More

Social Media

Light
Dark

রাউন্ড রবিন লিগ, অন্যায্য কিন্তু জরুরী!

চলতি বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচ খেলে এখনও অপরাজিত ভারত। এ ছাড়া বাকি নয় দলের কোনো দলই পরাজয়শূন্য থাকতে পারেনি। কোনো না কোনোভাবে হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছে সব দলগুলোকেই। রাউন্ড রবিন লিগে তাই একক আধিপত্য ভারতেরই। তবে এই ধারাবাহিক সাফল্যের মাঝেও চোখ রাঙানি অতীতের ব্যর্থতা।

২০১৯ বিশ্বকাপেও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। তবে ভারতের সেই দুর্দান্ত যাত্রা থেমে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হেরে। কাকতালীয়ভাবে এবারও সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ৪ বছর আগে হারের সেই তিক্ত স্মৃতি তাই আবারো ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের পথে একরকম শঙ্কা হয়েই দাঁড়িয়েছে।

তবে শুধু ভারতের জন্য নয়, শেষ বেশ কয়েকটি আইসিসির টুর্নামেন্টে শীর্ষ দল হিসেবে সেমিতে উঠা দলগুলোরই কপাল পুড়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উঠে আসা দলগুলোর মধ্যে একটি দলও সেবার ফাইনালে উঠতে পারেনি। ২০১৯ বিশ্বকাপেও চিত্রটা একই ছিল। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া- শীর্ষ দুই দল হিসেবে ওঠা এ দুই দলেরই যাত্রা থেমেছিল শেষ চারে এসে। মাঝে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলগুলো বাদ পড়েছিল গ্র্যান্ড ফিনালের আগেই।

ads

সব মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফরম্যাটটা অনেকটা এমনই যে, রাউন্ড রবিন লিগে দারুণ দাপট দেখালেও বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না চ্যাম্পিয়ন দল। সে হিসেবে রাউন্ড রবিন লিগে অপরাজেয় থাকলেও সেমিতে উঠে ভারত সেভাবে উপকৃত হচ্ছে না। কারণ সেমির ম্যাচে পা হড়কালেই টুর্নামেন্টের প্রথম পরাজয়ের সাথে তাঁরা বিদায় নেবে বিশ্বকাপ থেকেও। অথচ এরই মধ্যে চারটি পরাজয়ের স্বাদ নিলেও সেমিফাইনালে ভারতকে হারাতে পারলেই পৌঁছে যাবে ফাইনালের মঞ্চে। একই সাথে, ফাইনাল জিততে পারলে, টুর্নামেন্টে তাদের ম্যাচ জয়ের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৭-এ। সংখ্যা বিবেচনায় যা ভারতকেও ছুঁতে পারছে না।

প্রশ্নটা এখানেই, সেমির এমন ফরম্যাট কি আদৌ টুর্নামেন্টের সেরা দল নির্ধারণে সঠিক মানদণ্ড। টানা সফলতার স্রোতে ভাসতে থাকা একটা দলের একদিন বাজে যেতেই পারে। তবে সেই ‘বাজে’ দিনটা যদি নকআউটের একটি ম্যাচেই ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দাপট দেখানোর চিত্রটা মুহূর্তের মধ্যেই ধূসর হয়ে যাবে।

অথচ, ক্রিকেট টুর্নামেন্টে শেষ চারের লড়াইয়ে কোয়ালিফায়ার ম্যাচের প্রচলন কিন্তু বেশ আগেই শুরু হয়েছে। ২০১১ সালে আইপিএল দিয়ে শুরু হয়েছিল। এরপর অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলোও আইপিএলের আদলে কোয়ালিফায়ার পর্ব শুরু করেছিল। যেখানে রাউন্ড রবিন লিগের পর ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শীর্ষ দুই দলেরই অতিরিক্ত একটি সুযোগ থাকে। যেখানে শীর্ষ দুই দলের একটি দল সরাসরি ফাইনালে নিজেদের নিশ্চিত করতে না পারলেও লিগের তৃতীয় ও চতুর্থ দলের মধ্যকার ম্যাচে বিজয়ী দলের সাথে ম্যাচের মাধ্যমে আবারো ফাইনালে ওঠার সুযোগ পায়। এতে করে গোটা টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলের মধ্যে ফাইনাল হওয়ার সম্ভাবনা আরো দৃঢ় হয়।

কিন্তু আইসিসির এই ফরম্যাটে শীর্ষ চার দলের মধ্যে আদৌতে কোনো ফারাক থাকে না। অর্থাৎ কোনোমতে রাউন্ড রবিন লিগে সেরা চারে থাকলেই সুযোগ থাকে ফাইনালে খেলার। যেখানে মাত্র ২ ম্যাচেই পাল্টে যেতে পারে সব কিছু। আবার এক ম্যাচের বাজে পারফর্ম্যান্সেই দারুণ ছন্দে থাকা দলকে ছিটকে দিতে পারে বিশ্বকাপ থেকেই।

যদিও বিশ্বকাপ তো তার নিজ নিয়মেই চলতে থাকবে। বৈশ্বিক এ আসরকে ঘিরে অপেক্ষা করছে হাসি, কান্না আর উচ্ছ্বাস। এখানেই তো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সার্থকতা। বাইশ গজের এবারের বৈশ্বিক লড়াইয়ে কোন দলের সঙ্গে সঙ্গী হয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তকমা, আর কোন দলেরই বা সঙ্গী হয় তিক্ততা, সেটিই এখন দেখার পালা। এর জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা দিনের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link