More

Social Media

Light
Dark

২০ বছর, ব্রাজিল আর কিছু প্রলাপ

মাটি ধরিয়ে ছোট্ট ডজে গোল হয়েছিল সেই বছর ২০ আগে। তখনকার শ্রেষ্ঠ গোলকিপার অলিভার কান শুধু দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন কিভাবে একটা লোক শুধু একটা হাঁটুর উপর নির্ভর করে একটা গোটা বিশ্বকাপ জিতিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেই ঝর্ণা ঘি আর টাটার নুন দিয়ে খাওয়া ভাতের গন্ধ বহুদিন আগেই শুকিয়ে গেছে। তারপর ৯ নম্বরের আকাল।

একদিকে অদ্ভুত(?) ফরোয়ার্ড লুইস ফ্যাবিয়ানো, অপরদিকে অসাধারণ সম্ভাবনাময় রবিনহো, যার কথা মনে পড়লেই বুকের ভেতরটা কেমন মুচড়ে ওঠে। ফেলিপে মেলোর পাস থেকে হল্যান্ডের এগেন্সটে যে গোলটা ও করেছিল, সেটা তো আর ভোলার নয়। তারপর তো ওই দুই দানব – স্নেইডার আর রবেন একাই ফুটে ফুলকপি করে দিল। ২০১৪ আর ২০০৬ না হয় বাদই রাখলাম। যদিও ২০০৬-তে মন খারাপ আরও বেশী হয়েছিল, কিন্তু আগুনে অঁরি আর শৈল্পিক জিদানের কাছে তখন কিই বা করার। জুনিনহোর ফ্রি কিক বাইরে যাচ্ছে, রোনাল্ডিনহোর ডজ আটকে যাচ্ছে, সে মানে যাতা একেবারে!

২০১৮-তে অবশ্য চান্স ছিল। এবং মার্সেলোর ওন গোলের পরেও অনেকটা সুযোগ ছিল। সেখানে বেলজিয়াম ট্যাক্টিক্যালি হারালো, সৌজন্যে গত চার পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অ্যাটাকিং মিড কেভিন দে ব্রয়েন। কিন্তু ওসব থাক, সে বেলজিয়াম স্যামুয়েল উমতিতির গোলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল, আজকে তো আর ঠিক সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবা যায় না! তাই পুরনো কথা বাদ দিয়ে একটু সামনের দিকে তাকানো যাক। আর সেটা অবশ্যই রিও ডি জেনেইরো, কোপাকাবানা তটকে ঘিরেই।

ads

কোচ তিতে আস্তে আস্তে টিমটাকে রিবিল্ড করেছেন। আগে তাড়িয়ে ছেড়েছেন সব ঝড়তি পড়তিদের। তাই এ বছর আরও অপশন বেড়েছে তিতের হাতে। যদি ধরেই নিই ৪-২-৩-১ এ খেলা হতে চলেছে, সেক্ষেত্রে উপরে জেসুস/ববি ফিরমিনো/রিচার্লিয়েসন। মানে একসাথে তিনটে সেন্টার ফরোয়ার্ড, কে যে শুরু করবে সেটাই একটা দূরূহ ব্যাপার। তবে জেসুস শুরু করবে বলেই মনে হয়, পরে রিচার্লিসন নামতে পারবে। থার্ড চয়েজ ববি। বাঁয়ে লেফট উইংয়ে ভিনি/রড্রিগো, ডানে রাফিনহা/অ্যান্টনি।

এই ত্রিভুজের মাঝে বল পায়ে ছন্দে ছন্দে রং বদলানোর কাজটা চালাবেন একমেবাদ্বিতীয়ম ১০ নম্বর নেইমার। পিওর অ্যাটাকিং মিড যার কাজই হবে নিজে কখনও কখনও চকিতে গোলের মুখ খোলার থেকেও গোল করানো বেশী। এবং সেটা পিএসজিতে বেশ ভালোই করছে নেই। বদলি হিসেবে হয়তো নামতে পারে লুকাস পাকেতা। এ বছর লিঁও থেকে ইপিএলে ওয়েস্ট হ্যামে আসলেও পারফরম্যান্সে কিন্তু ঘাটতি নেই বলা চলে। আসল খেলা কিন্তু এখানেই, কারণ গোলের মুখ খুলবে এখান থেকে।

বাকি তিন পয়েন্ট অ্যাটাকে সঙ্গ দেবে, চেন ক্রিয়েট করে বল পজেশন ধরে রেখে ফরোয়ার্ডে ক্রস করবে কিন্তু ১০ নম্বরের জায়গা ওলোটপালট হলেই চিত্তির! তবে, ব্রাজিলের সার্বিক আক্রমণ বিভাগ নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায় এ বছর। কারণ রিসেন্টলি ফিরমিনো গোলে ফিরেছে, জেসুস তো রীতিমতো নিজের পজিশন পেয়ে ভয়ঙ্কর। তবে এই গোটা লিস্টে একজন নেই, তিনি ফিলিপ কুটিনহো।

এবার ডিফেন্স। এবং তার আগে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন। অর্থাৎ প্রতিরক্ষাবাহিনীর সামনে কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন। যাদের একজনের নাম কাসেমিরো, অপরজন ফ্রেড। এই শেষোক্ত নামটা নিয়েই চিন্তার। এবং কাসেমিরোও সে চিন্তার বাইরে নন। প্রথমত লোকটা অসম্ভব ভাল ব্লকার হলেও বল ডিস্ট্রিবিউটার হিসেবে ততটা পোক্ত নয়। মাদ্রিদে এতকাল দুই সেরা মিড ক্রুস আর মদ্রিচের একটু নিচ থেকে অপারেট করতো বলে বোঝা যায়নি, কিন্তু সাজিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মদ্রিচ বৃহস্পতি হলে কাসেমিরো কচ।

সঙ্গে থাকল ফ্রেড, যার ছোট পাসে ড্রিবল করে বেরোনোর ক্ষমতা থাকলেও অধিকাংশ সময় বল হারানোর প্রবণতা এবং মিসপাস। ডিফেন্সিভ মিড হিসেবে এই দু’জন বিশ্বকাপে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে সেটা সময় বলবে, কিন্তু না ইম্পর্ট্যান্ট হয়েও তো উপায় নেই। পিভটে গেলে এদেরকেই লাগবে, আবার যদি নেইমার আর কাসেমিরোর মধ্যে একটা লম্বা গ্যাপ হয়ে দাঁড়ায় তবে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে, ওই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই বেলজিয়াম আগের বছর এগিয়ে গেছিল, এবারেও তাই হলে ‘আসছে বছর আবার হবে!’

বরঞ্চ এর থেকে দুই সেন্টার ব্যাক নিয়ে ততটা চিন্তা নেই। দুটো সেন্টার হাফের একদিকে বর্তমান পিএসজি ক্যাপ্টেন মারকুইনহোস, একদিকে প্রাক্তন পিএসজি ক্যাপ্টেন আর দেশের ক্যাপ্টেন থিয়াগো সিলভা। যাদের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশই নেই। ৩৭ পেরিয়েও ইয়ং থিয়াগো সিলভা এখনও দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ, যদিও বয়সটা একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু সেটা নিয়েও মনে হয় তত চিন্তার কিছু নেই কারণ হাতে তিনটে ব্যাক আপ আছে। এক, রিয়ালের মিলিতাও, দুই, জুভেন্তাসের ব্রেমের আর তিন, গ্যাব্রিয়েল। তবে গ্যাব্রিয়েল কি কাতারে যাচ্ছে?

সেন্টার হাফে ব্রেমেরের উপস্থিতি অনেকটাই বল-ভরসা যোগানোর মতো। এখন জুভেন্টাসের ফার্স্ট ইলেভেনেও অটোমেটিক চয়েস, নির্ভর করছে তিতের উপর। রাইটব্যাকে দানি আলভেস কি থাকবে? দানিলো মেন চয়েস, আর সেখানেই একটু ভ্রু কোঁচকানো থেকেই যাবে। কারণ দানিলোর ফর্ম ততটা সুবিদিত নয়, এই আর কি।

লেফটব্যাকে শুরু করবে হয়তো জুভেন্তাসের অ্যালেক্স সান্দ্রো, আর ব্যাক আপ থাকবে সদ্য ম্যান ইউনাইটেড থেকে সেভিয়াতে লোনে যাওয়া টেলেস। ব্যক্তিগতভাবে টেলেসকেই দেখতে চাইব কারণ ছেলেটা দুমদাম কাটিয়ে হঠাৎ ওভারল্যাপে চলে যেতে পারে, আর ক্রসটাও মাপে রাখে। মার্সেলো লেভেলের নয় এখনও একেবারেই, তবু এর উপর ভরসা করা যায়। কিন্তু ওই রেনান লোদীকে না খেলালেই খুশি হব।

মোটামুটি এই নিয়ে তিতে ২০২২ এ কাতার যাচ্ছেন। হিসেব নিকেশ তুলে রেখে খেলা হবে। আর সেটা এমন একটা জায়গা যেখানে কষে রাখা উত্তর একেবারেই মিলবে না। অনেক কিছুই পাল্টে যাবে। তবু আগে থেকে জাগিয়ে রাখা আশা, এই আর কি। সময় বলবে ঠিকঠাক প্ল্যানমাফিক সব কিছু হবে কি না, তবু মহিনের ঘোড়াগুলির মতো ‘আবার বছর কুড়ি পর’ হলে মন্দ কী!

সাম্বা হবে। হতেই হবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link