার। বিভিন্ন পজিশনে খেলে অবশেষে গোলকিপার পজিশনে থিতু হন তের বছর বয়সে। নিসের যুব একাডেমি থেকেই শুরু তার সেই যাত্রা।

পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু ওজিসি নিস ক্লাবে, তবে সেখানে তেমন সুযোগ পাননি মূল দলে। ক্লাব ক্যারিয়ারের নব সূচনা হয় ২০০৮ সালে, যখন অলিম্পিক লিও তাঁকে দলে নেয়। ফ্রান্সের ক্লাবটির হয়ে ২০১ টি ম্যাচে খেলে ক্লিন শিট রাখেন ৬৬ টি ম্যাচে।

ads

ট্রফিও জেতেন একাধিক। এরপরে টটেনহ্যাম হটস্পারে খেলতে এসে হয়ে যান ভক্তদের প্রিয় লরিস। ৪০০ এর বেশি ম্যাচ খেলা লরিস ক্লিন শিট রেখেছেন ১২৮ টি, দলকে তুলেছেন ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পর্যন্ত।জাতীয় দলেও হুগো লরিস ভালোই সাফল্য পেয়েছেন। অভিষেক ২০০৮ সালে, অভিষেকেই অক্ষুন্ন রেখেছিলেন নিজের গোলবার।

২০১০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে নামেন লরিস। এরপরে ফ্রান্সের হয়ে লম্বা হয়েছে তাঁর ক্যারিয়ার। ২০০৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ১৪৫ টি ম্যাচ, অধিনায়কত্ব করেছেন রেকর্ড ১২১ ম্যাচে। অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ। দূর্দান্ত দলটাকে পেছন থেকে গুছিয়ে রেখেছিলেন, বেঁধে রেখেছেন এক সুঁতোয়।

এত সাফল্যের পরেও লরিস খুব বেশি কদর পাননি যতটা না সমসাময়িক ফ্রান্সের অন্যান্য খেলোয়াড়রা পেয়েছেন। সেটার স্বাভাবিক একটা কারণ তাঁর খেলার পজিশন। গোলকিপাররা ফরোয়ার্ডদের তুলনায় সব সময়েই একটু কম মুল্যায়িত হয়ে থাকেন। এই কারণেই কিনা ইতিহাসে দারুণ সব গোলকিপার আসা সত্ত্বেও ব্যালন ডি অর জিতেছেন মাত্র একজন। লেভ ইয়াসিন ১৯৬৩ সালে জেতার পর জিততে পারেননি আর কেউ।

লরিসের দুর্ভাগ্যের আরেকটা কারণ ফ্রান্সের তারকাখচিত স্কোয়াড। এই যেমন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। এক কিলিয়ান এমবাপ্পেই কেড়ে নিলেন সব আলো। কিন্তু কেউ হয়তো সেভাবে মনেই রাখেনি লরিসের চার চারটা ক্লিন শিট, যার মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচও ছিল। এ দিক থেকে লরিস নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন।

লরিস আসলে পেতে পারতেনই আরেকটু বেশি আলো। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপেই নক আউট পর্যায়েই করেছিলেন ১৫ টি সেভ, যেটা ১৯৬৬ সালের পরে সবচেয়ে বেশি। ক্লাব পর্যায়েও আছে এরকম বিরল এক রেকর্ড- ২০১৬/১৭ মৌসুমে সেভ করেন ১৩৯ টি, যেটা এক মৌসুমে কোনো গোলকিপারের সর্বোচ্চ। এতকিছুর পরেও লরিস থেকে গেছেন আড়ালেই। জমকালো সব আলো তাকে কখনোই নেয়নি নিজেদের কেন্দ্রবিন্দুতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link